আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছুটির দিনে হাল্কা রান্না

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

ছুটির দিনে হাল্কা রান্না আজ আমার ছুটির দিন। ভোররাত থেকে হাল্কা ধরণের বৃষ্টি হয়ে গেছে। আকাশটা এখনো মেঘলা। দিনটা নিঃসন্দেহে বেশ রোমান্টিক। বিশেষ করে কোন ছুটির দিন যদি এমন হয় তবে অন্যরকম ভাললাগায় মনটা ভরে যায়।

ইতিমধ্যে সকালে এক পুরোনো বান্ধবী বউকে কল করেছে। বেশ রসিয়ে কথা হচ্ছিল দুজনে। আমি তখনো বিছানায়। ঘুম ভেঙ্গেছে অনেক আগেই। বউয়ের কথা শেষ হবার আগেই বললাম আমাকে একটু দাও, ওর সাথে কথা বলি।

কথা হইলো তাহার সনে। তাকে এও জানালাম এখন আমার অফুরন্ত সময়- ইচ্ছে হলে যখন তখন বাসায় আসতে পারো। তুমিতো জানোই বউ কখন বাসায় থাকেনা। ওদিকে আমি না দেখেও বুঝতে পারলাম নিগারের নিটোল মুখে মিষ্টি লালিমা, কানে শুনলাম ঝর্ণা হাসির ফোয়ারা। সে জানালো সময় পেলেই আসবে- অপেক্ষায় থাকতে বললো।

আমার কথা শেষ করে বউয়ের হাতে ফোন দিলাম। সে তার বান্ধবীকে অকপটে জানালো এমন কথা গত রাতে আমি নার্গিসকে বলেছি। কদিন আগে মিনুকেও বলেছি। বান্ধবীকে উপদেশ দিল ওর কথা বিশ্বাস করিসনা। সবাইকেই সে একই কথা বলে।

প্রেমিক হিসেবে আমি নাকি মোটেও বিশ্বস্ত নই। কি সাংঘাতিক কথা! অগত্য কি আর করা! আমি ধরা খেয়ে গেলাম। বউয়ের এমনিতে ছুটির দিন শুক্রবার। আজ কি কারণে যেন তার “অফ ডে” তাই কলেজে যেতে হবেনা। গতকাল বিকেলে আবার ঠিকা বুয়াটা আসেনি তাই রাতের খাবার বাড়ীর গেটের সামনের স্টার কাবাব থেকেই জুটিয়ে নিয়েছি।

বুয়া প্রতিদিন বিকেলে এসে রান্না করে দিয়ে যায়। সেই রান্না সেদিন রাতে ও পরের দিন দুপুরে খেতে হয়। ছুটির দিনগুলোতে আগের মতো আর রান্না করিনা। বয়স হয়ে গেছে তাই হয়তো অতটা উৎসাহ পাইনা। বিছানা থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করলাম।

তারপর একটু নেটে বসলাম। এমন সময় বউ এসে বললো আমি সব রেডি করে দিচ্ছি তুমি রান্না করবে নাকি? আমি বললাম করা যেতে পারে। তবে বেশী ঝামেলার রান্না করতে পারবোনা। অগত্যা দুজনে মিলে ঠিক করলাম আজ দুপুরের মেনু হবে- ভূনা খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা আর ডিমের দোপেঁয়াজা। বউ খিচুড়ির জন্য চাল ডাল ধূয়ে দিল।

ফ্রীজ থেকে ইলিশ মাছের গাদার অংশ বের করে ধূয়ে দিল। পেটির অংশটা আনারস-ইলিশের জন্য তুলে রাখা হলো। ফ্রীজ খুলে দেখলাম কিছুটা মুরগীর মাংশ আছে। সেটা বের করলাম। কাজের ছেলেটা পেঁয়াজ কেটে রেডি করে দিল।

শুরু হলো আমার রান্নার পালা। ইলিশ মাছের পিসগুলো সামান্য সর্ষের তেল, পরিমাণ মতো (আধা চা চামচ) লবন, হলুদ ও মরিচ গুড়া (আধা চা চামচ করে) দিয়ে মাখিয়ে রেখে দিলাম। এরপর ভূনা খিচুড়ি রান্না শুরু করলাম। সয়াবিন তেল ও বাটার (প্রায় দেড় কাপ) গরম হবার পর একে একে দারুচিনি, তেজপাতা, লবঙ্গ, এলাচ, পেয়াঁজ ও আদা-রসুন বাটা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কষালাম। মশলা মিশ্রণ একটু লাল হতেই চাল ও ডালের মিশ্রণ (৪ কাপ পোলাওর চাল, ২.৫ কাপ ভাজা মুগ ডাল ও ১ কাপ মশুরের ডাল) হাঁড়িতে ঢেলে বেশ কিছুক্ষণ কষিয়ে নিলাম।

এর পর আন্দাজ মতো গরম পানি (১৫ কাপের মতো) ঢেলে পরিমাণ মতো লবণ, ১ চামচ চিনি ও ১৫/২০ টা কাঁচা মরিচ দিয়ে আস্তে আঁচে ঢাকনা দিয়ে রাখলাম। পানি একটু কমে এলে চাল-ডালগুলো একটু উপর-নীচ করে নেড়ে দিয়ে আবার ঢাকনা দিয়ে দিলাম। এরপর পানি শুকিয়ে এলে একদম ঢিমে আঁচে খিচুড়ি চূলোর উপর রেখে কিছুক্ষণ পর নামিয়ে নিলাম। খিচুড়ি রান্না শেষ। এরপর ফ্রাই প্যানে এক কাপ পরিমাণ সয়াবিন ও সর্ষের তেল মিশিয়ে ইলিশ মাছগুলো ভেজে নিলাম।

মাছ ভাজা শেষ হলে একটা ডিশে মাছগুলো সাজিয়ে নিলাম। তারপর মাছভাজা তেলে ১ কাপ পরিমাণ পেয়াঁজ কুচি ও ৪/৫টা কাঁচামরিচ হাল্কা ভেজে ভাজা মাছের উপর ছড়িয়ে দিলাম। এরপর একটা কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে সেদ্ধ ডিমগুলো একটু ভেজে নিলাম। সেই তেলে পেয়াঁজ কুচি ও কাঁচামরিচ হালকা ভেজে আগের রান্না করা মুরগীর মাংশটা ভাল করে কষিয়ে তাতে ডিমগুলো ছেড়ে দিলাম। ব্যস্ হয়ে গেল আমার ছুটির দিনের ঝটপট রান্না।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আজকের এই রান্নার স্বাদ আপনাদের কারো সাথে শেয়ার করতে পারলাম না। তবে ছবিগুলো দিয়ে দিলাম। ছবি দেখে অনুমাণ করে নেবেন রান্নাটা কেমন হয়েছিল। সবাই ভাল থাকুন। ছুটির এই মেঘলা দিনটা সবার ভাল কাটুক।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।