আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্দরবনে বিদেশি জাহাজের বিষ!



বঙ্গোপসাগরে বিদেশি জাহাজের রাসায়নিক বর্জ্য নিক্ষেপর ফলে বিষাক্ত হয়ে পড়ছে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার পানি। রং বদলে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পানিতে। বিশেষজ্ঞরা চাইছেন, আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে দূষণের মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে। সুন্দরবন এলাকায় সম্প্রতি নদীর পানির রঙ বদলে যাওয়া ও সামুদ্রিক প্রাণীর অস্বাভাবিক আচরণের কারণ জানতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একটি দল ওই এলাকায় অনুসন্ধান চালায়। বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সালেকুজ্জামান এই গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন।

তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে জাহাজের রাসায়নিক বর্জ্য নিক্ষেপকেই বঙ্গোপসাগরের সাম্প্রতিক দূষণের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অধ্যাপক সালেকুজ্জামান জানান, গত ২৫-২৬ জুন থেকে সুন্দরবন এলাকার কয়রা ও সাতশিরা নদীর পানিতে মারাত্মক দূষণ দেখা দেয়। এসব নদীর পানি কোথাও কালো, কোথাও হলুদ আবার কোথাও সবুজ রঙ ধারণ করে। সেই সঙ্গে ইলিশ, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, বড় আকৃতির কচ্ছপ, হাঙ্গরসহ সামুদ্রিক প্রাণী নদীতে চলে আসতে থাকে। পানির রঙ ও সামুদ্রিক প্রাণীর এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তিনি বলেন, “কপোতাক্ষ নদীর চ্যানেল, এই নদীর শাখা শেখবাড়িয়ার ও চুনার নদীসহ আরো কয়েকটি শাখা নদী সুন্দরবনের ভেতরে এঁকেবেঁকে প্রবেশ করেছে। অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে দূষণের কবলে পড়া এসব নদীর পানির রাসায়নিক পরীক্ষা এবং ওই অঞ্চলের জেলেদের সাক্ষাতকার নেওয়া হয়। আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গভীর সমুদ্রে কোনো বিদেশি জাহাজ লুকিয়ে বিষাক্ত বর্জ্য নিপে করার কারণেই এই দূষণ হয়েছে। দিনে দুবার করে জোয়ারভাটার কারণে এই দূষণ সাগর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নদীতে। ফলে নদীর পানির রঙ ও গন্ধও বদলে গেছে।

সামুদ্রিক প্রাণীর ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ কারণে এসব প্রাণী সাগর থেকে নদীতে চলে এসেছে। ” অধ্যাপক সালেকুজ্জামান জানান, নদীর দূষিত পানি পরীক্ষা করে এতে নাইট্রেট, ফসফেটসহ অন্যান্য উপাদানের অনুপাতে অস্বাভাবিক হেরফের ল্য করা গেছে। এছাড়া পানিতে রয়েছে তীব্র কটু গন্ধ। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের ওপরও এই দূষণের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়া বিচিত্র নয় বলে জানান তিনি।

সুন্দরবন এলাকার নদী দূষণের কারণ হিসেবে গবেষক দল প্রথমে সমূদ্র তলদেশের কোনো আলোড়ন বা ভূমিকম্পের কথা বললেও পরে তাদের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় বলে জানান সালেকুজ্জামান। তিনি আরো জানান, গত ৭ জুলাই গবেষণাপত্রটি সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন তারা। এখন সুন্দরবন এলাকায় গবেষক দল আবারো অনুসন্ধান চালাচ্ছে। অধ্যাপক সালেকুজ্জামান বলেন, “আমাদের বিস্তির্ণ উপকূলীয় এলাকা প্রায় অরতি অবস্থায় রয়েছে। তাই ওই এলাকায় কোনো বিদেশি জাহাজের পক্ষে লুকিয়ে রাসায়নিক বর্জ্য নিক্ষেপ খুবই সম্ভব।

কীভাবে দূষণ হচ্ছে এবং এর মাত্রা এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিশ্চিত করতে ‘গ্রিন পিস’ বা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধান চালানো প্রয়োজন। এতে পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণও জানা যাবে। ” সোমবার জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ক পরিবেশ অধিদপ্তরের এক সভায় অধ্যাপক সালেকুজ্জামান পরিবেশ উপদেষ্টা সি এস করিমকে তাদের গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে জানান। উপদেষ্টা তাৎণিকভাবে খুলনা জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান চালানোর নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্যে নিয়েও তদন্ত চালানো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

(তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।