মেহেদীর রং মুছতে না মুছতেই স্বামীর পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন গৃহবধূ আঞ্জুমান। নেশাগ্রস্ত স্বামী হাসান তার স্ত্রী আঞ্জুমানকে শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে, দাঁত দিয়ে শরীরের মাংস ছিঁড়ে, ছুরি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর আহত করেছে। আঞ্জুমান নওগাঁ সদর হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডের ৯০ নম্বর বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে সেই বিভীষিকাময় রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন।
জানা যায়, বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় হাসান যৌতুকের টাকা পাওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকে এবং তখন থেকেই আঞ্জুমানের ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। আঞ্জুমানকে কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না।
এমনকি মা-বাবার সঙ্গেও কথা বলতে দেওয়া হতো না। এসব নির্যাতনের কথা কাউকে বললে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিত হাসান। তাই জীবনের ভয়ে এবং স্বামীর সঙ্গে নির্বিঘ্নে সংসার করার আশায় আঞ্জুমান কাছে নির্যাতনের ব্যাপারে মুখ খোলেনি। কিন্তু গত শনিবার হাসান মাতাল অবস্থায় গভীর রাতে বাড়িতে ফেরে। এরপর আঞ্জুমানের হাত-পা বেঁধে মুখে বালিশ গুঁজে দিয়ে শুরু করে নির্যাতন।
এ সময় আঞ্জুমানের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয় সে। চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলে। এমনকি একপর্যায়ে কামড় দিয়ে বুকের মাংস তুলে নেয় হাসান। নির্যাতনের সময় আঞ্জুমানের আর্তনাদ প্রতিবেশীরা টের পেলেও পাশের ঘরে থাকা শ্বশুর-শাশুড়ি টের পায়নি।
একপর্যায়ে আঞ্জুমান জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসান ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এত কিছুর পরও আঞ্জুমানের মা-বাবাকে খবর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি হাসানের পরিবারের লোকজন। প্রতিবেশীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে গত রবিবার বিকেলে ছুটে আসেন আঞ্জুমানের মা-বাবা এবং নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখনো আঞ্জুমান নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আঞ্জুমান নওগাঁ সদর উপজেলার লস্করপুর মহল্লার মো. আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে।
বাবা রিকশা চালিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালায়। দেড় মাস আগে সদর উপজেলার চণ্ডীপুর (কাচারীপাড়ার) গ্রামের মো. জামেদ আলীর ছেলে হাসানের (২৫) সঙ্গে বিয়ে হয় আঞ্জুমানের। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে স্থানীয় সমিতি থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে যৌতুকের চুক্তিবদ্ধ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ২২ হাজার পরিশোধ করেন। বাকি ১৮ হাজার টাকা এক বছর পর দেওয়ার কথা ছিল। হাসানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে আঞ্জুমান নওগাঁ সদর হাসপাতালে অর্থপেডিক বিভাগে ডা. আব্দুল বারীর চিকিৎসাধীন। তিনি জানান, আঞ্জুমানের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে। তার সেরে উঠতে সময় লাগবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।