বাড়ি ফিরে এসে আমার প্রিয় বড় ডল-পুতুলটার স্যুয়েটারের পিঠের দিককার চেইনটা খুলে বের করলাম লুকানো ড্রয়ারের চাবিটা। তারপর চাবি ঘুরিয়ে রবীন্দ্রনাথ, নির্মলেন্দু গুণ ও হেলাল হাফিজদের আড়াল থেকে টেনে বের করলাম বহূদিন ধরে সযতনে লালিত একতাড়া চিঠি। রুমের লাগোয়া ব্যালকোনীটার এক কোনায় সে পত্রস্তুপে অনল জ্বালালাম। চোখের সামনে ধ্বংস হতে লাগলো হাজার বছরের রচিত স্বপ্ন সাধ ও ভালোবাসার কাব্যগাঁথা।
তারপর মাথা ঠান্ডা হলে, সবকিছু শোনার পর সে হেসে বললো, "তুই একটা পাগলী।
ছোটখাটো পাগলী না, নামকরা কোনো বিখ্যাত পাগলী। "
সেবার তার কিন্চিৎ কৌতুকে লঙ্কাকান্ড বাঁধালাম। রাম রাবনও বুঝি আমার সে রুদ্রমূর্তীর সামনে দাঁড়ালে নির্ঘাৎ ভিমরী খেয়ে মারা পড়তো । অনেক কষ্টে ও সাধনায় শান্ত হবার পর, গুরু কহিলেন, "তুমি কি এখনও ছোট আছো? শরীরে ধায় ধায় বড় হইয়াছো কিন্তু মানষিকভাবে তো সেই ১০/১২ এর বেশী বয়স বাড়েনি। " কত বড় কথা।
যাইহোক, নিজের কথা থাকুক, এবার বলি আমার এক পিচকি ভাগ্নের কথা। একদিন আমরা সবাই গেলাম তাদের বাসায় দাওয়াৎ খেতে। খাবার টেবিলে হঠাৎ সামান্য কথায় তার বাবা ও মায়ের মাঝে হাতাহাতি অবস্থা। আমি আবার নিজে যাই করি, মানুষের ক্রোধ দেখলে বড়ই ভীত হই। পালাবার পথ খুঁজে পাইনা।
টেবিলের তলায় লুকাবো নাকি ভাবছি কেবলি, এমন সময় চার বছরের ভাগ্নে গুরুগম্ভীর দাদামশাই চালে বলিলেন, "বাবা মা তোমাদের লজ্জা করেনা? একবাড়ি মানুষের সামনে এমনভাবে ঝগড়া করছো?"
আমিসহ সকলের চক্ষু ছানাবড়া দশা। বলে কি পুচকা? এই চার বছরের পিচকীর বয়স কি সত্যি চার নাকি চল্লিশ নাকি চারশো কে জানে বাবা!
যাইহোক আমাদের প্রকৃত বয়স যাই হোকনা কেনো মনোবিজ্ঞানীদের মতে নাকি মনের বয়স বলে একটা কথা আছে যা বিভিন্ন সময়েই ভিন্ন হয়ে থাকে। কারো প্রকৃত বয়স হয়তো ২৫ কিন্তু সে মানষিক ভাবে হতে পারে ৫০ বছর বয়সের অধিকারী। আবার কারো হয়তো ৬০ কিন্তু চলনে বলনে কথাবার্তায় এমনকি কন্ঠস্বরেও সে থেকে যেতে পারে সুইট সিক্সটিন।
মাঝে মাঝে লতা মঙ্গেসকর আশা ভোসলে , হৈমন্তী শুক্লার গান শুনে আমার এমনি মনে হয়।
আহা এমন যদি হত আমার !
যাইহোক বহূদিন ধরে এই মানষিক বয়স আর প্রকৃত বয়সের ব্যাপারটি ভাবিয়েছে আমাকে, নিজের ব্যাপারটা নিয়ে একটু সন্দিহান ছিলাম বলেই হয়তোবা। এরপর কিছু বাচ্চাদেরকে অন্যান্য বাচ্চাদের গড় আচরন থেকে ভিন্ন আচরন করতে দেখে ও বুদ্ধিমত্তার ভিন্ন ভিন্ন বিষয়গুলো নিয়ে একটু পড়ালেখা/ পর্যবেক্ষন করে দেখলাম আসলে একেক বাচ্চা একেক রকম। বুদ্ধিকে বাইরে থেকে পরিমাপ করা যায়না তবে বুদ্ধি প্রতিফলিত করে এমন কতগুলো আচরন দিয়ে বুদ্ধিকে পরিমাপ করা যায়। তারমানে যা পরিমাপ করা হয় তা একজন ব্যাক্তির কর্মসম্পাদনগুলো। হুম এসব আমার কথা না, পন্ডিতগণের কথা।
সুদূর অতীতে এক একজন ব্যাক্তির দৈহিক আকৃতি ও মস্তিষ্কের গঠন দেখে নাকি তার বুদ্ধি পরিমাপের চেষ্টা করা হতো। তবে বিজ্ঞান সন্মতভাবে বুদ্ধি পরীক্ষার ভিত্তি সর্বপ্রথম স্থাপন করে স্যার সানফ্রানসিসকো গ্যাল্টন। এমনি জানলাম। তার বিখ্যাত বই Click This Link
এর পরে আরো দু একজন বিজ্ঞানী এই নিয়ে কাজ করেছেন তবে বিজ্ঞান সন্মত বুদ্ধি অভীক্ষার উদ্ভাবক হিসাবে ফরাসী বিজ্ঞানী আলফ্রেড বিনেটের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
শিশুর স্বাভাবিক বয়সের বুদ্ধির চাইতে নিম্নমানের বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের সনাক্ত করার একটি অভীক্ষা উদ্ভাবন করেন আলফ্রেড বিনেট ও তার সহযোগী থিওডোর সিমো ১৯০৫ সালে।
http://www.whonamedit.com/synd.cfm/1346.html
এই অভীক্ষাটি বিনেট- সিমো স্কেল নামে পরিচিত। http://en.wikipedia.org/wiki/Stanford-Binet_Intelligence_Scales
তারা যুক্তি, পার্থক্য নির্নয়, বিচার ক্ষমতা বিষয়ে কিছু প্রশ্ন তৈরী করেন এবং স্কুলে কৃতী ছাত্রদের মাঝে পাওয়া উত্তরগুলো জরীপ করে ও স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন বা যারা পড়ালেখায় পিছি্যে আছে তাদের উত্তর গুলোর সাথে যাচাই করেন। এটি খুবই সহজ ও সাধারন কাজগুলো নিয়ে রচিত একটি পরীক্ষা যা করে ফেলতে শিশুদের বিশেষ কোনো পড়ালেখার প্রয়োজন হয়না। এ পরীক্ষার বিশেষ বৈশিষ্ঠ এ পরীক্ষাতেই প্রথম মানষিক বয়স ব্যাপারটি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।
Click This Link
এখানে খুব সহজেই শিশুর মানষিক বয়স নির্ধারন করা যায়।
যেমন একটি শিশুর প্রকৃত বয়স যদি হয় ৫( জন্মের পর হতে দিন ক্ষণ বিচারে যে বয়স) সে যদি ৭ বছর বয়োসোপোযোগী সবকটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে তবে তার মানষিক বয়স ৭। আর যদি সে ব্যার্থ হয় এবং ৪ বা ৩ বছরোপোযোগী প্রশ্ন গুলোর সঠিক উত্তর দেয় তবে তার মানষিক বয়স ৪ বা ৩।
মানষিক বয়স নির্ধারন করা যায় এমন ৫ বছর বয়সের একটি সাধারন প্রশ্নমালাঃ
১। একজোড়া বাটখারার সাথে ভিন্ন ওজনের বাটখারার তুলনা করা।
২।
একটি বর্গক্ষেত্র দেখে তা অংকন করা।
৩। দুটি ত্রিভুজকে পাশাপাশি রেখে একটি চতুর্ভূজ তৈরী করা।
৪। একটি শব্দ শুনে তা পুনরায় বলা।
৫। চারটি মুদ্রা গণনা করা।
বিনেট- সিমো অভীক্ষাটির সর্বশেষ সংস্করনের বিশেষ আরেকটি বৈশিষ্ঠ আছে তা হলো বুদ্ধাংকের ব্যাবহার।
অধ্যাপক টারম্যান সর্বপ্রথম এ অভীক্ষায় বুদ্ধাংকের ব্যবহার করেন। বুদ্ধাংক হলো মানষিক বয়স ও প্রকৃত বয়সের অনুপাত।
বুদ্ধাংকের একটি সূত্র আছে।
বুদ্ধাংক (IQ)= মানষিক বয়স
----------------- X ১০০
প্রকৃত বয়স
যেমন
একটি ৪ বছরের শিশুর বুদ্ধাংক(IQ)= ৫
--------- X ১০০ =১২৫
৪
৫ বছরের শিশুর বুদ্ধাংক(IQ)= ৫
--------- X ১০০ =১০০
৫
৬ বছরের শিশুর বুদ্ধাংক(IQ)= ৫
--------- X ১০০ =৮৩ ....
৬
এখানে দেখা যায়, ৪ বছরের শিশুটি বেশী বুদ্ধিসম্পন্ন আর ৫ বছরের শিশুটি স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন আর ৬ বছরের শিশুটি সস্বাভাবিকের তুলনায় কম বুদ্ধিসম্পন্ন।
বর্তমানে নানারকম কুইজের সাহায্যেও আমরা আমাদের মানষিক বয়স জেনে নিতে পারি । তবে সাত কান্ড রামায়ন পড়ার পরে (যদি পড়ে থাকেন) তো চলুন আমরা এবার নিজেদের মানষিক বয়সটা জেনে নেই।
আপনার বাবুটার জন্য
Click This Link
আর আপনার জন্য
http://www.expertrating.com/IQ-test.asp
Click This Link
http://www.dumb.com/mentalage/
কত গাধা আপনি, তার প্রমান চুপিচুপি পেতে
http://www.am-i-dumb.com/
আর
আপনি কত কুইক থিংকার, কতখানি আবেগপ্রবন, কতটুকু যুক্তিবিদ সব প্রশ্নের উত্তর পেতে,
Click This Link
যদিও অলাইনে প্রাপ্ত এসব কুইজমূলক পরীক্ষায় আমার আবার একেক পরীক্ষায় একেক সময়ে একেক বয়স এসেছে।
আমার বয়স দেখছি আমার চিত্তের মতই চন্চলমতী। কখনও এক লাফে গাছে ওঠে কখনও পপাৎ ধরণীতল। কি আর করা আছাড়ি পিছাড়ি খাওয়া আর এই নিয়েই আমি যে এমনি।
তবে সত্যিকারে শিশুর মানষিক বয়স নির্ণয়করণে উপকার পেতে পারেন তাদের মা বাবা ও স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। মানষিক বয়সের উপরে শিশুর বুদ্ধিমত্তা নির্ভর করে কাজেই অযথা চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে সেই মত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে শিশুর বিকাশ।
মানষিক বয়স নির্নয় করবার উপোযোগী প্রশ্নমালা পাওয়া যেতে পারে শিশুমনোবিজ্ঞানের বইগুলোতে বা বিদেশে এ বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের কার্ড বা পাজেল পাওয়া যায় এ্যডুকেশলান টয়ে'স সেকশনে, যা দিয়ে খুব সহজেই নির্নয় করে ফেলতে পারেন আপনার শিশুর মানষিক বয়স ও বুদ্ধাংক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।