সবার ওপর মানুষ সত্য... তার ওপর ....
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ আপনি যদি আমাকে চেনেন এবং আমার স্কুলের শিক্ষক হয়ে থাকেন - দয়া করে এই পোষ্ট পড়বেন না, পড়লেও গালিগালাজ করবেন না - চুপিসারে মাইনাস দিয়ে চলে যাবেন।
আমি তখন স্কুলে পড়ি, পড়ি বলাটা ঠিক যুতসই হবে না, সঠিক হবে - আমি তখন স্কুলে যাই। স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে কার ভালো লাগে, দুই একজন এর হয়ত ভালো লাগতো কিন্তু আমার যে লাগতো না সেই ব্যাপারটা নিশ্চিত। স্কুলের গল্প করাতে তাই আমি কখনও পড়ালেখার জিনিসটা খুঁজে পাই না। যা হোক, প্রসঙ্গ দীর্ঘায়িত না করে মূল ঘটনায় চলে আসি।
ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় আমাদের স্কুলে একজন নতুন শিক্ষক এলেন। আমাদের স্কুলের ট্রাডিশন ছিল, প্রায় সব শিক্ষকের একটা দুইটা করে নিক নেম থাকতো..। যেমনঃ এমব্রোস, জিদান, হারকিউলিস, বস, স্কয়ার, হাফ লেডি - এইসব। নিকনেমের এমন জোয়ার ছিল যে, এই পোষ্ট লিখার সময় ওই শিক্ষকের নামই মনে করতে পারছি না। তবে নিকনেম মনে আছে - হারকিউলিস।
হারকিউলিস স্যার প্রথমদিন ক্লাসে এসে কেন জানি আমার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে গেলেন। ক্লাসে অন্য ছেলেদের তুলনায় আমি মোটেও বেশি দুষ্ট ছিলাম না, কিন্তু আমার উপর তিনি কেন ক্ষেপলেন সেটা আজো আমার কাছে বোধগম্য নয়। এরপর থেকে আমাদের ক্লাসে আসলেই উনি সবসময় আমাকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করতেন। আমার বিরাট সমস্যা হয়ে গেল - অন্য কেউ ক্লাসে পড়া শিখে না আসলেও কিছু হতো না, কিন্তু আমি না শিখে আসলে নিশ্চিত মাইর। আমি নরমালি হোম ওয়ার্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করতাম।
হোমওয়ার্ক আমার কাছে মনে হতো জগদ্দল পাথ্থর। মাঝে মাঝে এইসব কারনে মাইর টাইর খেতাম কিন্তু বাসায় কেউ বলে দিবে সেটা মাথায় আসতো না। সুতরাং বাসায় নিশ্চিন্ত মনে থাকতাম। একদিন কি হলো - হারকিউলিস স্যার আমার আব্বাকে বলে দিলেন যে আমি বাসায় পড়ালেখা করি না। আমার বাবার ধারণা ছিল - আমি বাসায় প্রচুর পড়ালেখা করি।
সন্ধ্যার পর (সন্ধ্যার এক ঘন্টা পর) বাসায় ফিরে আমি তো সুন্দরমত টেবিলেই বসে থাকি। বই খাতা আমার সামনে থাকে। হারকিউলিস স্যার আমার বাবাকে বলার পর উনি একদিন চুপিসারে আমার পেছনে গিয়ে দেখেন আমি স্কুলের বই এর ভেতর লুকিয়ে লুকিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর আমার ছেলেবেলা পড়তেছি। যদিও এই ঘটনার পর আমার বাবা আমাকে কিছু বলেন নাই কিন্তু আমার মা ক্ষেপে গিয়ে আমার পিঠে কয়েকটা বেত (কাঠের লাকড়ি) ভেঙ্গে ফেললেন। আমি কানতে কানতে ঠিক করলাম - হারকিউলিসরে শিক্ষা দিতে হবে।
তখন টিভিতে জাহিদ হাসান এর একটা নাটক চলতো - নাটকের নাম মনে নাই। সেই নাটকের মধ্যে জাহিদ হাসান নিজের কাছে নিজেই চিঠি পোষ্ট করতো। আমিও চিন্তা করলাম - হারকিউলিসরে জব্দ করতে হবে। আমি পোষ্ট অফিসে গিয়ে খুঁজে বের করলাম - আমার স্কুলের আশেপাশের এলাকায় চিঠি বিলি করে কোন পোষ্টম্যান। তার সাথে খাতির জমাইলাম।
তারপর তারে একদিন সংগে নিয়ে গিয়ে হারকিউলিস স্যার কে চিনিয়ে দিয়ে আসলাম। একটা চিঠি যাইতে কতদিন লাগে সব খোঁজ খবর নিয়ে আমি আমার কাছে একটা চিঠি লিখলাম। চিঠির মধ্যে বিভিন্ন রকম উপদেশ। ভালো করে লেখাপড়া করবা, খেলাধুলা করবা, শরীরের প্রতি যত্ন নিবা এইসব। লিখে আমার ঠিকানায় (স্কুলের ঠিকানা) পোষ্ট করে দিলাম।
আর পোষ্টম্যানকে বলে দিলাম কয়টার সময় গেলে হারকিউলিস স্যার আমার ক্লাস এ যাইতে থাকবে।
পোষ্টম্যান যথারীতি হারকিউলিস স্যারকে পেয়ে আমার চিঠিটা স্যার এর হাতে দিয়ে আসলো। স্কুলের ঠিকানায় যে কোন ছাত্রের চিঠি আসতে পারে সেটা স্যার এর মাথায়ই ছিল না। তাও আবার তার শত্রু ছাত্রের নামে। একটু পর উনি আমাদের ক্লাসে এসে হাজির।
এসে আমাকে বলে - এই তোর নামে চিঠি এসেছে, নিয়ে যা। আমি চিঠি নিতে গেলাম। গিয়ে দেখি - আমার চিঠি খোলা। আমি বললাম - স্যার চিঠি খোলা কেন? স্যার কয় চিঠি খোলাই ছিল। আমি বললাম - খোলা থাকবে কেন, চিঠি কি খোলা থাকে? স্যার বলে - চিঠি খোলা থাকলে আমি কি করবো? আমি নাছোড়বান্দা - না স্যার চিঠি খোলা থাকার কথা না।
এইদিকে ক্লাসের সব পোলাপাইন আমার কাহিনী দেইখ্যা ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া গেছে। স্যার বলে - তাহলে মনে হয় পোষ্টম্যান খুলছে। আমি দৌড় দিয়া সোজা হেড স্যার এর রুমে। আমার পিছন পিছন হারকিউলিস স্যার আইসা হাজির। আমি হেডস্যার এর রুমে গিয়া বললাম - স্যার আমার ব্যক্তিগত চিঠি খুইলা পড়ছে।
স্যার বলে, সে পড়ে নাই, পোষ্টম্যান তাকে নাকি খোলা চিঠিই দিছে। আমি আবার বাইর হইতে গেছি - হেডস্যার বলে কই যাস? আমি বললাম - স্যার পোষ্টম্যানরে ডাইকা আনি। আমি দৌড়াইয়া গিয়া পোষ্টম্যানরে ডেকে আনলাম। পোষ্টম্যান আইসা বলে - চিঠি তো বন্ধ করা ছিল। আমিও হেড স্যার এর দিকে তাকাইয়া বললাম - স্যার এই চিঠি আমি এখনও পড়ি নাই।
আপনি স্যার খুইলা দেখেন এর ভিতরে কি কি লেখা আছে। আমি বলি আপনি মিলান। এই চিঠি স্যার আমি লিখছি আর নিজ হাতে পোষ্ট করছি - চিঠি পোষ্ট করার সময় চিঠি বন্ধ ছিল - আমার বন্ধুরা দেখছে। আমার বন্ধুরা সবাই একযোগে বললো - হ্যা তারা দেখছে চিঠি বন্ধ ছিল।
এর মধ্যে আরো কয়েকজন শিক্ষক চিল্লাচিল্লি শুনে এসে গেছেন।
তাদের মধ্যে একজন আমাকে মাইর দিয়ে দিলেন - বললেন - তোর সাহস তো কম না - নিজের কাছে নিজে চিঠি লিখস। আমি মাইর খাইয়া দৌড়াইয়া বাসায় আইসা গেলাম। হেডস্যার আমার বাসায় ফোন করে ঘটনা বলার কারনে সেইদিন বাসায় আরেকবার প্রচন্ড মাইর খাইতে হইছিল কিন্তু আর কোনদিন হারকিউলিস স্যার আমাকে ক্লাসে পড়া জিজ্ঞেস করেন নাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।