কোন আপডেট নেই।
অনেকদিন কোন রকমের ঝাকি দেওয়া টাইপ কোন অসুখ-বিসুখ হচ্ছিল না। সেমিস্টারের মাঝে আর কালান্তক মিডটার্মগুলোর আগে কত কপালওয়ালাকে দেখলাম ইতং-বিতং অসুখে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে আরাম করছে। কিন্তু পোড়া কপাল আর বেওয়াকুফ ইমিউন সিস্টেমটার জন্য ঝাঁঝড়া হয়ে যাওয়া সৈনিকের মত ধুঁকতে ধুঁকতে কোন মতে সেমিস্টার টা শেষ করলাম।
৭ তারিখে শেষ দুটো ফাইনাল ছিল।
একটা সকাল আটটায়, আরেকটা সন্ধা ছয়টায়। পুরো সেলুকাসীয় রুটিন। রেজিস্টার অফিসের যে হনুমান আর লংকার রাবণের বাচ্চাগুলো এধরণের রুটিন সেট করে, সবগুলোর গুস্টিশুদ্ধ গালি দিতে দিতে ৭ তারিখের ভোরে বিছানা ছাড়ি। সকাল সাতটায় যখন পিঠে আমার "গন্ধমাদন পর্বত" টা চাপিয়ে বের হচ্ছিলাম তখনই কেমন যেন মাথা ভারী আর চোখ জ্বলা ভাব হচ্ছিল। পাত্তা না দিয়ে কোন রকম শীতের কাপড় ছাড়াই রাস্তা দিয়ে ট্রেকিং করা স্টাইলে হাটা দিলাম।
এই বছরে শীতের কাপড়ের প্রয়োজনটা প্রথম খুব অনুভব করলাম মাইকেল শুমাখার এর মিশুক এ বসে। সকালের বাস মামা মনে হয় শীতের প্রথম আমেজটা উপভোগ করায় ব্যাস্ত। তাই বাধ্য হয়েই সকাল সাতটায় এই তিন চাকা ছাড়া কোন গতি নেই। এতদিন জানতাম মিশুক রাস্তার অলসতম পিচ্চি। কিন্তু আজকে দেখছি মাইকেল শুমাখার ফর্মুলা ওয়ান বাদ দিয়ে ঢাকায় ঈদের আগের পার্ট টাইম মিশুক রেসিং এ এসে গিয়েছে।
না হলে এই গতি বেসম্ভব।
মোটামুটি পেটের ভেতর সাত তারিখ সকালের প্রায় অর্ধেক কুয়াশা নিয়ে ঠান্ডা মাথার সাথে সাথে ঠান্ডায় শক্ত হয়ে যাওয়া অঙ্গপ্রতঙ্গ নিয়ে পরীক্ষা দিতে বসেছিলাম।
এরপর দিনের বাকী পরীক্ষাটার জন্য অপেক্ষার সাথে সাথে অনুভব করছিলাম চিন্তাগুলো ঘোলা হয়ে আসছে আর শরীরটা ভারি। ...কোনমতে যখন সন্ধার পরীক্ষাটা শেষ করলাম তখন আমি আর আমার নাই। পিঠের ব্যাকপ্যাকটাকে মনে হচ্ছিল আমার নিজের থেকেও ভারী।
...কোনমতে বাসায় ফিরে আসি।
বেশ বুঝতে পারছিলাম ...অবশেষে একটা কিছু হচ্ছে। ঔষধ রাখার বাক্স থেকে নাপার স্ট্রিপ টা খুজে নিয়ে গোলাবারুদ সহ প্রস্তুত হয়ে গেলাম। ফ্র্রিজ থেকে আমার প্রাগৈতিহাসিককালে রান্না করা খাবারগুলো গরম করে যখন খেতে বসলাম... বুঝতে পারলাম... জ্বর আসার আগের মুখ তেতো ফেজ এ আমি অলরেডি পৌছে গেছি। কোন মতে কিছু পেটে দিয়ে নাপার প্রথম গোলাটা বর্ষন করে বিছানায় গেলাম।
...আহ জ্বর। ...সে জ্বরের কোন মাত্রা ছিল না। ৭ তারিখ রাত, আট তারিখ আর ৯ তারিখ দুপুর পর্যন্ত... যে কোথা দিয়ে গেল ....কিছুই বুঝতে পারলাম না। ....শুধু একটাই অনুভূতি ছিল ....সেটা হচ্ছে .... শূণ্যতা আর অতল শূণ্যতায় তলিয়ে যাওয়া। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল যেন আমি কোন একটা হাল ছাড়া নৌকায় করে শূণ্যতার মাঝখানে ভেসে চলেছি।
...কোন যন্ত্রনা না, কোন ক্ষুধা-পিপাসা না ....শুধুই ভেসে যাওয়া।
৯ তারিখ দুপুরে মনে হয় গরু-ছাগলের রক্ত-মাংশ নিয়ে মানুষের কামড়া-কামড়ি দেথে বিরক্ত ইশ্বর আমার দিকে নজর দেবার ফুসরৎ পান। কয়েকদিন আমার কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে এই শহরে আমার একমাত্র "হয়ত" বন্ধুটা আমার খোঁজ নিতে এসে তার স্বভাবমত দরজার বেলের উপর শতাধিক (কিংবা ততোধিক...) খোচাখুচি করে আমার ঘোর ভাঙ্গায়। ...আমি যে চেহারা নিয়ে তাকে দরজা খুলে দিয়েছি ...নির্ঘাত বেচারা ভয় পেয়েছিল। এরপর আবার বিরতি।
ততক্ষণে চারপাশে বেশ কিছু রাবণ জুটে গিয়েছে। সবগুলোই ক্লাসের রাবণ। পরের দুটো দিন এই রাবণের দল আমার যে পরিমাণ সেবা-যত্ন করেছে ...তাতে করে সবাইকে আমি মানপত্র লিখে কৃতজ্ঞতা জানানোর একটা পরিকল্পনা অলরেডি করে ফেলেছি। অবশ্য মানপত্রের ভাষা অবশ্যই ভদ্র সমাজে প্রকাশযোগ্য না।
সেবা যত্নের কয়েকটা নমুনা দেই।
....থার্মোমিটারে আমার ভয়াবহ বডি টেম্পারেচার দেখে সিনিয়র রাবণের পরামর্শমত আরেক রাবণ মাথার পানি দেবার নাম করে আমাকে পানির বালতিতে চুবিয়েছে। ...আরেকজন মাথায় আইস দেবার নাম করে মোটামুটি আইস এর বালিশ বানিয়ে সেটার উপর মাথা চেপে রেখেছিল। ...আমার এতটুকু শক্তি অবশিষ্ট ছিল না যে ...প্রতিবাদ বা বাধা দেব।
আরেক রাবণ ডাক্তার খুজে না পেয়ে তার মেডিক্যাল এ ইন্টার্ন ভাইকে নিয়ে এসেছিল। সেই রাবণশিরোমনীর পরামর্শ মতে আশু শরীরের হারানো শক্তি পুনুরুদ্ধারে আমাকে সবগুলো মিলে ডিম সেদ্ধ চেপে ধরে খাইয়েছে।
যার ফলাফল ....সুক্ষ রুচির পাঠকদের কথা মাথায় রেখে আর লিখলাম না। ....সব থেকে বড় সেবা যত্ন যেটা করেছে সেটা আমার রুমের আর আম্মুর রান্নাঘরের।
ঈদের পরের একটা প্রেজেন্টেশন শেষ করে ...পেপার জমা দিয়ে আমার বাড়ী যাবার কথা ছিল ১৩ তারিখ সন্ধায়। বাড়ীতে কাউকে জানাতে নিষেধ করেছিলাম। কারণ ঈদ আর কোরবানির ঝামেলায় এমনিতেই আম্মুর কাহিল অবস্থা।
তারপরও কোন এক বুরবক বাড়িতে খবর দিয়েছিল। ফলাফল ১১ তারিখ সকালে আম্মুর মুখ .....। ঈদে বাড়ী থাকলেও মনে হয় এত আনন্দ পেতাম না। পক্ষীমাতার মত করে আম্মু প্রায় ঘন্টাখানেক চেপেধরে রাখলেন। যদিও আগের কয়েকদিনের তুলনায় ওইদিন জ্বর কমছিল... তার পরও আম্মুর আল্হাদে আরেক দফা জ্বর এসে গেল।
....জ্বর নাকি ...ঝড় ....যেটাই গেল গত কয়েকদিন ধরে ....খারাপ ছিল না। .....ইনডিড ...ইট ওয়াজ নট ব্যাড। ....কারন >>এক. সেমিস্টার টা শেষ করে এসেছে। >>দুই. বহুদিন পর এমন শিশু শিশু দূর্বলতা অনুভব করছি। >>তিন. জ্বরের কারণে, বা কোন একটা ঔষধের কারণে আমার চন্দ্রবদন ফুলে ফুটবল আকার ধারণ করেছে।
যতবার দেখি... নিজেরই হাসি পায়। >>চার. রাবণের গোস্ঠির প্রকৃত পরিচয় পেলাম। ... .... রাবণেরা আমার... আগের জন্মে... কোন না কোন ভাবে তোমরা আমার ভাই ছিলা। ....নো ডাউট এব্যাট ইট। >>পাঁচ. বহুদিন পর আম্মুর এমন আদর পাচ্ছি।
....অবশ্য ঝামেলাও পোহাচ্ছি। আমার বিছানা থেকে ওঠা প্রায় নিষিদ্ধ। কম্পিউটারের সামনে বসছি লুকিয়ে। আমার ঘর ...আপাতত সর্বপ্রকার কিতাব শূণ্য। ...আর আম্মু খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে ....খুবই যন্ত্রনা দিচ্ছেন।
কষ্টও আছে.... গত কয়েকদিন কিছু লিখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ...কি বোর্ডের কী গুলোকে আঙ্গুলের মাথায় পুরোপুরি অপরিচিত লাগছে। অনেকগুলো জরূরী মেইল করেছি কষ্ট করে। ব্লগে ...কষ্ট করে মাত্র কয়েকটা কমেন্ট লেখার পরই দম ফুরিয়ে যাচ্ছে। ....আর ...যক্ষারুগীর মত ভয়াবহ কাশি ... .... প্রতিবার বুকের খাচাটাকে ভয়াবহ ঝাকিদিয়ে বেঁচে থাকবার আনন্দটুকু বুঝিয়ে যাচ্ছে।
ছুটি শুরু হয়ে গেছে.... অবশেষে .... এটুকু কষ্ট মনে হয় ছুটির ঘন্টাটার জন্য করাই যায় ।
... ...এই পেচালি নামক আবর্জনাটুকুছিল দীর্ঘ জড়তা শেষের ....ওয়ার্ম আপ।
...ঝুইল্লা আছি.... ভাল থাইকেন বাহে।
....ইনডিড.... লাইফ ইজ .....................ওয়ানডারফুল।
কারণ ...চারপাশে ....অসংখ্য ....চমৎকার সব মানুষ লুকিয়ে আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।