হালার এতো ক্ষিদা লাগে ক্যা, ক্ষিদার জ্বালায় মনে কয় পাথর চাবাইয়া খাই...
বারিধারা উত্তরা লিঙ্ক রোডের উপর "এট্রিয়াম" রেস্তোরাতে বসে বন্ধু আবিরের জন্য অপেক্ষা করছি৷ প্রায় বিশ বছর হতে চলল আবিরের সাথে দেখা হয়না৷ বন্ধু পলাশের কাছ থেকে আমার নাম্বার পেয়ে সকালেই ফোন দিয়ে বলল, দোস্ত আমি আবির, চিনবার পারছস? আবিরের কথা পলাশের কাছে আগেই শুনেছি আমাদের বন্ধুদের মধ্যে হঠাৎ বড়লোক, ইনফেক্ট সবচেয়ে পয়সাওয়ালা, লাভ লোকসান হিসেব করার জন্য সর্বক্ষণিক হাতে ক্যালকুলেটর রাখে, তাই বন্ধু মহলে "ক্যালকুলেটর আবির" নামে পরিচিতি পেয়েছে৷ ওর কন্ঠ শুনেই চিনতে পারলাম৷ সাদ-সকালে আবিরের কল পেয়ে বেশ চাঙ্গা চাঙ্গা লাগছে৷ ছেলেবেলার বন্ধুদের ফিরে পাওয়া কেমন নস্টালজিক হতে পারে, তা কেবল আমার মত ভাগ্যবানরাই বলতে পারে৷
বেশ কিছুক্ষণ স্মৃতিচারণ করে বিদায়ের ঠিক আগ মুহুর্তে আবির বলল, আজ সন্ধায় কি করছিস? চলে আয় আমার বাসায়৷ আমি বললাম, নারে দোস্ত; আজ না অন্য একদিন আসবো৷ বলেই বিদায় নিয়ে চুপচাপ বসে আছি আর স্মৃতির আয়নায় নিজের ছেলেবেলা দেখে নিজে নিজেই হাসছি৷ আবারও আবিরের ফোন, আজ বিকেলে তুই কি ফ্রী? আমি বললাম, হেতু কি? আবির বলল, চল এক সঙ্গে ডিনার করি৷ তোর ভাবী বাসায় নেই, ভাবলাম তোর সাথে দেখাও হয়ে যাবে, আড্ডা আর ডিনার৷ আমি বললাম, মন্দ হয়না, আমার বাসায় চলে আয়৷ আবির বলল, নারে দোস্ত বাসায় না, চল কোন এক রেস্টুরেন্টে যাই, তোর সাথে কিছু আলাপও আছে৷ আবিরের সঙ্গে ডিনার করব বলে, এট্রিয়ামে আবিরের অপেক্ষায় আছি৷
ক্লিন সেভ, সেই চীরচেনা ইনোসেন্ট হাসি ঠিক যেন আগের সেই আবির শুধু বম্বে হিরোদের মত স্টাইলিস চুলগুলো নেই৷ একেবারেই বোল্ড, ওকে দেখেই তাৎক্ষনিক বুঝে গেলাম আমাদের বয়স হয়েছে৷ আবিরকে জড়িয়ে ধরে চিত্তে বেশ প্রশান্তি পেলাম৷ টেবিলে ডিনার সার্ভ হলো, খেতে খেতেই আবির বলল, পলাশ বলছিল তুই কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে চাস? দেখ, আমার একটি প্রজেক্ট আছে, ইচ্ছে করলে সেখানে ইনভেস্ট করতে পারিস৷ ওর কথা শুনে বুঝতে পারলাম এমএলএম টাইপের কোন বিজনেস হবে৷ কিন্তু আবির বলছে ওরা নাকি ইন্টার্ন্যাশনাল গোল্ডের ব্যবসা করে৷ লাভের অংকটা এতই বেশি, যে কোন লোকের মাথা ঘুরে যাবে, তবে আমি আশ্বস্ত হলাম না৷ কিন্তু সরাসরি কি করে না বলি৷ আমাদের ডিনারের এক পর্যায়ে আবিরের একটি কল এলো৷ দুই এক কোথায় আবির অন্য প্রান্তের আমার অজানা ব্যক্তিটিকে আমাদের ডিনারে যোগ দিতে বলল৷
ফোন রেখেই আবির বলল, আমার বিজনেসে ইনভেস্টর, আসলেই দেখতে পাবি কারা আমার বিজনেসে ইনভেস্ট করে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই পঞ্চাশুর্ধ একজন ভদ্রলোক আমাদের ডিনারে যোগ দিলেন৷ পরিচয় পর্বে জানতে পারলাম, তিনি একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা৷ টেবিলে বসেই তিনি বললেন, শুনেছি এট্রিয়ামের বুফে নাকি বেশ ইয়ামি এন্ড গুড কুয়ালিটি৷ এই বলে তিনি বুফের দিকে উঠে গেলেন৷ হাতে খাবার নিয়ে আমাদের সাথে খাবারে যোগ দিলেন৷
প্রথম দেখাতেই লোকটিকে বেশ ডিপ্রেসড মনে হচ্ছে৷ চেহারাটা ভীষণ কর্কশ, মুখটি সবসময় মলিন ও মেকি হাসিতে মাখা৷ তাছাড়া মনেহয় ভদ্রলোক ভীষণ ড্রিংক করেন৷ আমার এজাম্শন খুব তারাতারিই সত্য হয়ে গেল৷ টেবিলে বসেই তিনি বলে উঠলেন, আহ, কি পরিবেশ কয়েক গ্লাস হুইস্কি হলেই পরিপূর্ণ হত৷ আমি বললাম, আপনি বুঝি ড্রিংক করতে খুব পছন্দ করেন? তিনি বললেন, পছন্দ করিনা তবে হলে মন্দ হতোনা৷ আপনাদের ওখানেই ভালো ইচ্ছে হলতো, হয়ে গেল৷
আমি বললাম তা ঠিক, তবে আমাদের ওখানেও নন এলকোহলিক প্রচুর৷ ভদ্রলোক এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি বুঝি ড্রিংক করেননা? ইয়ংম্যান, ইনজয় ইয়োর লাইফ৷ জীবনে অনেকটা সময় পরে আছে৷ আমি হাসি দিয়ে বললাম, জি স্যার, লাইফটাকেতো আমার মত করে ইনজয় করছি৷ এ কথা বলার পর ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার মনে হচ্ছে৷
ডিনারের পর আরো বেশ কিছুক্ষণ জমিয়ে আড্ডা হলো৷ আবিরের বাড়ি যাওয়ার তাড়া নেই আর ভদ্রলোককে দেখে মনে হলো আসর জমাতে পারলেই বেশিখুশি হন৷
পরদিন সকালে ভদ্রলোক ফোন দিয়ে বললেন, আজ দুপুরে আসুননা আমার বাসায়, একসঙ্গে লাঞ্চ হয়ে যাবে৷ আমি মনে মনে ভাবলাম পুলিশের লোক কখনো পরিবারের সাথে বাড়িতে লাঞ্চ করে! আমার তেমন কোন কাজ ছিলনা, লাঞ্চের দাওয়াত নিয়ে নিলাম৷ ভদ্রলোকের বাড়ি গিয়ে যা বুঝলাম তা বর্ণনায় বিভৎস৷৷
-চলবে
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।