পাহাড়ে জুম ক্ষেতে এখন পাকা ফসল তোলার ভরা মৌসুম। জুমিয়ারা ঘরে তুলছে জুমের সেই সোনালি ফসল। আর ফলানো ফসল দেখে জুমিয়া নারী-পুরুষের মুখে ফুটেছে হাসি। চোখে আশার আলো। জুম্ম নারীরা ব্যস্ত জুমের পাকা ধান কাটতে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চাষ হচ্ছে জুম চাষ (পাহাড়ের ঢালে বিশেষ ধরনের চাষাবাদ)। জুমিয়ারা পাহাড়ের ঢালে বিশেষ পদ্ধতির এই আদি জুম চাষ করে থাকে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে জুম প্রস্তুত করার জন্য গাছপালা কাটা হয়। মার্চ-এপ্রিলের দিকে শুকনা গাছপালা আগুনে পুড়িয়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের বীজ বপন করা হয়। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় ফসল তোলা।
বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে চলছে নবান্ন উৎসব। তিন জেলার প্রায় ২৫ হাজার ৪০০ হেক্টর পাহাড়ি ভূমিতে জুম চাষ হয়েছে এবার। পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়ি মানুষের জীবিকার আদিম ও প্রধান উৎস এ জুম চাষ। বাংলাদেশের একমাত্র তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে এ জুম চাষ করা হয়। জুমের পাহাড় এখন পাকা ধানে ভরপুর।
তাই এ পাকা ধান বাড়িতে তোলা নিয়ে ব্যস্ত জুমিয়ারা। জুম্ম তরুণ-তরুণীরা গানসহ নবান্নের উৎসবে মেতে উঠবে। তিনটি পার্বত্য জেলার জুম ক্ষেতে শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটা। ধুম পড়েছে মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়স, কাঁকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসল তোলার কাজ। এরপর ঘরে উঠবে তিল, যব এবং সব শেষে তোলা হবে তুলা।
এ মৌসুমে উপযুক্ত জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের কারণে এবং ইঁদুরের উৎপাত কমে যাওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। জুমের সোনালি ফসল ঘরে তুলতে পাড়ায় জুম্ম নারী-পুরুষ ফিরে পেয়েছে মুখের হাসি। চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আশার আলো। বীজ বপনের পাঁচ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফসল দেখে হাসি ফুটে ওঠে জুম চাষীদের মুখে।
জুমিয়ারা পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে রোদে শুকানোর পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে জুম চাষের উপযোগী করে তোলে।
এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে। তারপর শুরু হয় জুমের ফসল তোলার কাজ। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে মারফা, কাঁচা মরিচ, চিনা, ভূট্টা পাওয়া যায়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে তুলা, তিল, যব ঘরে তোলা হয় কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে।
জুম চাষীদের চোখে-মুখে আনন্দ দেখা দিলেও অল্প পরিমাণ জায়গায় জুম চাষ করে বছরের খোরাকি না হওয়ায় চিন্তিত। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাটির উর্বরতা হ্রাসের কারণে জুম চাষের পাহাড় কমে গেছে। তাই একই পাহাড়ের মাটিতে বার বার জুম চাষ করায় এখন আর আগের মতো জুমে ভালো ফলন হয় না। তাছাড়া জুমে এখন সার প্রয়োগ না করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।