আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের রিপোর্ট মুসলিমদের সিটিজেনশিপের আবেদন বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়



নিউ ইর্য়ক (বিএনিউজ) : জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ইমিগ্রান্টদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া সম্পর্কিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি কর্মসূচির আওতায় কিছুসংখ্যক মুসলিমকে কালো তালিকাভূক্ত করে তাদের আমেরিকান সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে গতকাল বুধবার অভিযোগ করেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া। লস এঞ্জেলেস থেকে এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, ইতিপূর্বে অজ্ঞাত একটি কর্মসূচিতে ফেডারেল ইমিগ্রেশন অফিসারদের উপর নির্দেশনা ছিল জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় সিটিজেনশিপের আবেদন অগ্রাহ্য করার। যেমন, অগ্রাহ্য করার কারণ হিসেবে তারা দেখাতে পারেন যে আবেদনে দুর্বলতা ছিল অথবা ইমিগ্রান্টের নিকট থেকে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস ইমিগ্রান্টদের কালো তালিকাভুক্ত করতে বহু ধরনের কারণ ব্যবহার করতে পারে এবং সন্ত্রাসী তৎপরতা চলছে এমন এলাকা দিয়ে ভ্রমণ করাও একটি কারণ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে বলে এপি’র রিপোর্টে বলা হয়। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, এসব কারণের মধ্যে অযৌক্তিকভাবে মুসলিম ইমিগ্রান্টদের টার্গেট করা হয়েছে, যাদেরকে সিটিজেনশিপের জন্য আবেদন করে সাড়া পেতে প্রায় ক্ষেত্রেই বহু বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে এবং কিছু কিছু আবেদন বাতিলও হয়ে যাচ্ছে।

এসিএলইউ কিছু সংখ্যক মুসলিম ইমিগ্রান্টের ঘটনা তদন্তের পর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কর্মসূচির সম্পর্কে জানতে পারে, যাদের কাছে তাদের আবেদন দীর্ঘদিন যাবত বিবেচনাধীন অবস্থায় পড়ে আছে। এসিএলইউ এর ষ্টাফ এটর্নী ও রিপোর্ট প্রণেতা জেনি প্যাসকুয়ারেলা বলেছেন, “ন্যাচারাইজেশন ও ইমিগ্রেশন বেনিফিট পাওয়ার জন্য অনিবার্যভাবে এই গোপন কারণ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা কখনো জনগণের কাছে প্রকাশ করা হয়নি এবং কংগ্রেসও তা অনুমোদন করেনি। আমার মনে হয়, এটি শুধুমাত্র রাজনীতির ব্যাপার। তারা এমন কাউকে সিটিজেনশিপ দিতে চায় না, যে পরবর্তী বোষ্টন বোমাবাজে পরিণত হবে। ” এপি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারেনি যে ২০০৮ সালে চালু হওয়া এই কর্মসূচি, যেটি ইতিপূর্বে “কন্ট্রোলড অ্যাপ্লিকেশন রিভিউ এন্ড রেজ্যুলিউশন প্রোগ্রাম’ নামে পরিচিত ছিল, তার আওতায় মোট কতো সংখ্যক ইমিগ্রান্টের সিটিজেনশিপের আবেদন তদন্ত করা হয়েছে।

সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস এর মুখপাত্র ক্রিষ্টোফার বেন্টলি এপি’কে বলেছেন, এজেন্সি নিয়মিতভাবে ইমিগ্রান্টদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে থাকে এবং ইমিগ্রেশন সিষ্টেমের নিরাপত্তা ও অখন্ডতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এই দায়িত্বগুলো কার্যকর করার ক্ষেত্রে আমরা অত্যান্ত সজাগ। আবেদন পর্যালোচনায় গতি আনার স্বার্থকে বড় করে দেখতে গিয়ে আমরা জাতীয় নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তাকে জলাঞ্জলি দিতে পারি না। ” এ কর্মসূচির অধীনে একজন ইমিগ্রেশন অফিসার নিশ্চিত হতে চান যে, কোন আবেদনকারী জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে কিনা এবং উপযুক্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে আবেদনকারী সম্পর্কে তাদের কাছে কোন তথ্য আছে কিনা তা জানতে চান। অফিসাররা এরপর অতিরিক্ত গবেষণা চালান এবং বহু আবেদন দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলিয়ে রাখেন।

অধিকাংশ আবেদন শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়, কারণ ওই কর্মসূচির আওতায় অধিকতর পর্যালোচনা ছাড়া কোন আবেদন অনুমোদন করার সুযোগ রাখা হয়নি। ৫৩ বছর বয়স্ক ফিলিস্তিনী ইঞ্জিনিয়ার আহমাদ মুহান্না এপি’কে বলেছেন যে, তিনি ও তার স্ত্রী ৬ বছর আগে আমেরিকান সিটিজেন হওয়ার উপযুক্ততা অর্জনের সাথে সাথেই আবেদন করে ৪ বছর অপেক্ষার পর সাড়া পেয়েছেন এবং তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে এবং ইমিগ্রেশন অফিসাররা ইতিপূর্বে লক্ষ্য করেনি যে, তাদের আবেদন ফরমে একটি মুসলিম চ্যারিটির সাথে তাদের সম্পর্ক রয়েছে, যে সংগঠনে তারা অর্থ দান করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র পরে যে সংগঠনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। ডালাসের উপকণ্ঠে বসবাসকারী মুহানা বলেন যে, তারা আবেদন করার পর প্রতীক্ষা করতে করতে গাজায় তাদের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি। তাদের আশংকা ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সফরে গেলে তাদের গ্রীন কার্ডের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া তারা যুক্তরাষ্ট্রে ভোটারও হতে পারছেন না সিটিজেন না হতে পারায়।

তিনি ক্ষোভের সাথে এপি’কে বলেন, “প্রত্যেক মুসলিম অপরাধী এবং প্রতিটি মুসলিমই সন্ত্রাসী, এমন ধারণা করা সঙ্গত নয়। ” তিনি এমনকি একজন আইনজীবীর উপস্থিতিতে এফবিআই কাছে তার বক্তব্য তুলে ধরতে সম্মত বলে জানান। তিনি আরো বলেন, তিনি একই বাড়িতে বাস করছেন এবং গত পনের বছর যাবত একটি টেলিফোন নম্বর ব্যবহার করছেন। অতএব তাকে সনাক্ত করা খুব সহজ। তার মতে,“আমি আমেরিকাকেই আমার দেশ হিসেবে গ্রহণ করেছি এবং আমি এ দেশের সিটিজেন হতে চাই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.