জাগরী একটি নির্দলীয় মঞ্চ যেখানে বাংলাদেশের যুবসমাজ দেশের রাজনৈতিক ও নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে সচেতন,সোচ্চার ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করতে পারে।
www.jagoree.org
অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম যে কোন একটা ট্যূর এর বর্ণনা লিখব। লিখব লিখব করেও ঠিক সময় করে উঠতে পারছিলাম না। অনেকদিন পরে হলেও শুরু করলাম। যানি না কেমন লাগবে তোমাদের কাছে।
পার্ট বাই পার্ট লিখব এই লেখাটা, যদি ভালো লাগে তাইলে কমপ্লিট করব আর নয়ত পরে থাকবে আমার মনের খাতায়, না লেখা অনেক স্মৃতিগুলোর মত।
সুন্দরবনে মধু ট্যূর
আমার অনেক দিনের সাধ ছিল সুন্দরবনে মধু আহরন দেখতে যাব কিন্তু কয়েক বছর ধরেই যাব যাব করেও আর যাওয়া হয়ে উঠেনি। এত বছর সুন্দরবনে এত ভ্রমন করেছি আর মধু আহরনের মত এক্সাইটিং ট্যূর করিনি ভাবতেই নিজের কাছে কেমন জানি অপরাধী লাগত। তাই এই বছর অনেক আগে থেকেই খোজে ছিলাম কোন্ ট্যূর কোম্পানী মধু সংগ্রহ ট্যূর এ যাবে। মারচ মাসের শেষদিকে হঠাৎ করেই দি গাইড ট্যূর লিঃ এর মালিক হাসান মনসুর ভাই এর অফিসে বসে কথা হচ্ছিল যে এখন আর তেমন কেউ মধু ট্রিপ করে না।
মধু ট্রিপ এর মত কষ্টকর ট্যূরে যাবার মত গেষ্টও পাওয়া যায় না আর কিছু গেষ্ট পাওয়া গেলেও তারা এই ট্রিপ করার খরচ বহন করতেও অগ্রহী হয় না। যার ফলস্রুতিতে ট্যূর অপারেটররাও মধু ট্রিপ এর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কথায় কথায় উনি জানালেন যে এইবার দি গাইড ট্যূর লিঃ মধু ট্যূর করছে কারন একজন ফরেইনার কয়েকদিন আগে শুধুমাত্র এই ট্যূর কারার জন্য বুকিং করেছে, যদি অন্য কোন গেস্ট নাও হয় তবু উনি একাই এই ট্যূর এর সকল ব্যয়ভার বহন করবেন এবং হাসান ভাই কেও এই ট্যূর এ গাইড হিসাবে যেতে হবে। শুনে আর আমাকে পায় কে? আমি বললাম ট্যূর যখন হচ্ছে আর আপনি যখন যাচ্ছেন আমাকে অবশ্যই আপনার সাথে নিতে হবে। উনি আমাকে এত বেশি স্নেহ করেন যে না বলার প্রশ্নই আসে না।
শুধু বললেন যে, চেস্টা করে দেখ যদি আরো কিছু গেস্ট পাওয়া যায় তাহলে ভালো হয়। উনি নিজেও এই ট্রিপ সেল করার চেস্টা করছেন।
শেষ পরজন্ত আমি কিছু গেস্ট জোগার করি, উনাকে বলার পরে বললেন যে ওনার দুই ফরেনার গেস্ট সহ আমরা মোট ১২ জন হয়েছি, তাই ১২ জনের বোট বনবিবি নিয়ে আমরা এইবারের মধু ট্যূর এ যাব। যথারিতি ৩০ তারিখ সকালের বাসে আমার ৮ জন গেস্ট নিয়ে সোহাগ পরিবহনে করে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেই, এবং সন্ধ্যায় জেলখানা ঘাটে গিয়ে হাসান ভাই কে ফোন দেই, উনি আগের দিন ফ্লাইটে এসে আমাদের জন্ন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঘাটে নৌকা পাঠিয়ে দিলেন, নৌকা করে বোটের কাছে গিয়ে দেখি উনি বনবিবির বদলে অবসরে বসে আছেন, একটু আশ্চরজ হলাম, কি ব্যাপার হাসান ভাই আপনি যে অবসরে বসে আছেন? মুচকি হেসে বলল উঠে আসতো আগে! অবসর এ উঠে দেখি প্রত্তেক্টা দরজায় গেস্টদের নাম লেখা, আমাকে একা একটা কামরা দেয়া হয়েছে।
আর অন্যান্য কামরা গুলোতে দেখি আমাদের ১২ জন ছাড়াও আরও গেস্ট এর নাম লিখা আছে। প্রশ্ন বোধক দৃস্টিতে উনার দিকে তাকাতেই বললেন যে এই ট্যূর এ আমাদের সাথে উনার নিমন্ত্রিত আরও কিছু সাংবাদিক যাবে, শুনে খুশিতে মনটা ভরে উঠল - যাক অনেক দিন পর মধু ট্যূর এ গ্রুপ সাইজ বেশ বড়ই হয়েছে। সাংবাদিক গ্রুপ আজ রাতের বাসে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে কাল ভোর বেলায় আমাদের সাথে জয়েন করবে আর ওরা আসার সাথে সাথেই আমরা বোট নিয়ে রওয়ানা দিয়ে দিব।
পরদিন অর্থাৎ ৩১ তারিখ ভোর ছয়টায় ১২ জনের গ্রুপ বোটে উঠে আসল, এবং ওরা ওঠার সাথে সাথেই আমরা বোট ছেড়ে দিলাম। আমাদের এখন মোট গ্রুপ সাইজ দাড়িয়েছে ২৪ জন এ।
সকালের নাস্তা খাওয়ার পর পরই শুধু ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দ শুনে লবি থেকে বের হয়ে দেখি সাংবাদিক ভাইরা তাদের কার্জ্রক্রম শুরু করে দিয়েছে।
সুন্দরবন এর অন্য আর দশটা ট্যূর এর মত খুলনা থেকে মংলা না গিয়ে আমরা চালনা বন্দর পার হয়ে একদম নতুন পথে বুড়িগোয়ালিনির দিকে রওনা হলাম, এই দিকে আমি আগে আর কখনো আসিনি। তাই সকালের মিঠে রোদে জাহাজের ছাদে বসে নতুন এই পথ এর আসসাদন নিচ্ছিলাম। কিছুদুর যেতেই লোকালয় শেষ হয়ে গেল, শুরু হলো সুন্দরবনের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্জ। মাত্র ঘন্টাখানেক যেতেই প্রথম দেখা গেল এক ঝাক বানরের পাল।
জাহাজের শব্দে নদীপার থেকে দৌড়ে বনের দিকে পালিয়ে গেল। হাসান ভাই বললেন ভালো করে নজর রাখতে, এই রুটে অনেক বানর দেখা যাবে। দুপুরবেলা লাঞ্চ এর আগে দিয়ে হঠাৎ করেই হাসান ভাই বলল, কার সাহস আছে নদীতে নামে সাতার কাটার? সারা জীবন অনেক নদীতে সাতার কেটেছি কিন্তু কখনো সুন্দরবনে কোনো নদীতে নামার সাহস করিনি। কেনো জানি নদীতে নেমে সাতার কাটার প্রবল একটা ইচ্ছা মাথাচারা দিয়ে উটছিল, আবার মনের ভিতর থেকে কে যেন বলছিল না নামিস না, এই নদী কুমিরে - হাংগরে ভরা - নামা ঠিক হবে না। মনস্থির করতে পারছিলাম না কিছুতেই।
এইদিকে হাসান ভাই তাড়া দিচ্ছিল বার বার - কেউ কি আছে যে নদীতে একটু সাতার কাটতে চায় উনার সাথে? মাথায় কি পাগলামি চাপলো আমি বলে উঠলাম - আপনি যদি নামেন তাহলে আমি আছি। আমার বলতে যা দেরি, হাসান ভাই সাথে সাথে বললেন এই জাহাজ থামা, এংকর কর, আর বয়াগুলা পানিতে নামা। জাহাজ এংকর করা শেষ হয় নাই, বয়া শুধু নামানো হলো আর হাসান ভাই দেখি লাফ দিয়ে নদীতে, ২৪ জনের মধ্যে হাসান ভাই ছাড়া আর একজন মাত্র সাহসী পেলাম - অনন্তু নামে একটা ছেলে (আসলে অশান্ত পরে বুঝেছিলাম) যে হাসান ভাইএর পর পর এ দেখি পানিতে লাফিয়ে পরলো আর তার পরপর এ আমি। পানিতে পরেই ভেসে উঠে দেখি জাহাজ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি, পানিতে স্রোতের টান ভয়াবহ রকম বেশি। যাই হোক কিছুক্ষণ সাতার কেটে কোন অঘটন ছাড়াই আমরা আবার জাহাজে উঠে পরলাম।
এর পর আরো প্রায় ৩ ঘন্টা জাহাজ চালানোর পর বিকাল ৪টার দিকে আমরা বুড়িগোয়ালিনি পৌছলাম। পথে দেখতে পেলাম প্রচুর বানর, কিছু হরিণ, কিছু বন্য শূকর এবং হরেক প্রজাতির পাখি।
(আজ এই পর্যন্তই থাকলো, যদি তোমাদের ভালো লাগে তাইলে বাকিটুকু লিখব। )
মধু ট্যূর এর কিছু ছবি ফ্লিকারে আপলোড করলাম, ইন্টারেস্টেড হলে ফ্লিকার থেকে দেখে নিতে পার।
ফ্লিকার লিংক –
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।