:) :D
আসসালামুয়ালাইকুম।
পবিত্র কুরাআন মাজীদের সূরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, "আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেন, পর্বতগাত্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু ঢালে গৃহ তৈরি কর, এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে চোষন করে নাও এবং চল স্বীয় রবের সহজ সরল পথে। তার পেট থেকে বের হয় নানা রঙের পানীয় যাতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে রয়েছে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শন। "কুরআন পাকের উল্লেখিত আয়াত দুটোতে যে মূল কথাটি বেরিয়ে এসেছে, তা হলো- মৌমাছির পেট থেকে নানা রঙের যে পানীয় বের হয় তা মধু।
আর এই মধুতে রয়েছে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার। বিশ্বের মুসলিম সমাজ বর্নিত আয়াত দুটোর বৈজ্ঞানিক সত্যতার কথা অকাট্যভাবে মেনে নিলেও অনেক জ্ঞানী-গুনী ও চিকিৎসা বিজ্ঞানি এত দিন মধুর রোগ প্রতিকারের ক্ষমতাকে নিছক বিশ্বাসের ব্যাপার বলেই গন্য করে এসেছেন।
যুগ পাল্টায়, জ্ঞান-বিজ্ঞান, গবেষনা ও প্রযুক্তির ক্রমোন্নতি ও অগ্রগতির কারনে অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মীয় বিশ্বাস আর বৈজ্ঞানিক যুক্তির মধ্যে বিরোধ ও সঙ্ঘাত ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। ঠিক এই কথার প্রতিফলন ঘটেছে বায়োকেমিষ্ট প্রফেসর পিটার মোলানের চিন্তাধারায়। তিনি বলেন, রোগ প্রতিকারে আদিকাল থেকে মধুর ব্যবহার এখন আর কোনো বিশ্বাসের ব্যাপার নয়।
রোগ প্রতিকারে মধুর আশ্চর্য ক্ষমতার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি এত মজবুত যে, তিনি মধু দিয়ে তার স্ত্রী এবং তার রোগ প্রতিরোধের গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন 'আমার স্ত্রীর একটি ফোঁড়া হয়েছিল। বাজারের প্রচলিত কোনো মলমই যখন ফোঁড়া সারাতে কার্যকর হচ্ছিল না, তখন আমি একদলা মানুকা(বিশেষ একধরনের মধু) মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে গলিয়ে স্বচ্ছ পাতলা কাপড়ের ওপর ঢেলে গজটি ফোঁড়ার ওপর বসিয়ে দিই। গলিত মধুর বিক্রিয়ার কারনে প্রয়োগক্রিত স্থানের কিছু অংশ পুড়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে মানুকা হানি ফোঁড়াসহ পোড়া ক্ষতস্থান অতি দ্রুত সারিয়ে তুলতে সক্ষম হলো'।
পিটার মোলান নিউজিল্যান্ডের ওয়াইকাটো বিশ্ববিদ্যালয়ের 'হানি রিসার্চ ইউনিট' এর ডাইরেক্টরদের মধ্যে একজন। তাদের গবেষনালব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিশ্বজুড়ে রোগ প্রতিকারে মানুকা হানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই দশক ধরে প্রফেসর মোলানের ল্যাবরেটরিতে মধুর জীবানুবিধ্বংসী গুনাগুন নিয়ে অধিকাংশ গবেষনা কার্যক্রম চলে আসছে। জীবানুনাশক হিসেবে মানুকা মধুর প্রতি আকর্ষন বাড়ার মূল কারন হলো বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক বর্তমানে বহু জীবানুর বিরুদ্ধে তাদের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। জীবানুর প্রতি ক্রমবর্ধমান অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
মানুকা মধু মেথিসিলিন রেসিস্টেন্ট জীবানু স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস কর্তৃক সংক্রমনের ফলে সৃষ্ট ক্ষত স্থান সারানোর ক্ষেত্রে বেশ ফলপ্রসু বলে প্রমানিত হয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে মানুকা ড্রেসিং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭ এ কানাডাতেও মানুকা ড্রেসিং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। ২০০৭ এর জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্র্যাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(এফডিএ)মানুকা ড্রেসিং বাজারজাতকরনের জন্য লাইসেন্স প্রদান করেছে।
......চলবে (৪ পর্বে সমাপ্ত)
রেফারেন্সঃ
প্রিয় শিক্ষক ড.মুনির উদ্দিন আহমদ
অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।