আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভিক্ষুকের শিশুটিও ভিক্ষুক হবার সবক নিচ্ছেঃ

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

ভিক্ষুকের শিশুটিও ভিক্ষুক হবার সবক নিচ্ছেঃ ধানমন্ডি দশ নাম্বর রোড থেকে সাইন্স ল্যবরেটরী-এলিফ্যান্ট রোড-কাঁটাবন-শাহাবাগ-মতস্য ভবন-প্রেস ক্লাব হয়ে পল্টন পর্যন্ত আমার অফিস চলার পথ। ফেরার সময় বেশীর ভাগ সময় একই পথ। তবে কখনো কখনো শেরাটন-বাংলা মটর হয়ে কখনো বসুন্ধরা সিটির রাস্তা অর্থাৎ পান্থপথ হয়ে রাসেল স্কয়ার মোড় থেকে বাম দিকের মিরপুর রোড ধরে কলাবাগান ক্রসিং দিয়ে আবার সেই ধানমন্ডি ১০ নম্বর রোড। ২০/২৫ বছর এই রাস্তায় চলতে চলতে পরিচিত হয়েছি হকার এবং হাত পাতা মানুষের সঙ্গে। সিগন্যালে গাড়ি থামলে এক ঝাঁক মানুষ দৌড়ে আসে।

ফুল হাতে শিশু-কিশোর, পত্রিকার হকার, পুতুলওয়ালা, ম্যাজিক বল বিক্রেতা, টাওয়াল বিক্রেতা, লেবু, পেঁপে, তরমুজ ও কুলসহ কুরআন শরিফ, ত্সলিমা নাসরিনের "নিষিদ্ধ" বই "অপেন" বিক্রেতা এবং যুবক বৃদ্ধ অন্ধ বিচিত্র রকম মানুষ। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার, যারা হাত পাতে তাদের দিতে থাকি সাধ্যমত পঁচা দু'টাকা পাঁচ টাকার নোট ড্যাস বক্সে থেকে। চেস্টা করি কাউকে খালি হাতে নাফেরাতে। যখন ব্যাগ শূন্য থাকে মাফ করুন বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেই। এভাবেই চলছিল, হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটলো।

এক বাবা-মা তাদের অন্ধ ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষা করছে সেই বাবা-মাকে বললাম ছেলেকে ঘরে রেখে কাজকর্ম করলেই পারেন, আপনাদের দুজনেরই কাজ করার শক্তি আছে। এভাবে দু'জনে রাস্তায় নেমে কি লাভ বলুন? অন্ধ ছেলেটির মা যে উত্তরটা দিলেন তাতে আমার ছোট ছেলে পুরো একটা মাস আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছিল। ভিক্ষুক মহিলা চেচিয়ে বললো-"তুই অন্ধ হবি, তুই এক মাসের মধ্যে অন্ধ হবি"। আমার ছেলে পুরো একমাস অবজার্ব করেছে আমি সত্যি অন্ধ হয়ে যাই কি না! আরও একদিন শেরাটন পেরিয়ে থেকে বাংলা মটর সিগনালে থেমে আছি। এক ইয়ং গালিবাজ ভিক্ষুক মহিলা যে কি না রোজদিন বিরক্ত করে-তাকে আমি কখনো ভিক্ষা দেইনা, সে বলে উঠলো-"লাত্থি মাইররা গারি ভাইংগা হালামু- ভিক্ষা দিবি না ক্যা"? গালিবাজ মহিলা ভিক্ষুক রীতিমতো হাত-পা ছোঁড়া শুরু করলো।

ঐ সময় ড্রাইভার সাথেছিল। ড্রাইভার ক্ষেপে উঠলো এবং জানালো- কদিন আগে এই ভিক্ষুক কোনো এক গাড়ির গ্লাস ভেঙে দিয়েছে। সাথে সাথে গালিবাজ মহিলা ভিক্ষুকটি বললো-"----- পুত, তোর মায়রে --- সেই সংগে ঐ অশ্লীল গালির বাস্তবতা অংগভংগী করে দেখাতে লাগলো! বিচিত্র সব ঘটনা। একদিন বেশ কজন ফকিরকে বলেছিলাম-আপনারা কাজ করেন, ভিক্ষা ছেড়ে দিন। কয়েকজন বল্লেন-"পুঞ্জি(পুঁজি)পাইলে খয়রাত করতো কোন হালায়।

গারির মদ্যে বইয়া বর বর কতা কয়েন-দেবেন ব্যবসার পুঞ্জী?" আমি যোগাযোগ করতে বলি- Uprooted Child Rehabilitation Foundation অফিসে। কয়েকজন যোগাযোগ করে। তাদেরকে ভিক্ষা নয়-সামান্য টাকা(দুই হাজার-তিন হাজার) পুঁজির সমমানের মালামাল কিনে দেয়া হয়। সেই সামান্য টাকার মালামাল নিয়ে একজন পুতুল বিক্রি করছে। একজন ম্যাজিক বল, একজন কলম-আরো কত কী! ওরা গাড়ীর জানালায় এসে বলছে-স্যার পুতুল,স্যার কলম, স্যার বেলুন, কিছুই না কিনে বললাম খুব ভাল লাগছে তোমরা এখন শ্রমজীবী মানুষ।

ওদেরকে কাজ করতে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। ওদের মুখে অনাবিল হাসি! ওরা শ্রমজীবী হয়েছে দেখে আমার খুব খুশী লেগেছে-কিন্তু আমি তো ওদের থেকে কিছুই কিনলাম না। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হলো আল্লাহর তৈরি ঐ বিশাল আকাশ আমাকে কষে দুটো চড় লাগালো। সারারাত ঘুমুতে পারিনি। আমি খুবই নগণ্য একজন মানুষ।

তবুও সমাজের প্রতি সমাজের মানুষের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু সেটা কী? অনেক চিন্তা-ভাবনা করে দেখলাম-এদেশে কোটিপতির সংখ্যা অনেক, দানশীল লোকও অনেক, যারা ইচ্ছা করলে পাল্টে ফেলতে পারেন এই চিত্র। সরকার এবং এদেশের ধনাঢ্য মানুষের জন্য আমার কিছু সুপারিশঃ- ১। প্রকৃত ভিক্ষুক যারা অন্ধ, ল্যাংড়া কিংবা বিকলাঙ্গ তাদের খুঁজে বের করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে নেয়া হোক। ২।

হকার শ্রেণীর মানুষকে ঢুকিয়ে দেয়া হোক বিভিন্ন কল-কারখানায়। ৩। এ কাজের জন্য উদ্যোগী হবে সরকার এবং অর্থ যোগান দেবেন ধনী শ্রেণীসহ দেশের নাগরিক এবং ব্যাংকগুলো। ৪। যারা মুসলিম তারা যাকাত থেকে দেবে, আর হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান এসব ধর্মেও দানকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে।

সরকার ঘোষণা দিলে পাঁচ টাকা, দশ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকাও দেবে মানুষ। ঐ যে খেটে খাওয়া রিকশাওয়ালা সেও দু'টাকা, পাঁচ টাকা দিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। অন্য চরিত্রঃ- এক মহিলা কোলে তার দু'তিন বছরের কন্যা। হাত পেতে মেকি কান্না কেঁদে বলেছিল-"ছারগো, আমার স্বামী হাসপাতালে সাহায্য দেন। " কোলে চড়া নিস্পাপ ফুটফুটে মেয়েটাও হাসতে হাসতে শিশুর চপলতা চোখে রেখে মুখ দুলিয়ে বললো-"ছারগো আমার স্বামী হাসপাতালে সাহায্য দেন"! কী ভয়ানক ব্যাপার আজ দু'তিন বছরের স্বর্গীয় আভা মাখা শিশুটি ফকির হবার, ভিক্ষুক হবার সবক নিচ্ছে।

সরকার যদি উদ্যোগী হন তাহলে আর কোনো সিগন্যাল পয়েন্টে এরা থাকবে না। পুলিশ কিংবা র‌্যাব এদের ধরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুরে দেবেন। রাস্তা থাকবে ফাঁকা আর ঐ মানুষগুলো বাঁচবে মানুষের মতোন। কাজ করে খাবে পুনর্বাসন কেন্দ্রে। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের কাজ দেয়া হবে।

তারা পাবে সুস্থ একটা জীবন। এই ঢাকা শহরে প্রকৃত ভিক্ষুকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। যার ব্যয়ভার এদেশের মানুষ আর সরকারি চেষ্টায় বহন করা সম্ভব।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.