সবার ওপর মানুষ সত্য... তার ওপর ....
খুব ছোট্টবেলায় একবার হঠাৎ আমার সাইকেল কেনার ইচ্ছা হলো। আমি গিয়ে আমার বাবাকে বললাম, আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিতে হবে। আমি তখন কেবলমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছি। মোটামুটি গ্রামের স্কুল। অবশ্য খুব বেশি দূর না আমার বাসা থেকে।
আমার বাবা আমাকে বলে, সাইকেল দিয়ে কি করবো? আমি বললাম, স্কুলে যাব। আমার বাবা বলে, স্কুল তো এখান থেকে দেখা যায়। আমি তারপরও নাছোড় বান্দা, সাইকেল আমার চাই ই চাই। আমার বাবা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি সাইকেল চালাতে পারি কিনা? আমি বললাম, সাইকেল না থাকলে সাইকেল চালানো শিখবো কিভাবে?
অতপরঃ বাবা আমাকে একটা ছোট সাইকেল কিনে দিলো। ছোট সাইকেল, কিন্তু আমার সাইজ হিসেবে ঠিকই আছে।
পেছনের চাকার সাথে দুইটা এক্সট্রা ছোট ছোট চাকা, সেটার জন্য সাইকেল মাটিতে পড়ে না, দাড়িয়ে থাকে। এই সাইকেল নিয়ে আমি প্রতিদিন বিকেল বেলা বাসার পাশেই একটা পাকা মাঠে যাই। সাইকেল চালাই।
ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠার পর আমার স্কুল চেন্জ হয়ে গেল। এখনকার স্কুল আগেরটা থেকে দূরে।
আমি ছোট সাইকেল নিয়ে স্কুলে গেলাম। স্কুলে গিয়ে দেখি আর সবার সাইকেল বড়, খালি আমারটা ছোট আর অনেক পুরানো। ছোট সাইকেল চালাতে আমার আর ইচ্ছা করে না। ইচ্ছা করে অন্য সবার মত বড় সাইকেল চালাই। কিন্তু সেই ছোট সাইকেল থাকার কারনে আমাকে তো আর নতুন করে সাইকেল কিনে দেওয়া হবে না।
এখন কি করা যায়। আমার একটা নতুন বন্ধু হয়েছিল নতুন স্কুলে, তার সাথে আমি যাওয়া আসা করতাম। সে আমাকে বললো, তোর সাইকেল বেইচা দে। তারপর বাসায় গিয়া বলবি - সাইকেল হারাইয়া গেছে। বুদ্ধি আমার মনে ধরলো, বললাম, সাইকেল বেইচা দিমু।
আমাদের বাসার পাশে একটা সাইকেল এর দোকান ছিল। আমি সেই দোকানে সাইকেল ঠিক করতাম মাঝে মাঝে। সেই দোকানে আমি বললাম, সাইকেল বেচতে চাই, কিনবো কিনা? দোকানদার আমাকে বলে, তোমার সাইকেল কে কিনবো, কটকটি ওয়ালা আসলে সাইকেল বেইচা কটকটি খাইয়ো।
আমিও চিন্তা করে দেখলাম, সাইকেল বেচা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। পরে যদি আরেকটা সাইকেল না কিনে দেয়।
আমি সাইকেল এর একটা চাকার টিউব খুলে সেই দোকানে রেখে দিলাম। বললাম, টিউবটা রাখ, আমি পরে নিয়া যাব। বাসায় যাওয়ার পর দুপুরে বাবার কাছে বললাম, আমার সাইকেল এর টিউব নষ্ট হয়ে গেছে, দুইদিন পরপর নষ্ট হয়। এই সাইজের টিউব নাকি পাওয়া যায় না, দোকানে বলছে। তাই আমাকে নতুন সাইকেল কিনে দেওয়া হোক... ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার বাবা বললো - আচ্ছা দেখি কি করা যায়। দুইদিন পর আমাকে নতুন সাইকেল কিনে দিল - ফনিক্স সাইকেল। তখন বাজারে দুই জাতের সাইকেল পাওয়া যেত - ফনিক্স আর হিরো। ফনিক্সটা আরেকটার থেকে ভালো। আমার বাবা সাইকেল কিনে নিয়ে আসছে রাতের বেলা... সারারাত আমার ঘুম নাই।
সকালে উঠে সাইকেল চালাতে যাব। বড় সাইকেল। সকালে কোন রকমে খাওয়া শেষ করে আমি বাইর হইতেছি, এমন সময় আমার মা বলে, পড়ালেখা বাদ দিয়া কোথায় যাও। আমি বললাম, পড়ালেখা বাদ মানে, আমি স্কুলে যাই। এই বলে আমি হাওয়া, আমার মা পিছন থেকে চিল্লাইয়া কি জানি বলতেছে।
স্কুলে আইসা দেখি, স্কুল বন্ধ। আমার তো মাথাই নষ্ট। পরে মনে হইলো, আজকে তো শুক্রবার।
এখন বাসায় যাওয়া যাইবো না। গেলে মাইর খাওয়ার চান্স আছে।
কি করা যায় ভাবতেছি। তারপর ভাবলাম, বাবার অফিসে চলে যাই। আমার বাবা তখন শুক্রবারেও অফিস করতো (এখনও মাঝে মাঝে করে)। আমি গিয়ে দেখি সত্যি সত্যি সে অফিসে কাজ করতেছে। আমি বললাম, আমারে বাসায় দিয়া আস।
আমার বাবা একটু পর আমাকে বাসায় নিয়া আসলো। আমার মাকে এটা সেটা বুঝাইয়া ঠান্ডা করা হইলো। আমিও মাইর এর হাত খেকে বাচলাম।
সেইদিন বিকালে আবার সাইকেল নিয়া বের হইছি। এইবার ঘুরতে।
বিভিন্ন যায়গায়, মাঠে ঘাটে সাইকেল চালাইতে চালাইতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আমি বাসায় ফেরত আসবো। এর মাঝে মাগরিবের আযান। আমি তখন নামাজ পড়তাম নিয়মিত। সাইকেল রেখে ভালো করে তালা দিয়ে, মসজিদে গেছি নামাজ পড়ার জন্য।
নামাজ এর পরে দেখি সাইকেল নাই। আমার তো মাথা খারাপ অবস্থা। অনেকক্ষণ এদিক সেদিক খুজাখুজি করলাম। চোরতো আর আমার জন্য সাইকেল রাইখা যায় নাই। এদিকে, বাসায় যাওয়া যাইবো না।
মাইর এর ভয়, সকালে তো বাইচা গেছি। এখন আর বাচন নাই। আমি বাসার সামনে গিয়া অন্ধকারে লুকাইয়া আছি। একটু পরপর বাসার ভেতর থেকে কথাবার্তা শুনি। বিভিন্নজন আমারে খুজতে বের হইছে।
আমি আবার আমার বাবার অফিসে গেলাম, জানালা দিয়া তাকাইয়া দেখি বাবা নাই। আমি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়। বাবারে খুইজা বাইর করতে হবে, নইলে কোনভাবেই বাসায় যাওয়া যাবে না।
আমার বাসায় আমার একটা লুকানোর জায়গা ছিল, সেটাতে ঢুকলে আমাকে কেউ দেখতো পেত না, কিন্তু অন্যদের দেখার জন্য আমি একটা ফুটা করে রাখছিলাম। আমি সেখানে লুকাইয়া আছি, আমার মাথায় চিন্তা, বাবা আসবো কখন।
একবারও মনে হয় নাই, সে আমাকে খুজতে যাইতে পারে। এইভাবে বসে থাকতে থাকতে আমি একসময় ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি আমারে লাঠি দিয়া কে জানি খুচাইতেছে, আর ফুটা দিয়া চাইয়া দেখি আমার আম্মা হাতে মস্ত একটা বেত নিয়া নিচে দাড়াইয়া আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।