জঙ্গলের মধ্যে জাদুঘর
.....................................
জঙ্গল দেখলেই মনে হয়, ঐ জঙ্গলের একদম ভেতরে একটা জাদুঘর আছে। অসংখ্য গাছে গাছে ভরা অবিরাম পাতায় পাতায় হাওয়া-বাতাসের অর্কেস্ট্রা আর অগণন পাখিতে পাখিতে নরম পালকে পালকে ডিসপ্লে করা গ্রিনমিউজিয়াম... এই পৃথিবীতে যতগুলো জঙ্গল আছে, প্রায় প্রত্যেকটা জঙ্গলের মধ্যেই একটা করে জাদুঘর আছে
জাদুঘরে, গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে মরচেধরা অনেকদিন আগের একটা বাইসাইকেল। সেই সাইকেলটা কার গো, কার? যথা অপরিণামদর্শি কৌতূহলে, জঙ্গলে প্রবেশ করিয়া যে বালক আর কোনওদিনও ফিরে আসিল না, তার? জংলিপনায় স্নাতকোত্তর আমি, জঙ্গল দেখলেই বুঝতে পারিÑ এই জঙ্গলের ভেতরে একটা জাদুঘর আছে। বাইসাইকেল আছে। বালক-পুরুষ ফিরতে না-পারার জনশ্রুতি আছে।
জনশ্রুতির অধিক রহস্য, সেটাই ধরিত্রী, অবলীলা চৌধুরীর লাবণ্য; লাবণ্যের ভেতরে মিশিমিশি আফ্রিকা, ঘনান্ধকার আমাজান... সাহস করে একবার ঢুকে পড়লেই জাদুঘর পর্যন্ত পৌঁছে যাবার প্রেরণা পাওয়া যাবে। কান্ত সাইকেল গাছে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে এবং সম্ভবত আমার আর কোনওদিনও ফিরে আসা হবে না... হবে না
এ অঞ্চলে এটাই সত্য, জঙ্গলে হারানো পুরুষ শেষপর্যন্ত কিংবদন্তি হয়ে যায়
..........................................
আশ্চর্যসমগ্র ষোলো লাইন
.....................................
এখনো ঝুমঝুমপুর নামে মাত্র, আদতে স্তব্ধ, নিম্নবিত্ত রেলস্টেশন
ক্রস করে যায় বনেদি আন্তঃনগর, তার দাঁড়াবার কথা নয়
ঝড়, এখনো পাহাড়ি পথে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রশ্ন, যুগপৎ হাঁটুর মতাÑ
এখনো বস্তির শিশুর বাবা আড়াই বিয়ের পর এলাকা ছাড়া...
এখনো কবিতা মানে ভাব-ছন্দ-মাত্রা, মনোময়ী প্রতœতাত্ত্বিক
নবগঙ্গা নদীর দুধারে রোদ পোহাচ্ছে বেলে শীতকাল
মাঠতক পর্যাপ্ত হলুদ প্রফুল্ল, শহরে প্রেসমেশিনের মায়া
ঘুরে ফিরে আসে নবদিগন্তের অজ্ঞাত-ব্যঞ্জন, শ্রীমতী কুয়াশা
পিপাসায় কমলালেবুর কথাই ফার্স্ট চান্সে ঠোঁটের বিকল্প
এখনো রাস্তার কোনো পাগলির পারিবারিক নাম জানা হলো না
এবং টমেটো বলতে দৌলতদিয়া ঘাটের একপলক টসটসে কিশোরী
এখনো শীতের পরে বসন্ত আসে, নদী ওড়ে, প্রেম সম্পূর্ণ অবৈতনিক
এখনো একটি মেয়ে, আমাকেও না জনিয়ে আত্মহত্যায় চূড়ান্ত প্রস্তুত
এখনো ক-এর পরে খ. গ. ঘ. ঙ... নীলুর বড়পা’র বিয়ে হচ্ছে না
এখনো বিস্ময় বেঁচে আছে, তবে তার স্টারভ্যালু কমেছে একটু
এখনো রাস্তার শেষ বাড়ি একটা গল্প, বাথরুম থেকে ঝর্ণার গান ভেসে আসে...
..............................................
অন্তর্লক্ষের কবিতা
......................................
শীতের রচনা আমি কী লিখব?
চাকরি করি ভাবস¤প্রচার কেন্দ্রে
ভাব কত প্রকার ও কি কি? হয়তো শীতকাল
আমার ধরাছোঁয়ার মধ্যে নয়Ñ
আমার মধ্যে খানিকটা গ্রীষ্মাতিগ্রীষ্ম, দগ্ধঋতুকা
আর বীজপত্রে নিহিত বৃরে ডালপালা আর ছায়ার মতো
অনাগত এক বসন্ত-সংকেত যে আছে, তা প্রমাণিত
এবং তা প্রভাবিত... মৌসুম-তাড়িত!
তবু শীতের ওয়াশ আমি কী ছোপাব?
আমার চেয়ে পাঁচশো বর্গ বেশি জানে কুয়াশাÑ
কুয়াশাই আমার চেয়ে মোটের উপর বেশি জানে
শীত কেন আসে? শীতের ভাবার্থ কি? শীত কাকে বলে?
শীত সম্পর্কে কুয়াশাদের এত বেশি আগ্রহ, এত বেশি কৌতূহল
বরং কুয়াশাই লিখুক শীত-শীত-শীতায়ন;
আমি বড়জোর কুয়াশার দিকে খেয়াল রাখব,
আরেকটু ঘনত্ব দেখলেই আমি হয়তো
সদানন্দে ঢুকে পড়ব কুয়াশাভবনে;
একই সঙ্গে জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত এই শীতে
হয়তো কিছুটা কুয়াশা হয়েই থাকব
ভোরে, দূরের সন্ধ্যায়, আঁধারস্য রাত্রিপথেÑ
এই লে লেখালেখি করি, থাকি ভাবনাজগতে
.............................................
রাক্ষসের মুখ, ডাইনির নিঃশ্বাস
................................
আয়নার মধ্যে তাকিয়ে নিজেকে রাস মনে হল!
সঙ্গে সঙ্গে রাসের মানে, সংপ্তি বাঙলা অভিধানে পাওয়া গেলÑ নরখাদক জাতি, নিশাচর, কর্বূর, প্রাচীন অনার্যজাতি ইত্যাদি... যদিও, রাক্ষসের একটা অপ্রত্যাশিত ভয়ঙ্কর মুখচ্ছবি আঁকা আছে মনুষ্যকুলের মনে। এটা জানি, কারণ এদ্দিন আমিও মানুষের রোল প্লে করে এসেছি। এদ্দিন আমিও মানুষ ছিলাম।
কিন্তু আজ! আজই, নাকি কয়েকদিন ধরেই, যখনই আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দাঁড়াই, বিলিভ ইট, আমার চোখেই ধরা পড়ে আমি একটা রাক্ষস! আমার সারামুখে ডাইনিদের মিহি-নিঃশ্বাসের আঁচে পৃথিবী দেখার মায়াময় ম্যাপ আঁকা হয়ে চলেছে, মুখ বলি-বিভাজিত হয়ে পড়েছে...
বিশেষ দ্রষ্টব্য ১. ডাইনিদের একেকটি নিঃশ্বাস কমপক্ষে বারোমাস মাথার মধ্যে কিংবা দেওয়ালে ঝুলে থাকে; তারপর আরেকটি নিঃশ্বাসে ছাপা হয় আবার একটি বাৎসরিক ক্যালেন্ডার
বিশেষ দ্রষ্টব্য ২. ডাইনিদের নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে অনেক তরুণ যোদ্ধা অকালেই মরে ভূত হয়ে যায়।
যারা ভূতে বিশ্বাস করে না, আমার মতোন, একদিন আয়নার মধ্যে তাকিয়ে দ্যাখে সে নরখাদক, সুযোগ পেয়ে নিজেকে খেয়েছে; সে নিশাচর, আঁখিতে আঁধি চারণ করেছে; সে প্রাচীন অনার্য, কারণ তার অনুচ্চবর্গের দেহ;
দেখি, আয়নার মধ্যে আনস্পেকটেড একটি অচেনা মুখ, রাক্ষসের
................................................
কুয়াশায় রচিত একটি রাতের কবিতা
......................................
স্বেচ্চায় হারিয়ে গেলে, জঙ্গল ডাকনাম ধরে ডাকে!
আর তখনই ঘোর বাল্যকাল, অভিমান-ভরা কবিতা হয়ে ওঠে!
কিন্তু দার্ঢ্য পাঠকের মন, তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিতে চায়Ñ
রিপিটেশন... সব রিপিটেশন
শুনেছি, হারানো বালকেরা জঙ্গলে গিয়ে গাছ হয়ে যায়।
সেই গাছ একদিন কাঠ হয়ে ফিরে আসে যে অমনযোগী
ছাত্রের টেবিলে সে কবিজন্ম পায়!
এতদসঙ্গেÑ খিদে লাগলে খুঁটে খাওয়া শস্যদানা কবুতরের ঠোঁটে ছড়ায়
বাকবাকুম ছন্দে উৎসাহ;
মেলে না, তবু কী মেলে, হারিয়ে গেলে, ফুটে ওঠে এক বুদ্বুদপ্রশ্নÑ
কী চাহ কী চাহ?
চাই আমি যাÑ আমার কবিতা কোনো প্রেসমেশিনে ছাপা না হলেও
হেমন্তপীড়িত গাছে গাছে, প্রতিটি পাতায় ছাপা হোক অ্যালিগরি
ঋতুর কুয়াশা মেখে অফসেট জোসনায়!
শীতে সেই কবিতাপাতারা ঝরতে ঝরতে দূরে, উড়ে যাক;
বিষণœতাস্পৃষ্ট রাতে
বিছানায় শুয়ে শুয়ে, ঘুমÑঅনাগত কালে
অস্ফূট-বেদনাসহ যেমন একটি গোপন শ্বাস গোপনেই
বাতাসে মিলিয়ে যায়
...................................
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
প্রকাশক: দিব্যপ্রকাশ/ প্রাপ্তিস্থান: প্রথমা/ আজিজ মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।