রনিনিোরনোে্নোানোনো
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নের খেতাব দখল করবে কোন দেশ, জানা যাবে ১১ জুলাই। বিশ্বকাপের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে নানা চুলচেরা বিশ্লেষণও চলবে। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল, সবচেয়ে জনপ্রিয় অদ্ভুতুড়ে বাঁশি ভুভুজেলা। জনপ্রিয়তায় এই বাঁশি বোধহয় মেসি-ম্যারাডোনাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। আর এই সাফল্যে আনন্দের সীমা-পরিসীমা নেই নিল ফন শলকউইকের।
কে এই ভদ্রলোক? আর কেউ নন, তিনিই ভুভুজেলার উদ্ভাবক। আর জনপ্রিয় বাঁশিটির বরাত দিতে তার দোরে হতো দিয়ে পড়ে আছে রাশিয়া, ব্রাজিলের নানা সংস্থা। স্রোতের মতো টাকা ঢুকছে তার ভাড়ারে।
মজার এই বাঁশি তৈরির ইতিহাসও বেশ মজাদার। ১৫ বছর আগে স্যান্টোস কেপটাউন যুব দলের সঙ্গে বাটসউডের খেলা।
পিছিয়ে ছিল দল, গোল করে সমতা ফেরালেন ডিফেন্ডার শলকউইক। ব্যস। আর যায় কোথায়। খেলার পর তাকে ঘিরে চলল জনতার উদ্দাম নৃত্য। ভিড়ের মাঝে শলকউইকের চোখে পড়ল এক ব্যক্তির হাতে টিনের তৈরি বিরাট বাঁশি।
আওয়াজও তেমনই জোরদার। সঙ্গে সঙ্গে মাথায় নতুন বাঁশি তৈরির পরিকল্পনা ঝলসে উঠল প্ল্যাস্টিক কারখানার কর্মী শলকউইকের। মেতে উঠলেন নতুন বাঁশি তৈরির চেষ্টায়। সাফল্য না আসা পর্যন্ত রাতে ঘুম হত নাÑবলেছেন ৩৭ বছরের শলকউইক। কিন্তু সেই বাঁশি এখন বহু মানুষের রাতের ঘুম কেড়েছে।
সেজন্য তিনি ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন। কারণ রাতের কেপটাউনে অনেক সময়েই দুর থেকে কানে আসে ভুভুজেলার আওয়াজ। তবে এর প্রতিকারও বের করে ফেলেছেন শলকউইক। এখন হাজার হাজার ভুভুজেলা বিকোচ্ছে কানের ইয়ারপ্লাগ সমেত।
কিন্তু সাফল্য এত সহজে আসেনি।
প্রায় এক দশক আগে শলকইউক তৈরি করেছিলেন ভুভুজেলা। প্রথমে বাজারে এসেছিল ৫০০টি। কিন্তু ভালো বিক্রি হয়নি। কেটে যায় এক বছর। হঠাৎই একটি বাণিজ্যিক সংস্থা ২০ হাজার ভুভুজেলার বরাত দেয়।
তখন থেকেই কপাল ফিরতে শুরু করে শলকউইকের। কিন্তু এই বাঁশির ট্রেডমার্কও করাননি তিনি। কেন? বাঁশির আবার ট্রেডমার্ক হয় নাকি? কয়েকশো বছর ধরে তা তৈরি হচ্ছে। তবে তার সংস্থা মাসিনসেডানে স্পোর্টস ট্রেডমার্ক করে নিয়েছে ভুভুজেলা নামটিকে। সেটা ছাড়তে শলকউইক কোনও মতেই রাজি নন।
এখন আসল ভুবুজেলা জোগাড় করতে তার দরজায় লাইন দিয়েছে, রাশিয়া, ব্রাজিলের কয়েকটি সংস্থা। অবশ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ভুভুজেলা বিক্রির কমিশনভিত্তিক অনুমোদন পেয়েছে একটি জার্মান সংস্থা। আমেরিকার বোস্টনে রেড সক্স এবং অ্যারিজোনা ডায়মন্ডব্যাকের মধ্যে বাস্কেটবল খেলাতেও ভুভুজেলা তার আগমনবার্তা জানিয়ে দিয়েছে। তবে সবাই যে ভুভুজেলা প্রেমে মাতোয়ারা এমনটাও নয়। বিভিন্ন সম্প্রচারক সংস্থা তো তিতিবিরক্ত।
বি বি সি এ নিয়ে ফিফার কাছে অভিযোগ করেছে। প্রযুক্তির সাহায্যে ভুভুজেলার শব্দ বাদ দিয়ে ম্যাচ দেখানোর ব্যবস্থা করেছে ফ্রান্সের একটি সংস্থা। ফুটবলাররা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে পারছে না, রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে কোনও পরামর্শও শুনতে পাচ্ছে না। তারাও সমালোচনায় মুখর। গ্যালারিতে দল বেঁধে গান গাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না বিভিন্ন দলের সমর্থকরা।
তবে তারা ভুভুজেলা হাতেই আক্ষেপ মেটাচ্ছে। তবে ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার বা নোবেলজয়ী রেভারেন্ড ডেসমন্ড টুটুর সমর্থন শলকউইকের রাতের ঘুম নিশ্চিত করবে। বিশ্বকাপের সময় বিভিন্ন স্টেডিয়ামে ভুভুজেলা বিক্রি করতে শলকউইকের সংস্থা ১০০ জনকে নিয়োগ করেছে। এক দশকে তার সংস্থার মোট ব্যবসার পরিমাণ ৭০ লক্ষ র্যা্ন্ড। এর অর্ধেকই গত এক বছরে।
কী হারে ব্যবসার সম্প্রসারণ চমকে দেওয়ার মতোই। পাঁচ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে ছোট স্মারক ভুভুজেলা। দর্শক, পর্যটকরা দেশে ফেরার সময় ব্যাগে একটা, দুটো করে যে ভুভুজেলা ঢুকবে, তা নিয়েও সন্দেহ নেই। ব্রিটেনের একটি সংস্থা ইতিমধ্যেই ৪৩ হাজার ভুভুজেলা বিক্রি করেছে বলে দাবি করেছে। প্রতিটির দাম দুই পাউন্ড।
খোদ দক্ষিণ আফ্রিকায় অন্তত ২০ লক্ষ আসল ভুভুজেলা বিক্রি হয়েছে। বলে ধারণা শলকউইকের। তার মতে এ দেশে ১১টি ভাষা রয়েছে। অনেক ভাষার কথা, গান অন্যরা বুঝতে পারে না। কিন্তু একটাই আওয়াজ তাদের পরস্পরকে মিলিয়ে দেয় সেটা ভুবুজেলার|
--btimes.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।