আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছুটির রোজনামচা

Do not pray for easy lives. Pray to be stronger men. "Do not pray for tasks equal to your powers. Pray for powers equal to your tasks. Then the doing of your work shall be no miracle, but you shall be the miracle. " --Phillips Brooks

অফিস থেকে দু'দিন ছুটি নিয়েছিলাম। সেটাই একটা কাহিনী হয়ে গেল। ছুটির দিনে ৩-১০-১৩ বুধবার ছুটির দিনগুলো শুরু হয় একদম ঝরঝরে মন নিয়ে। সকাল সাতটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলেও মন খারাপ লাগে না। বরং দাঁত ব্রাশ করতে করতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালে মনে হয় - বাহ! আজকের সকালটা খুব সুন্দর! কেমন ঝকঝকে রোদ উঠেছে।

বাতাসটাও কেমন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা, গায়ে আরাম লাগছে। বারান্দা থেকে আকাশটা পরোপুরি দেখা যায় না। কিন্তু যে এক চিলতে আকাশ দেখা যাচ্ছে সেটাই মনটাকে পবিত্র করে দেয়। কেমন যেন ফুরফুরে একটা অনুভূতি হয়। কিছুদিন আগে বাম চোখে একটা মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলাম।

এখন সেই আঘাত সেরে গেছে, তারপরও মাঝে মাঝে চোখটায় সব কিছু কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকার লাগে। ফর্সা রোদেও অন্ধকার অন্ধকার ছোট্ট আকাশটা দেখতে কারো ভালো লাগার কথা না, কিন্তু আমার খুব ভালো লাগে। জীবনটাকে পরিপূর্ণ মনে হয়। আমাদের বাসায় শুক্রবারে প্রায়ই খিচুড়ি রান্না হয়। এই খিচুড়ি ছুটির দিনের স্পেশাল মেন্যু।

গরম খিচুড়ি, ডিম ভাজি আর টলটলে পাতলা ঝোলের মুরগীর মাংস – একদম বেহেশতি নাস্তা। আয়েশ করে নাস্তা খেতে খেতে পেপার চলে আসে। নাস্তা শেষ পেপার পড়তে পড়তে চলে আসে এক কাপ গরম চা। চায়ে একটা চুমুক দিয়ে তৃপ্তির একটা “আহ!” চলে আসে সাথে সাথে। নিজের সুখ দেখে নিজেরই হিংসা লাগে মাঝে মাঝে।

কি যে আরামে আছি! আজকেও ঠিক এমন আরাম দিয়েই সকালটা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আরামে ব্যাঘাত ঘটালো গতবছর শিলং ট্যুরের একটা ছবি। ছবিটায় ট্যুরে যে আটজন গিয়েছিলাম তারা বিখ্যাত Elephant Fall এর সামনে একজন আরেকজনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখে অমলিন খুশীর হাসি। আনন্দের মুহূর্তে তোলা ছবি তবুও ছবিটা দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।

গত বছরগুলোতে ঈদের ছুটিতে কিভাবে কিভাবে যেন দু’বার ইন্ডিয়া বেড়ানোর সুযোগ হয়ে গিয়েছিল। প্রথমবার গিয়েছিলাম দার্জিলিং আর তার পরেরবার শিলং। এবার তাই সারাবছর ধরে অপেক্ষায় ছিলাম, কবে ঈদের ছুটি পাবো আর আবার একটা আনন্দে ভরপুর ট্যুর দিতে পারবো। কিন্তু মনে হচ্ছে এবার ঈদে আর কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। তারমানে আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।

পারবো তো? বাইরে ঝকঝকে রোদ উঠেছে। রোদটা কেমন যেন অসহ্য লাগছে। খেলা ৩১-১০-১৩ বৃহস্পতিবার মানুষ ফোন করে প্রথমে হ্যালো দিয়ে শুরু করে। নেতাজী সবসময়ই ব্যাতিক্রমী মানুষ। তিনি কথা শুরু করলেন প্রশ্ন দিয়ে, “খেলা দেখতে যাবি?” “হ্যাঁ।

” উত্তর যেন রেডি করাই ছিল। অবশ্য আর কিছু বলার কোন অপশনই ছিল না। রুম্মন বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ দেখতে গিয়েছিল। খেলা দেখতে যাওয়ার সুযোগ আমারও ছিল। অফিসের ব্যস্ততা আর খানিকটা আলসেমির অজুহাতে আর যাওয়া হয়নি।

কিন্তু প্রথম খেলায় দারুণ পারফরমেন্স দেখিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম আমার এই “না যাওয়া” কে শেষ পর্যন্ত আফসোসে পরিণত করে ছাড়ল। অবশ্য খেলা দেখতে যাইনি সেটা কোন ব্যাপার না। বেশিরভাগ সময় এমনই হয়। মাঠে এতো ঝামেলা করে খেলা দেখার চাইতে বাসায় শুয়ে বসে টেলিভিশনে খেলা দেখতেই আমার কাছে বেশী ভালো লাগে। খেলা শুরু হওয়ার আগেই অন্তুর সাথে যোগাযোগ করে আমি ওর বাসায় চলে গিয়েছিলাম।

একা একা খেলা দেখার চাইতে, দু’চার জন মিলে খেলার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে খেলোয়াড়দের জাতি গুষ্টি উদ্ধার করার মজাই আলাদা। আমরা সবাই জানতাম যে রুম্মন খেলা দেখতে গিয়েছে। অবশ্য রুম্মন খেলা দেখতে গেলেও আমাদের কিছু আসে যায় না। যেতেই পারে। প্রায়ই যায়।

কিন্তু মঙ্গা দেশের বজ্জাত ছেলেটা খেলা শেষ হওয়া মাত্র আমাদের কলিজা অঙ্গার করে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিল – “মাঠে গেলাম জিতে বের হইলাম। ” রুম্মনের স্ট্যাটাস পড়ে আমাদের সবার মাথা খারাপ হয়ে গেল। এই স্ট্যাটাসের মানে কি? রুম্মন কি আমাদের থ্রেট করছে, যে আমরা গেলে জিতে বের হতে পারবো না? আমরা সবাই ভয়াবহ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। সর্বনাশ হয়ে গেল তো! এখন তো মাঠে গিয়ে না জেতার আগ পর্যন্ত রুম্মন কানের কাছে একই কথা বলতে থাকবে “মাঠে গেলাম জিতে বের হইলাম...মাঠে গেলাম জিতে বের হইলাম...”। আর হেরে গেলে তো গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

পরদিন খেলা। অস্থির একটা অবস্থা। এর মধ্যে টিকিট নিয়ে একটা হুলুস্থুল বেঁধে গেল। সন্ধ্যায় অন্তু জানালো পারলাম টিকিট পাওয়া যায়নি। আশা আছে বলে অন্তু আমাকে সান্ত্বনা দিল।

টিকিট পাওয়া না গেলে আর কি করা যাবে? পরদিন (অর্থাৎ যেদিন বাংলাদেশের সেকেন্ড ওয়ান ডে) সকাল দশটায় অন্তু বলল যে টিকিট পাওয়া গেছে, তুই রেডি হয়ে চলে আয়। হা হা হা! আর কি লাগে? আমি, অন্তু, সামী আর সানি নাচতে নাচতে “মাঠে গেলাম, জিতে বের হইলাম। ” বেড়ানো ১-১১-১৩ শুক্রবার আগে থেকেই ঠিক ছিল শুক্রবার আমরা মানিকগঞ্জ জমিদারবাড়ি বেড়াতে যাবো। হুট করেই বেড়াতে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বলে আগেভাগে কাউকে জানানোর সুযোগ হয়নি। বেড়ানোর ব্যাপারে রাজর্ষি কখনো না করে না তাই ওকেই আগে জিজ্ঞেস করলাম।

কিন্তু রাজর্ষি জানালো শুক্রবার ওর কাজ আছে, যেতে পারবে না। ফুয়াদ আর অন্তুকেও জিজ্ঞেস করলাম। অন্তুর কি যেন ব্যবসায়িক কাজ আছে, কার সাথে দেখে করতে হবে – ও যেতে পারবে না। আর ফুয়াদের মাঝে মাঝে আধ্যাত্মিক সমস্যা হয়। ব্রেন ঠিক মতো কাজ করে না।

এই অবস্থায় ওকে নিয়ে ঢাকার বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না বলে ওকেও লিস্ট থেকে বাদ দিতে হল। এরমাঝে রুম্মন ফোন করে জানালো যে রুম্মন আর মারাজ যাবে আমার সাথে। গতরাতে খেলা দেখে স্টেডিয়াম থেকে বের হওয়ার পর সানি চা খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। মাঠে লুকিয়ে সিগারেট নিয়ে যাওয়া যায়, কফিও পাওয়া যায়; কিন্তু রাস্তার পাশে টং দোকানে দোস্তোর টাকায় একসাথে চা আর সিগারেট খাওয়ার মজাই অন্যরকম। তাছাড়া রাস্তা জুড়ে লক্ষ কোটি উৎফুল্ল জনতা হৈচৈ করছে।

কেমন যেন উৎসব উৎসব ভাব। দেখতে ভালোই লাগছে। বিরাট হৈচৈ এর মাঝেই একটা দোকানে চা-সিগারেট খেতে দাঁড়ালাম। চা খেতে খেতে সানিকে মানিকগঞ্জের কথা বললাম। সানি সাথে সাথে রাজি হয়ে গেল।

কথা ছিল শুক্রবার সকালে নয়টার মধ্যে সবাই শ্যামলী চলে আসবে। রুম্মন খোঁজ নিয়েছে, মানিকগঞ্জে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কে যেন থাকে। আমরা মানিকগঞ্জ পৌঁছে তার বাসায় যাবো। সেখানে দুপুরে খেয়ে তারপর যাবো জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়ি দেখে দিনের আলো থাকতে থাকতে ঢাকায় ফিরে আসবো।

রুম্মনের নয়টা বাজল সাড়ে এগারোটায়। আর দেরি না করে বারোটার মধ্যে আমরা রওনা দিয়ে দিলাম। ওখানে পৌছালাম দুপুরে। বাস স্ট্যান্ডের কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিয়ে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রওনা দিলাম। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে পারলাম নেট থেকেঃ “বালিয়াটি রাজপ্রাসাদ চত্বরটি চারদিকে উঁচু প্রাচীর পরিবেষ্টিত ৫.৮৮ একর জমির উপর অবস্থিত।

এখানে ৭ টি প্রাসাদতুল্য দক্ষিণমূখী ইমারত ২০০টি কক্ষ ধারণ করে আছে। এছাড়া অন্যান্য স্থাপনাও রয়েছে। খ্রিস্টীয় উনিশ শতকে ইমারতগুলো ঔপনিবেশিক স্থাপত্যিক গঠন কৌশলে নির্মিত। বালিয়াটি জমিদারদের পূর্বপুরুষ গোবিন্দ রাম সাহা ছিলেন একজন ধনাঢ্য লবণ ব্যবসায়ী। তার পরবর্তী বংশধরগণ এসব ইমারত নির্মাণ করেন।

এরা হলেন যথাক্রমে দাধি রাম, পণ্ডিত রাম ও গোলাপ রাম। এদের বংশধরগণ বালিয়াটি ভবনগুলো ছাড়াও এ অঞ্চলে এবং রাজধানী ঢাকায় বিদ্যালয়য়, দাতব্য চিকিৎসালয় ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকার বিখ্যাত জগন্নাথ কল্যাণ এদেরই বংশধর বাবু কিশোরী লাল রায় নির্মাণ করেন। বালিয়াটি প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় একটি দৃষ্টিনন্দন রংমহল রয়েছে। এ রংমহলে জমিদার পরিবার ব্যবহৃত নিদর্শনাদি প্রদর্শিত হচ্ছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বালিয়াটি প্রাসাদের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৬৮ সালের প্রত্নসম্পদ আইনে ১৯৮৭ সালে এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে। ” বালিয়াটি জমিদার বাড়ি পৌঁছে এবার আমাদের অবাক হবার পালা। দারুণ সন্দর ছিমছাম সাজানো, গোছানো জায়গা। কিছু রেস্টোরেশনের রাজ চলছে। তবে এখন পর্যন্ত যে এটা ধ্বসে পড়েনি সেটা ভেবেই অবাক লাগছে।

আমার বন্ধু বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার সানি তার ক্যামেরা নিয়ে মাঠে নেমে গেল। তার কিছু ছবি বিনা অনুমতিতে শেয়ার করলাম। বাম থেকে - রু্মন, মারাজ আর আমি। এসব পুরাকীর্তির কথা বিদেশীরা জানলে হয়তো অনেকে এখানে বেড়াতে আসতো। ওখান থেকে ফিরে আসতে আসতে আমাদের রাত নয়টা বেজে গেল।

বাসায় ফিরে ভালোই খুব ফ্রেস লাগলো অনেকদিন পর একটু ঘুরতে যেতে পেরে। চাকরি বাকরি আর ভালো লাগছে না। মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছে কেমন যেন শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে গেছি। কিভাবে যাবেনঃ (ব্লগ থেকে ধার করা) **ঢাকার গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ বা সরাসরি সাটুরিয়া যাওয়ার বাস পাওয়া যাবে। জনট্প্রতি ভাড়া পড়বে ৬০-৭০ টাকা।

সাটুরিয়া পৌঁছে সেখান থেকে রিকশা বা লোকাল সিএনজিতে করে জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে। জনপ্রতি ভাড়া ১০টাকা। **বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রোববার পূর্ণদিবস আর সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও বন্ধ থাকে। ** জমিদার বাড়িতে প্রবেশের জন্য টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ১০টাকা।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।