আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামীলীগ কি বাকশালের পথে হাঁটছে?

ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের। রাজধানীতে আগামী এক মাস সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সভা-সমাবেশ,মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এটা কি সরকারের এমন কোন টেস্ট কেস যে, দেখা যাক কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়? যদি তাই হয় তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি।

সামনে এই সময় সীমা বর্ধিত করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বিএনপি’র বর্তমান যে সাংগঠনিক অবস্থা তাতে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সভা সমাবেশ করার ক্ষমতা তাদের আছে বলে মনে হয় না। তারমানে নির্বিঘ্নেই কেটে যাবে একটি মাস। ফলে সরকার বিরোধীদের আন্দোলন ঠেকাতে হয়ত এই অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই যুতসই বলে ধরে নিয়ে এর সময় এবং পরিধি আরও বাড়াতে চাইবে সরকার। কিন্তু তাতে আখেরে কে লাভবান হবে? বিএনপি সুযোগ পাবে নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার।

মোক্ষম অস্ত্র পাবে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার। কারণ সাধারণ মানুষ দেখবে একদিকে লাগামহীন ছাত্রলীগ অস্ত্রবাজী করে চলছে অন্যদিকে আওয়ামী লীগ পুনরায় বাকশালের পথে হাটতে শুরু করেছে। যা এদেশের জনগণ একবার প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগের অন্ধ ভক্ত ছাড়া কেউই এই আচরণকে সমর্থন করবে না। স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের নীরব সমর্থকরা তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেবে।

আর আওয়ামীলীগ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ার অর্থই হল তারা বিএনপিকে সমর্থন করবে। কেননা এ ছাড়া তাদের আর গত্যন্তর নেই। সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে যোগ না দিলে বিএনপিকে সদস্য পদ হারাতে হবে। তাই মাথা নিচু করে হলেও তাদের সংসদে যেতেই হবে। সেইসাথে সহিংস জামাতের সঙ্গ, হেফাজতকে সমর্থন, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম এমনিতেই তাদের কোণঠাসা করে রেখেছিল।

এর উপরে রয়েছে বিপর্যস্ত সাংগঠনিক অবস্থা। এমন অবস্থায় সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়ানোরই সুযোগ করে দেবে। এখন আর হরতাল দিলেও তা কার্যকর হয়না। খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য নেতাদের সভা সমাবেশে লোক সমাগম হয়না বলেই চলে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বিএনপির নেতাদের তত্ত্বাবধায়কের দাবী আওরানো ছাড়া এ মুহূর্তে তা আদায়ের মত মনোবলও আর অবশিষ্ট নেই।

আর তা বুঝেই ক্ষমতাসীন সরকার তত্ত্বাবধায়কের দাবী নিয়ে যখন যেমন সুবিধা তেমন বলছে। এক অর্থে এই দাবীটা অনেকটাই হালকা হয়ে আসছে। আর তা জেনে বুঝেও আঠার দলের কিছু করনীয় আছে বলে মনে হয় না। যখন প্রায় সব কিছুই সরকারের নিয়ন্ত্রণে, এমনকি স্বপক্ষে ছিল বলেই মনে হচ্ছিল ঠিক এমন সময় এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত কি সরকারের ভিতরের অস্থিরতাকেই নির্দেশ করছে না? এটা তো ঠিক এই সিদ্ধান্তটি সরকারের জন্য এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জন্য মোটেই ভাল কিছু বয়ে আনবে না বরং বুমেরাং হয়ে দেখা দিবে। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসন তৎপরতা নির্বিঘ্নে রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বলা হলেও তা ধোপে টিকবে না কারণ রাজধানীতে এ মুহূর্তে কোনও ত্রাণ কাজ চলছে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় যদিও বলছেন ‘শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অনুমতি নিয়ে বিরোধী দল ভাঙচুর,জ্বালাও-পোড়াও করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। মসজিদে হামলা করে পবিত্র কোরআনে আগুন দেয়। বলে তাদের সভা সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবেনা। কিন্তু তিনি তো ঐ সব কারণ দেখিয়ে নিষিদ্ধ না করে এক মাস সভা সমাবেশ না করার আহবানও জানাতে পারতেন। তাঁর অনুরোধকে উপেক্ষা করে যদি বিরোধী দল সভা সমাবেশ করে পুনরায় একই ধরনের নৈরাজ্য চালাত তাহলে তখন হয়ত সরকার জনসাধারণের কাছেই এর বিচারের ভার অর্পণ করতে পারত।

আর সে বিচারে নিশ্চয়ই সরকারই লাভবান হত। তা না করে এভাবে বিরোধী শিবিরের কণ্ঠরোধের চেষ্টা নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর হয়ে দেখা দেবে সন্দেহ নেই। পরিশেষে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সভা-সমাবেশ,মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে আসার দাবী জানাচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা ক্ষমতাসীন দল এবং দেশ উভয়ের জন্যই মঙ্গল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.