রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র
১.
ইয়াবা। ২০০৬-০৭ সাল থেকে যেটা 'ফ্যাশনেবল ড্রাগ' হিসেবে পরিচিত উত্তরাধুনিক যুবসমাজের কাছে, গুলশান-বনানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে, শোবিজ জগতে, প্রাইভেট ভার্সিটি এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এর অবাধ প্রাপ্যতা। অনেকক্ষেত্রে কাঁচা টাকা আয় করতে গিয়ে মধ্যবিত্ত ঘরের ছাত্ররাও জড়িয়ে পড়ছে মাদক বিক্রির পেশায়। যেন এটা খুব লোভনীয় কোনো মজার পেশা! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় (২০০৭) র্যাব অভিযান চালিয়ে অভিজাত (!) পরিবারের বিকৃত যৌনরুচির ছয় যুবককে আটক করে এই ভয়াবহ মাদকদ্রব্য সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই র্যাব-পুলিশ কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই অভিযানগুলো ব্যর্থ প্রমাণিত হয়।
আর বেশিরভাগ মাদকব্যবসায়ীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা রাজনৈতিক জগতের কোনো কুত্তার সুসম্পর্ক থাকে... যার ফলে, অপরাধীরা সহজেই জামিন পেয়ে যায় কিংবা উচ্চস্তরের ভদ্রবেশি শয়তানদেরকে আইনের প্যাঁচে শায়েস্তা করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
২০০৭ এর ইয়াবা বিরোধী অভিযানের সময় মিডিয়ার বেশকিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী ইয়াবা ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট এ ধরণের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হয়েছিলো। পরবর্তীতে সম্ভবত মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তারা সেই যাত্রা বেঁচে যান। এ নিয়ে প্রথম আলো বেশ তৎপর (!) ছিলো। ইয়াবার নিউজ কাভার করে প্রথম আলো যেমন আলোচিত হয়েছিলো, ঠিক তেমনি বিজ্ঞাপনের মতো ফলাও করে প্রচার করাতে নিন্দিতও হয়েছিলো।
মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নাকি মাদক নেন না... আনন্দ ক্রোড়পত্রে এ নিয়ে কিছু মিডিয়া সেলিব্রিটিদের সাক্ষাৎকার ছাপাও হয়েছিলো। সেখানে মডেল নোবেল বলেছিলো, কোনো স্থানে দশ জন লোক মাদক নিলে যদি সেখানে একজন মিডিয়ার পরিচিত মুখ থাকে, তাহলে তাদের চেয়ে সেই মিডিয়া পার্সোনালিটিই বেশি সমালোচিত হবে...
আসলে সেটাই তো হবার কথা! একজন শিল্পী কিংবা পরিচালক কিংবা ফ্যাশন ডিজাইনার, মডেল... যার কাজ সমাজের প্রতিনিধিত্ব করা... সে নিজেই যদি মাদক সেবন করে + ব্যবসা করে তাহলে আমজনতার দোষ কোথায়? এটা কি মডেল নোবেল জানে? নাকি নিজেদের জায়গা+ভাত বাঁচানোর জন্যই সত্য একটা জিনিসকে লুকানোর ব্যর্থ অপচেষ্টা...
২.
প্রথম আলোর ব্যর্থতা
মাদকবিরোধী কনসার্ট এবং শোভাযাত্রা, সেমিনার এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথম আলো বেশ জোরেশোরেই মাদকবিরোধী (!) প্রচারণা চালিয়ে আসছে। যেহেতু কোনো পত্রিকা এ ধরণের উদ্যোগ নেয় নি সেহেতু এটা নিঃসন্দেহে ভালো একটা কাজ। শোভাযাত্রা, সেমিনার মেনে নেয়া যায় তবে মাদকবিরোধী কার্যক্রমের সাথে কনসার্ট কি সঙ্গতিপূর্ণ? আমার জানামতে, কনসার্টে ড্রাগস নেয়া হয়। এবং সেটা প্রচুর পরিমাণে।
নিজেই কনসার্টে গাঁজা খেতে দেখেছি অনেককেই... তাই সেখানে যেতে রুচিতে বেঁধেছে। কনসার্ট একটা উন্মাদনা। অ্যালকোহল যেমন রক্তে ঝড় তৈরী করে ঠিক তেমনি কনসার্টে ড্রাগস নিলে স্বর্গীয় অনুভূতি হয় ড্রাগ অ্যাডিক্টদের। আর ব্যান্ডদলের কোনো সদস্য মাদক নেয় না Ñ এটা নিকৃষ্ট মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়। পপসম্রাট আজম খানও নেশা করতেন।
ছানাপোনারা নেশা করবে এটাই তো স্বাভাবিক (!) তাই না? সবমিলিয়ে কনসার্ট প্রোগ্রামটা প্রথম আলোর ব্যবসা-প্রবৃত্তিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়। যারা মুখে বলে মাদককে না বলো, তারা নিজেরা যে শুটিং স্পটে কিংবা হোটেলে রেড ওয়াইন বা বাংলা মদের বোতল খুলে বাজে কাজ করে না... এর গ্যারান্টি কোথায়? প্রথম আলো কি শতভাগ গ্যারান্টি দিবে?
না...
৩.
মাদক এবং মিডিয়া সম্পৃক্ততা
যেহেতু সেলিব্রিটিদের মধ্যে ড্রাগস নেয়াটা ডাল ভাতের মতো, কারণ তাদের সেই ভুল ধারণা, তারা সাধারণ দশজনের মতো না... অসাধারণ! সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ভুল শিক্ষা নিবে মিডিয়ার রঙিন জগৎ থেকে, থিয়েটার থেকে। মদ ও নারীসঙ্গ যদি একজন পরিচালকের পার্টটাইম বিনোদন হয়ে থাকে তাহলে এই মিডিয়া থেকে মানুষ কি শিখবে? মানুষকে বোঝাতে হবে একজন মিডিয়া সেলিব্রিটি ঈশ্বর না... ফেরেশতা না... নোংরামি তাদের মধ্যেও থাকবে। তবে শিল্পীর কি উচিত ড্রাগস নিয়ে নিজের জীবনকে খারাপভাবে উপস্থাপন করা? একজন পরিচালকের কি উচিত নব্য আগত অভিনেত্রীকে শারীরিক সম্পর্কে স্থাপনে বাধ্য করা? এটা চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ এবং নোংরা। তার অর্থ আধুনিকতার নাম দিয়ে মধ্যযুগীয় চর্চা চলছেই।
ভদ্রভাবে। হোটেল কিংবা ফ্ল্যাটে। শুটিং শেষে। এইসব দুর্ঘটনা থেকে মা চাইবেন না ছেলে কিংবা মেয়ে মিডিয়াতে কাজ করুক। অল্প শ্রমে টাকা পাবার স্বপ্ন নিয়ে কিংবা নিজেকে নায়ক বা নায়িকা বানাবার ইচ্ছায় ছেলে মেয়েরা মিডিয়াতে ঢুকতে চায়... পড়াশোনা বাদ দিয়ে!
মিডিয়া নিজে কতটা প্রস্তুত? বাংলাদেশের ৩৯ বছরের অপরিণত এই মিডিয়া? হা: হা:...
৪.
প্রয়োজন গণসচেতনতা
মাদকবিরোধীতার নাম দিয়ে প্রতারণা আর না... সরকারের উল্টা পাল্টা জঘন্য ছেলেমানুষি সিদ্ধান্ত আর না... আমরা চাই মাদক থেকে বিরত থাকতে, মাদকের প্রডাকশন বন্ধ করতে... মাদকব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট হায়েনাদের... বিকৃত রূচির মিডিয়া-ব্যবসায়ীদের যারা মিডিয়ার নামে নোংরামি শেখায়, মাদক নেয়া শেখায় অথচ শোবিজের তারকা হয়ে বসে থাকে তাদের পতন... ধ্বংস হোক ভদ্রসমাজের কুলাঙ্গাররা... মাদকব্যবসায়ী নামধারী কুত্তারা... জয়নাল-নিকিতারা...
যারা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে... আমাদেরকে তিলে তিলে নষ্ট করছে...
ধিক্কার বাংলাদেশের নপুংসক সেলিব্রেটিদের... সরকারকে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।