দিন বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের দায়িত্ব গ্রহণের দেড় বছর অতিক্রান্ত হলো। মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল নতুন এক বাংলাদেশের। কিন্তু সে স্বপ্ন আরও কতদূর! যতই দিন যাচ্ছে ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। তীব্র যানজটে পড়ে হা-হুতাশ করা ছাড়া যেন আমাদের আর কোন দিশা নেই। যতই দিন যাচ্ছে অবস্থার আরো অবনতি হচ্ছে।
সেই দিন যোগাযোগমন্ত্রীর সংসদে দেয়া বক্তব্যে তেমন কোন আশার আলো দেখি নি। মন্ত্রী আমাদের পাতাল রেল,এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদির স্বপ্ন দেখান। এই একইধরনের স্বপ্ন কালে কালে মন্ত্রীরা আমাদের দেখিয়ে আসছেন। বিএনপি জোট সরকারের মন্ত্রী তো ম্যাগনেটিক ট্রেনের আকাশ কুসুম স্বপ্নই দেখিয়ে ছেড়েছিলেন। সাধারণ নাগরিক হিসেবে একটা ব্যাপার নিজেকে প্রচন্ড ভাবায়।
আজকাল মোটা মোটা অঙ্কের প্রকল্প না নিলেই যেন মন্ত্রনালয়গুলোর চলছেই না। মন্ত্রীরা দৌড়-ঝাপ দিচ্ছেন জাইকা,এডিবি,বিশ্ব ব্যা;ক ইত্যাদি দাতা সংস্থাগুলোতে। এর পিছনে কি অন্য কোন কারন আছে!আমি খুবিই অবাক হই। আমাদের যেটুকু অবকাঠামো আছে তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দিকে কারও এতটুকু দৃষ্টি নেই। পথচারীদের হাঁটার জন্য যেটুকু ফুটপাত আছে তার অধিকাংশই হকার আর ডেভেলপার কোম্পানীগুলোর দখলে।
সড়কগুলোর ট্রাফিক সিগন্যালিং আধুনিক করা হয় না। ব্যাস্ত সড়কগুলোর দুইপাশেই সারি সারি গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। যার জন্য অনেকসময় হাঁটা দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য পথচারীরা বাধ্য হচ্ছেন যানবাহনে উঠতে অথবা পার্ক করা গাড়ি আর চলমান গাড়ির মাঝখান দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঢাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সফল হয়েছিলেন। আমরা হাঁটার অধিকার ফিরে পেয়েছিলাম।
অবৈধ ফুটপাত দখলদারদের উচ্ছেদের প্রশ্ন উঠলেই অনেক সুশীল তাদের জন্য মায়া কান্না জুড়ে দিবেন। অথচ লক্ষ্য করুন মাস খানেক আগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নিউ মার্কেট এলাকায় অবৈধভাবে ফুটপাত বরাদ্দ দিয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে কিছু হকার নেতা আর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ১০-১২ লাখ টাকার লেনদেনে হকারদের ফুটপাত বরাদ্দ দিয়ে বৈধতা দেয়া হয়েছে। আমার প্রশ্ন জাগে সিটি কর্পোরেশন কি কোন লভ্যাংশভোগী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান? জনস্বার্থকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ব্যবসা করার অধিকার করার ঢাকার মেয়রকে কে দিয়েছে?যানজট নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলো আর সিটি কর্পোরেশনের মাঝে সমন্বয় এনে যদি ফূটপাতগুলো দখলমুক্ত করা যায়,সড়কগুলো পার্কিং মুক্ত রাখা যায়,ম্যানুয়েল সিগন্যালিং এর পরিবর্তে বিদ্যমান সিগন্যাল সিস্টেমকে আধুনিকীকরণ করা যায় তবে যানজট অনেকটূকুই কমে যাবে। কমবে মানুষের ভোগান্তি।
এইটুকু করতে নিশ্চয়ই দাতাগোষ্ঠী থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিতে হবে না। আমাদের যা আছে তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে আমাদের নাগরিক অধিকার সমুন্বত রাখুন। পাতাল রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের স্বপ্ন দেখানোর আগে এইটুকু নিশ্চিত করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।