শনিবার বিকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা-একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি এ মত প্রকাশ করেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “শান্তিচুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল সেখানকার অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার করে নেয়া। কিন্তু সরকার সেখানকার প্রায় পাঁচশ’ সেনা ক্যাম্পের মধ্যে দুইশ’ ৪০টি প্রত্যাহার করেছে বলে দাবি করলেও আমরা দেখেছি এই সংখ্যা ৭০/৮০টির বেশি নয়। ”
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে পাহাড়ে সামরিক উপস্থিতিকে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসাবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতি ৪০ জনের জন্য একজন সেনা সদস্য রয়েছে।
কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতি কিংবা আক্রমণের আশঙ্কা না থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের সেনা উপস্থিতি অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া এই অঞ্চলের মিয়ানমার ও ভারত সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
সেনা উপস্থিতির বদলে রাজনৈতিকভাবে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই হওয়া উচিত। সেনা হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।
আমরা দেখেছি সেনা ও সেনা গোয়েন্দা সংস্থা এই সংঘাতকে আরো উস্কে দেয়। ”
পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “২০০৪ থেকে ১১ সাল পর্যন্ত সেখানে এক হাজার চারশ’ ৮৭টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ছয়শটি ঘটনা ঘটেছে বর্তমান সরকারের আমলে, যার মধ্যে নির্যাতন, ধর্ষণ, লুট, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও আছে। ”
পাহাড়ে আঞ্চলিক কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের যথাযথ ক্ষমতা না থাকা এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে সেখানকার জনগণের নিয়ন্ত্রণ না থাকার পিছনেও সেনা অবস্থানকে দায়ী করেন তিনি।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) সহযোগিতায় আলোচনা সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন।
ইফতেখারুজ্জামান নিজেই এই কমিশনের সদস্য।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘উদ্বেগজনক’ মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কমিশনের কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, “এই সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১ বার আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ তারাই এখন বলছেন দেশে কোনো আদিবাসী নেই। ”
একইসঙ্গে সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা অনুসারে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের গতি ও ফলাফল সেভাবে এগোয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকারের বাকি মেয়াদে শান্তিচুক্তির অসমাপ্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।
আলোচনায় অন্যদের মধ্যে কমিশনের সদস্য ড. স্বপন আদনান, ড. ইয়াসমিন হক, খুশী কবীর ও উপদেষ্টা ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা বক্তব্য রাখেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।