হতাশার চোরাবালিতে কোমর অবধি ডুবে,আশা তবুও হাতদুটো ছেড়ে দেয়নি... বহু প্রাচীনকাল থেকে মানুষ তার
অসাধারণ চিন্তাশক্তি আর
বুদ্ধিমত্তার গুণে নানান প্রাকৃতিক
উপাদান ব্যবহার করে অসংখ্য
সংক্রামক(Contag eous) রোগের
মোকাবেলা করেছে। শতবর্ষ
পূর্বে চীনে সয়াবিনের ছত্রাক
(Mould) আক্রান্ত
ছানা (Moldy Soybean Curd)
বিভিন্ন ফোঁড়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত
হত। চীনারা পায়ের ক্ষত সারাবার
জন্য ছত্রাক Mould আবৃত
পাদুকা (স্যান্ডল) পরত। কিন্তু বিংশ
শতাব্দীর আগে মানুষের
নানা প্রাণঘাতী রোগের জন্য
দায়ী সজীব উপাদানসমূহের অন্যতম
ব্যাকটেরিয়াদের অনেকগুলোকেই
শনাক্ত করা গেলেও এদের
বিরুদ্ধে সত্যিকারের যুতসই
হাতিয়ার দাঁড় করানো সম্ভব হয়
নি। ১৯২৮ সালে স্যার
আলেক্সাণ্ডার
ফ্লেমিং মানবজাতিকে দিয়েছিলেন
এক অসামান্য উপহার,পৃথিবীর
প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক
পেনিসিলিন(Penic illin)।
পেনিসিলি ন আবিষ্কৃত হয়েছিল
পেনিসিলিয়াম(Pen icillium)
নামের ছত্রাক থেকে। এরপর
অ্যন্টিবায়োটিক জগতে যোগ
হতে থাকে একের পর এক সদস্য।
তবে এগুলোর জন্য আমাদের সবসময়
ছত্রাকের
মুখাপেক্ষি হয়ে থাকতে হয়নি।
আমাদের ব্যবহার্য অনেক
অ্যান্টিবায়োটিক ই রাসায়নিক
সংশ্লেষণের
মাধ্যমে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
অ্যান্টিবারোটিক ের আবিষ্কার
চিকিত্সাজগতে সন্দেহাতীতভাবে হইচই
ফেলে দিয়েছিল,যার
ফলশ্রুতিতে ১৯৪৫ সালে ফ্লেমিং
আর্নেস্ট চেইন ও
ফ্লোরে নামের অন্য দুজন
বিজ্ঞানীর
সাথে চিকিৎসাবিজ্ঞানে
নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগের
চিকিত্সায়
শুরুর দিকে অ্যান্টিবায়োটিক ের
কার্যকারিতা ছিল যাদুমণ্রের মত।
নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়ার
বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট
অ্যান্টিবায়োটিক
প্রয়োগ করে পাওয়া যেত আশাতীত
ফল। কিন্তু আবিষ্কারের মাত্র
৮৪বছরের মাথায় অসংখ্য
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার
বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর
কারণ কি?
অ্যান্টিবায়োটিক হল
ব্যাকটেরিয়ার
প্রাণঘাতী বিষ। আর তাই এই বিষের
হাত
থেকে বাঁচতে ব্যাকটেরিয়া সর্বময়
পন্থা অবলম্বন করে।
প্রয়োজনে পাল্টে নেয় নিজের
শ্বসনের
পথ(Metabolic
pathway),অথবা পাল্টে দেয়
অ্যন্টিবায়োটিকে র কাজ করার
জায়গাটিকে নতুবা অ্যন্টিবায়োটিকে
র
বিরুদ্ধেই তৈরি করে বিষ। এই সমস্ত
ক্ষমতা ওরা অর্জন করে প্লাজমিড
(plasmi d) এর
গুণে। প্লাজমিড হল ব্যাকটেরিয়ার
সেসব
জিনের(Genes) আশ্রয়স্থল,
যেগুলো প্রয়োজনে পরিবর্তিত
(mutat ed) ও
ফলে শক্তিশালী।
একটি ব্যাকটেরিয়া যদি তার
ক্রোমোসোমে(Chro mosome)
কাংখিত পরিবর্তন(mutati
on)টুকু
আনতে পারে,তবে তা প্লাজমিডের
মাধ্যমেই
ছড়িয়ে দিতে পারে নিজের
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। এ ই
পুরো প্রক্রিয়াটা বর্তমান
বিশ্বে পরিচিত অ্যন্টিমাইক্রোব
িয়াল
রেজিস্টেন্স(Ant imicrobial
resistance) নামে।
এখন প্রশ্ন হল
প্লাজমিডে এত
প্রতিরোধ্যতা আসে কী কারণে?
আমরা এইমাত্র মূল
বিষয়টিতে ঢ়ুকে পড়লাম।
আমরা বলেছিলাম একমাত্র যথাযথ
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে যথাযথ
অ্যন্টিবায়োটিক ব্যবহারেই
যাদুকরী ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু আমাদের
ব্যবহারটা কি সবসময় যথাযথ?খুব
দুঃখজনকভাবে উত্তরটা হল-না। আর
বাংলাদেশের
প্রেক্ষাপটে বলা যায়,ফার্মেসিগুল
োতে প্রতিদিন
বিক্রি হওয়া অ্যন্টিবায়োটিকে র
প্রায় আশি ভাগই অযথাযথ ব্যবহার
(Irratio nal use)এর শিকার।
হয়তো একজন রোগীর আদৌ কোন
অ্যন্টিবায়োটিকে র প্রয়োজন
নেই,তবুও ডাক্তার সাহেব
প্রেসক্রিপশনে ঘসঘস
করে একটা অ্যন্টিবায়োটিক
লিখে দিলেন।
আবার হয়তো কাজ
করবে একটা,ডাক্তার লিখলেন অন্য
একটা। আবার এমনও
হয়,যদিওবা সঠিক
অ্যন্টিবায়োটিকট াই
লিখলেন,রোগীকে বলে দিলেন
না দিনে কয়বার আর মোট কতদিন
চালিয়ে যেতে হবে। এগুলোতো গেল
ডাক্তার সাহেবের দোষ। এখনকার
রোগীরা আবার ডাক্তারের
চেয়ে এক কাঠি সরেস। ডাক্তার
সাতদিনের অ্যন্টিবায়োটিক
দিলেন,তিনদিনের মাথায় একটু
আরাম পেয়ে ওষুধ বন্ধ করে দেন
নিজে নিজেই।
গায়েজ্বর আর
গলা ব্যথা?অমনি নিজে নিজেই
কিনে নিলেন
একপাতা নামজানা অ্যন্টিবায়োটিক।
যতদিন
ইচ্ছা চালিয়ে গেলেন,এরপরে নিজের
মর্জিমত বন্ধ করে দিলেন।
ডাক্তার বা রোগীরা যখন এ সমস্ত
ঘটনাগুলো ঘটাতে ব্যস্ত,তখন
ব্যকটেরিয়াও কিন্তু
থেমে থাকে না। যখন টের পায়
মারণবিষের উপস্থিতি,পরিমরি
করে শুরু করে দেয় পরিবর্তনের
কাজ। এরপর সেই পরিবর্তন এক
ব্যাকটেরিয়া থেকে অন্য
ব্যাকটেরিয়ায়
ছড়িয়ে পড়ে প্লাজমিডের মাধ্যমে।
আর এভাবেই আপনি যখন
একটি অ্যন্টিবায়োটিকে র
অযথাযথ প্রয়োগ করলেন,আপনি শুধু
নিজের শরীরেই এর
ব্যাকটেরিয়া বিরোধী ক্ষমতা নষ্ট
করলেন না,বরং ঐ
অ্যন্টিবায়োটিকক
ে সামগ্রিকভাবে একধাপ অকার্যকর
করে দিলেন। একসময় এই
অ্যন্টিবায়োটিকট ি ঠিক
এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে আর
কোন
ক্ষমতা দেখাবে না। আর
এভাবে চলতে থাকলে এখনকার
সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক
টাও আগামী ষাট বছরের
মাঝে যে কোন ব্যাকটেরিয়ার
বিরুদ্ধে অকার্যকর হয়ে পড়বে।
আশঙ্কার কথা হল একসময়কার অনেক
কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক ই এখন
সম্পূর্ণ অকার্যকর। অ্যন্ট
িবায়োটিকের Irrational use এর
ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মত
দেশগুলোর পরিস্থিতি বেশি নাজুক
হলেও উন্নত দেশগুলোও খুব
একটা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই।
এখন আমাদের করণীয় কী?
আমাদের সাধারণ মানুষের
যেটা করণীয়,সেটা হল ডাক্তারের
নির্দেশনার বাইরে কোন
অ্যন্টিবায়োটিক না খাওয়া। আর
ডাক্তার নির্দেশিত
অ্যন্টিবায়োটিকে র সঠিক
মাত্রা ও সেবনকাল ডাক্তারদের
কাছ থেকে ভালভাবে জেনে নেয়া।
আর একজন ডাক্তারের অবশ্যই উচিত
রোগীকে কোন অ্যন্টিবায়োটিক
দেবার আগে বারবার
ভাবা যে আদৌ কোন
অ্যন্টিবায়োটিকে র প্রয়োজন
আছে কি না। আর
এক্ষেত্রে ডাক্তারের পেশাগত
দক্ষতা আর বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত
দুটোই জরুরী।
প্রথম আবিষ্কারের পর থেকে আজ
পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক
বাঁচিয়ে এসেছে হাজার হাজার
মানুষের প্রাণ।
এখন সময়
এসেছে সেই ঋণ শোধ করার,সময়
এসেছে অ্যন্টিবায়োটিকক
ে বাঁচানোর। নতুবা আগামী কয়েক
দশকের মাঝে আমরা প্রবেশ করব
অ্যন্টিবায়োটিক বিহীন এক
যুগে,ঠিক প্রাক অ্যন্টিবায়োটিক
সময়ের মত। পার্থক্য হবে শুধু
এটুকুই,ব্যাকটের িয়ার
বিরুদ্ধে আমাদের নিজেদের
তৈরী অসাধারণ
একটি হাতিয়ারকে নিজেদের
হাতে ধ্বংস করে আমরা জেনেশুনেই
নিরস্ত্র হয়ে পড়ব।
ডিসক্লেইমার : পোস্টটির দৈর্ঘ্য
অনেক বেশি,তার ওপরে আবার
রসকষহীন। এর কিছু সংগৃহীত
হয়েছে উইকিপিডিয়া থেকে,আর
কিছু আমার ক্লাস লেকচার থেকে।
কাঠখোট্টা এই
পোস্টে কয়েকটা ছবি যোগ
করে একে রসালো করার ইচ্ছা ছিল।
কিন্তু মোবাইল থেকে ব্লগপোস্টের
সাথে ছবি সংযোজন করা দুঃসাধ্য
ব্যাপার। তারপরেও কেউ
পোস্টটি পড়লে আর
খানিকটা সচেতন হলে আমার
মোবাইলের পেছনে করা হস্তশ্রম
সার্থক। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।