বিশ্বকাপ আসন্ন। ব্লগে ব্রা আর আ নিয়ে যুদ্ধ। লুঙ্গী টানাটানি, বস্ত্রহরণ।
আমি কিন্তু খেলোয়াড়ের সাপোর্টার। বড় বড় নামীদামী খেলোয়াড় হলেই আমি তার ভক্ত।
দু’একটা ডকুমেন্টারী ছাড়া পেলের খেলা দেখার সুযোগ হয়নি। দেখিনি ভাভা-গারিঞ্চা জুটির দুর্ধর্ষ অ্যাটাক।
প্রথম বার যখন বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখি তখনও খেলা ভাল বোঝার বয়স হয়নি। আর্জেন্টিনা জিতলো, মারিয়ো কেম্পেস সেরা খেলায়াড় হলো। চোখ ধাধানো গ্যালারী ডিসপ্লে দেখে বুঝলাম পশ্চিমা বিশ্বের টাকার জোর কত।
এরপরের বিশ্বকাপে আমি প্রস্তুত। জিকো, ম্যারডোনা এদের দেখার জন্য আর তর সইছিলোনা।
প্রথম খেলায়ই অঘটন। বেলজিয়ামের আরউইন ভ্যানডেনবার্গের ২২ সেকেন্ডের গোলে আর্জেন্টিনা পিছিয়ে। আমিতো সাড়ে সাত লাখ ডলারের বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় ম্যারাডোনার কারিশমা দেখার জন্য উসখুস করছি।
অবশেষে খেলার শেষ দিকে কায়দামত জায়গায় আর্জেন্টিনা ফ্রী-কিক পেলো। দুজন খেলোয়াড় রেডী। তখন একটা প্যাটার্ন খুব বেশী হতো। দু’জনের একজন ডামী আর একজন রিয়েল। দু’জনই একসাথে দৌড় শুরু করতো এরপর ডামী বলের উপর দিয়ে চলে যেতো আর রিয়েল শট নিতো।
বা অনেক সময় প্রথম জনই শট নিতো। কখনও বা ডামী আলতো করে বলে টোকা দেয়ার পর রিয়েল কিক নিতো। এতে করে বেচারা গোলকিপার সবসময়ই কনফিউশনে থাকতো কার পা থেকে কোন দিক দিয়ে স্ট্রাইক হবে। অবাক হয়ে দেখলাম দু’জনের একজনও ম্যারাডোনা নয়। সে কিছুটা নিরাসক্তভাবে একটু দূরে দাড়িয়ে।
অবশেষে রেফারীর বাঁশি। দুই আর্জেন্টিনিয়ান দৌড়ে আসছে। হঠাৎ একি? দু’জনের মাঝে ধাক্কা লেগে গেলো। একে অপরের প্রতি রাগীভাবে হাত ঝাকিয়ে, কাঁধ নাড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ, যেন “এ তুমি কি করলে?” সম্বিৎ ফিরতেই সবাই বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করলো বল বাতাসে ভাসছে; অলরেডী চাইনিজ ওয়ালের মাথার ওপর দিয়ে বাঁক খেয়ে তা গোলে ঢুকে যাচ্ছে। দুই খেলোয়াড়ের নাটকের মাঝে কখন যেন ম্যারাডোনা কিক নিয়ে নিয়েছে।
হায় আফসোস, কয়েক সেন্টিমিটারের হেরফেরে বল ক্রসবারের ওপরের অংশে লেগে ছিটকে গেলো। আমরা দর্শকেরাও বঞ্চিত হলাম এক অবিস্মরণীয় গোল থেকে
এরপর জিকোর পালা। স্কটল্যান্ডের সাথে ফ্রী-কিকে দূর থেকে বাকানো শটে গোল দিলো। সবাই উৎফুল্ল, কিন্তু কেউই অবাক নয়। “সাদা পেলে” জিকো এমন গোল করবে এটাই তো স্বাভাবিক! এ দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি দেখেছি প্লাটিনি বেকহ্যামের শটে।
এ যেন কয়েক মুহূর্তের এক দৃষ্টিনন্দন জীবন্ত শিল্প! বাতাসে ভেসে বাঁক খেয়ে বলটা গোলে ঢুকে যাচ্ছে; সারা গ্যালারীর সাথে টিভি স্ক্রীণের কোটি কোটি দর্শক মুগ্ধচোখে তা চেয়ে দেখছে...
জিকোর সেই দুর্দান্ত খেলা দেখলাম, কিন্তু বেচারা ম্যারডোনা সেবার পর্যুদস্ত হয়ে বিদায় নিলো। কার্ল হেইন্জ রুমানিগা আহত। রসি মাঠে দুর্দান্ত ফর্মে।
ফাইনাল খেলার বিরতিতে বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের তিন ব্যক্তির বক্তব্য শুনলাম। প্রিয় ফুটবলার সালাহউদ্দীনের কথায় নড়ে চড়ে বসলাম (যদিও আমি মোহামেডানের সাপোর্টার)।
তিনি বললেন "আমি বুঝতে পারছিনা রসিকে ওরা এত ছেড়ে দিয়ে রেখেছে কেন?"
বিরতির পর আবার খেলা শুরু হওয়ার পর সালাহউদ্দীনের কথার সত্যতা পেলাম। আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে মনকে বোঝালাম যেহেতু রসি কেবল স্কোরার, তাই তাকে কেউ গার্ড দিচ্ছেনা। যারা গেম মেকার তারা ডিফেন্সের বাধা টপকে রসির পায়ে বল যোগান দিচ্ছেন। রসিরও ছিলো অদ্ভুত নির্ভুল নিশানা। কায়দা মত বল পেলেই হলো।
গোল করবেই! বুঝলাম সালাহউদ্দীনকে কেন বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় ধরা হয়!
পোল্যান্ডের এক ভাল খেলোয়াড় ছিলো। বিগ নিউ বনিয়্যাক (ZBigniew Boniac)। ধানমন্ডি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এক পোলিশ ছেলে বলেছিলো নামটাকে তারা জ্ বিনিয়েফ (zbinief) এ ধরণের উচ্চারণ করে।
এরপর আরো বিশ্বকাপ হলো। ফ্রান্স ব্রাজিলের সেই অবিস্মরণীয় ম্যাচ, প্লাটিনির খেলা, বাতিস্তা আরও কত কে? ম্যরাডোনার সেই চার জনকে কাটানো গোল দেখলাম, রজার মিলার অদ্ভুত পারফর্ম্যান্স, গিওর্গি/জর্জ হাজির দৃষ্টি নন্দন খেলা।
রবার্তো ব্যাজিওর একেবেকে কাটিয়ে গোল করা, পল গ্যাসকোয়েনের একাই একশো মার্কা স্ট্যামিনা, এন্জো শিফো, মার্কো ভ্যানব্যাস্টেন, রুড গুলিটের লম্বা চুল....
এখন আর খেলা দেখা জমে না। একা একা কি আর ফুটবল খেলা দেখে মজা পাওয়া যায় ।
আশা করছি এবারও নতুন নতুন বড় বড় খেলোয়াড়দের দেখবো। যে দলই জিতুক, নামীদামী স্টার পারফর্মারদের কথা আলোচনা হবে বহুদিন...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।