ক্ষমতা কমলো ১৯ প্রতিমন্ত্রীর
দীন ইসলাম:
প্রায় তিন মাস পর আবারও ক্ষমতা কমলো ১৯ প্রতিমন্ত্রীর। মন্ত্রী বিদেশ বা অন্য কোন কারণে অনুপস্থিত থাকলে মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য বিষয় বা নথিগুলো এখন আর প্রতিমন্ত্রী নিষ্পত্তি করতে পারবেন না।
মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওইসব ফাইল পাঠাতে হবে। শুধু যেসব মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী নিয়োজিত রয়েছেন, ওইসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বিষয় বা নথিগুলোর সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এমন নিয়ম করা হয়েছে । গত ২৬শে জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিমন্ত্রীদের ক্ষমতা কমানো সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি হয়েছে।
এ পরিপত্রটি ৫ই মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রের সংশোধনী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ সংশোধিত পরিপত্র জারির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনে গতিশীলতা আনতেই আগের পরিপত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। ওদিকে প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে মন্ত্রণালয়গুলোতে অহেতুক ফাইল জট বাড়বে। ফাইলের সিদ্ধান্ত দিতেও দেরি হবে। এতে প্রশাসনে গতিশীলতার বদলে জট লাগতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলী খান মানবজমিনকে বলেন, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দিলে ফাইল নিষ্পত্তিতে সময় অনেক কম লাগবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও তাড়াতাড়ি করা যাবে। তবে মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য ফাইল কোথায় যাবে- তা প্রধানমন্ত্রীই নির্ধারণ করবেন। এ বিষয়ে বলার কিছু নেই। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এক সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন এমন কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের নথি নিয়ে নানা ঘটনা ঘটছে।
অনেক সময় দেখা যাচ্ছে কিছু স্পর্শকাতর ফাইল মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য। তবে মন্ত্রী বিদেশে আছেন তাই প্রতিমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দিয়ে ফাইলটি নিচে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে মন্ত্রীর বিদেশ যাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন প্রতিমন্ত্রীরা। বিদেশ থেকে ফেরার আগেই নিজের প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে পরিচিত ফাইলটি পার করছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলি ফাইলের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বেশি ঘটছে।
এর ফলে বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছে সরকার। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গোচরীভূত হওয়ার পরই তা দূর করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়। ওদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্র সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ১৩ই জুলাই মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর কাজে গতি আনতে মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য ফাইলগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। এর ভিত্তিতেই আগের পরিপত্রের সংশোধনী এনেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ২৬শে জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গত ৫ই মের পরিপত্রের নথি ব্যবস্থাপনার খ অংশ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ওই অংশ পরিবর্তন করে জানানো যাচ্ছে যে, যেসব মন্ত্রণালয়/বিভাগে মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী নিয়োজিত রয়েছেন ওইসব মন্ত্রণালয়/বিভাগের ক্ষেত্রে মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য বিষয়/নথিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ স্বাক্ষরিত সংশোধিত পরিপত্রটি যথাযথ অনুসরণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রেসিডেন্টের সচিব, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১, মন্ত্রী/ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ৫ই মে জারি করা প্রথম প্রজ্ঞাপনে সরকারের ১৯ প্রতিমন্ত্রীর তিন ধরনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়। ওই পরিপত্রে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজে অধিকতর গতিশীলতা আনয়ন ও সুচারুভাবে কাজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এবং সরকারের পরিকল্পনা, নীতি ও সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এতে বলা হয়, যে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগে মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী নিয়োজিত রয়েছেন ওইসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ক্ষেত্রে মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য বিষয় বা নথিগুলো প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে। এছাড়া মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে মন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য বিষয় বা নথিগুলো প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ে নিষ্পত্তি করতে হবে। নতুন সংশোধিত পরিপত্রে এ বিষয়টিই সংশোধনী আনা হয়েছে। আগের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, একনেক বা এ জাতীয় সভাগুলোতে মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করবেন। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের আমলে দু’দফায় ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে।
তবে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীদের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় কাজ-কর্মে গতিহীনতা তৈরি হয়। এছাড়া দু-একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাছে কোন ফাইল পাঠাতেন না। এ নিয়েও নানা অসন্তোষ ছিল। ওইসব সমস্যা দূর করতেই প্রথম পরিপত্র জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মানব জমিন থেকে @@ ৩০ জুলাই ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।