হঠাৎ শুন্যতা ...................
সামনে নির্বাচন। তাই চাটাই গুলোর আকার ছোট করে করা হয়েছে যাতে তার উপরে পোস্টার সাঁটানো যায়।
আইয়্যুব মহা সমস্যায় পড়লো। হিসাব শাস্ত্রে তার মেধা একেবারেই কম। তাই নতুন ছোট আকারের চাটাই কি আকারে মিলবে তা সে বুঝে উঠতে পারছে না।
যে কাজ সে করে তাতে বাঁধা দর। এর পর খরিদ্দার যদি মন তরল থাকে তাহলে বাড়তি কিছু আয় উপার্জন হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার উপার্জন ভালোই হয়। কারণ তার খরিদ্দার খরচ টা এক কালীনই করেন কি না। এই খরিদ্দার উঁচু তলার মানুষ বলেই মনে হচ্ছে।
উপার্জন খারাপ হবে না।
আইয়্যুব শঙ্কিত মুখে হিসাব করে। ঘরটা বানাতে প্রায় ২০ টা বাঁশ লাগবে। বাঁশটাও পড়েছে পাতলা পাতলা। হিসাবে গড়বড় হয়ে যাবে।
আর চাটাই লাগবে ১৬ টা। সে আশা করছে এতেই কাজ হবে। বাঁশ গুলো ফেলে সাজায় সে। তার উপরে খুব সাবধানে চাটাই গুলো বিছাতে থাকে। খরিদ্দারের নজর এড়ায় না বিষয়টা।
“কি মিয়া? বাঁশ এতো সরু ক্যান? পুরাটা ঢাকতে পারবা মিয়া? চাটাইয়ের সাইজ ও তো ছোট”।
“স্যার...সামনে নির্বাচন। । এর ল্যাইগা চাটাইয়ের সাইজ ছোট হয়া গেসে...আর বৃষ্টি-বাদলার দিনে ভালো বাঁশ কই পাইবেন কন?”... “চিন্তা কইরেন না স্যার...গুছায় কাজ করমু... সমস্যা হইব না...”
আইয়্যুবের সকল শঙ্কা ভুল প্রমাণ করে ১৬ টা চাটাইয়ে ঘর টা ছেয়ে যায়। আইয়্যুব হাল্কা দম ছেড়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ায় খরিদ্দারদের আনুষ্ঠানিকতা সারার জন্য।
মনে মনে অংকের হিসাব কষে দেখে ছোট চাটাইয়ের কারণে তার পকেট থেকে ২৬ টাকা দিতে হবে। কারণ সে খরিদ্দারকে হিসাব দিয়েছিল নিয়মিত চাটাইয়ের সাইজ হিসাবে। “হারামজাদা...” চাটাইয়ের দোকানি কে মনে মনে গাল দেয় সে। কিছু করার নাই। খরিদ্দার কে বুঝিয়ে বলতে হবে।
এই সব কাজে খরিদ্দার রা খুব বেশি দামা-দামি তে যায় না।
খরিদ্দারদের আনুষ্ঠানিকতা মোটামুটি শেষ সে এগিয়ে যায়। কোদালে কোদালে মাটি তুলে সে ঘরটাকে একটা আকার দেয়।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে খরিদ্দার অফিস ঘরের দিকে রওনা দিলে সে পিছন পিছন হাটা দেয়। মন বলছে নিরাস হওয়া কোন কারণ নাই।
১৮ বছরের অভিঙ্গতা তাই বলে। খরিদ্দারের চোখ পড়ে তার দিকে।
“কত দিমু?”
“স্যার... যে গ্যাসে সে তো ফিরা আইবো না...। কি কমু কন এই সময়ে?
... চাটাই বেশি লাগাতে খরচা বেশি হইসে...যা মনে চায় দিয়েন...তয় আপনেরা তো স্যার নিয়মিত আইবেন না...মুর্দার কবর তো আমাদেরই দেখন লাগবো...সেই হিসাব মত কিছু দিয়েন যাতে দেখভাল ঠিক মত করতে পারি”।
আইয়্যুব অপেক্ষা করতে থাকে... তার হিসাব বলে প্রাপ্তি নিশ্চিত...সে খরিদ্দারের মনের খুব স্পর্শকাতর যায়গায় হাত দিয়েছে...
খরিদ্দার বিমর্ষ চেহারায় সদ্য নির্মিত কবরের দিকে তাকায়।
আইয়্যুব অপেক্ষা করতে থাকে...।
আগের কিছু লেখা...
বনসাই : অণু গল্প
নাগরিকঃ অণু গল্প
এ্যাকাউন্টসঃ অণু গল্প
ডুবঃ অণু গল্প
ফেরাঃ অণু গল্প
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।