শিক্ষকদের দলাদলি আর ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে স্থবির হয়ে হয়ে পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। গত বুধবার থেকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষকদের একাংশ তাকে অবরুদ্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ উপাচার্যের পক্ষ নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করছেন।
গত বছরও একইভাবে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছিলেন জাবি'র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান।
তার জায়গায় গত বছরের ২০ জুলাই উপাচার্যের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় তিনিও আন্দোলনের মুখে পড়লেন।
‘সাধারণ শিক্ষকদের' ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ গত বুধবার থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের মুখপাত্র অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, ১২ দফা অভিযোগের ভিত্তিতে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ চান। এরমধ্যে গুরুতর তিনটি অভিযোগ হলো ছাত্র ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম এবং শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী ছাত্রদের রাজনৈতিক কারণে বিচার না করা।
উপাচার্য পতদ্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।
জবাবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। তিনি টেলিফোনে বলেন, সরকারের শেষ সময় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা তথাকথিত আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এর আগে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক উপাচার্যের কিছু অনুসারী। তবে এই অযৌক্তিক আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করবেন না।
এর আগে তিনি এই শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের অভিযোগের সন্তোষজনক জবাব দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ বললে তিনি পদত্যাগে প্রস্তুত আছেন বলে মন্তব্য করেন।
এদিকে শিক্ষকদের আরেকটি দল এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক কর্মসূচি মন্তব্য করে অবরোধ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। ‘শিক্ষক মঞ্চের' ব্যানারে ওই দলটির মুখপাত্র অধ্যাপক ড. নাসিমা আখতার হোসেন বলেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরা যে অভিযোগ তুলেছে তার কোনো ভিত্তি নেই। অভিযোগের তদন্ত কমিটিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকরাও আছেন।
তারাই তদন্ত শেষ না করে ঝামেলা পাকাচ্ছেন। তিনি বলেন, কিছু শিক্ষক দলীয় কারণে বারবার আন্দোলন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ‘প্রোবলেম ইউনিভার্সিটি'তে পরিণত করছেন। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এদিকে সমস্যা সমাধানে উভয় পক্ষই শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, শিক্ষামন্ত্রী সংকট নিরসনে তাদের সঙ্গে যে কোনো সময়ে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন।
আর উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য শিক্ষামন্ত্রীকে দ্রুত ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ব্যবস্থা করতে বলেছেন, তাকে পদত্যাগ করতে বলেননি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বিঘ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক আশা নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু, ভর্তির পর থেকে খুব কম সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতিশীলতা দেখেছি। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের চেয়ে শিক্ষকদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব -সংঘাত বেশি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।