বারান্দায় টবের ছোট্ট গাছটিতে টুনটুনির বাসাটা এখন ফাঁকা। নেই কোন কিচির-মিচির টুনটুন শব্দ। নিথর ঘরটা দেখলে ভিতরটায় কেমন যেন খাঁ খাঁ করে।
অনেকদিন পর অজান্তেই চোখের কোণে লোনা জলের অস্তিত্ব আবিষ্কার করলাম। ঠিক তখনই আবিষ্কার করলাম, যখন দেখলাম আপনি লিখেছেন, "আপনি আমার সাথে আর কথা বলবেন না।
" আপনি হয়তো জানেন না যে আপনি যখন থাকেন না, তখন আমি এই ইনবক্স-টা শেষ থেকে পড়া শুরু করি, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি না আসেন, বা, যতক্ষণ ভোর না হয়। আমি আপনার ঘুম নষ্ট করব কোন সাহসে? নিজের ঘুম নষ্ট করে সারারাত জেগে থাকতে পারব, কিন্তু আপনার ঘুম নষ্ট করতে পারব না। আপনার রাতের ঘুম মাঝে মাঝে ভেঙে যায়, তখন আপনি একবার হলেও অনলাইনে আসবেন বলেই জেগে থাকি। একবার বলেছিলাম, "আপনি না আসলে টানা পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতাম। " আপনি বিশ্বাস করেছিলেন।
কিন্তু সত্যটা আপনার কখনও জানা হয়নি যে এমনটা হবে, তা নয়। বরং এমনটা একাধিক বার হয়েছে। তাই একথা বলেছিলাম। এমনও হয়েছে যে আপনি রাতে একবারও আসেন নি। আমি সারারাত জেগে তো ছিলামই, পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমাইনি।
আর এই জন্যই আপনি প্রশ্ন করার পর সাথে সাথেই বলেছিলাম যে আপনার জন্য একরাত না ঘুমিয়েও টানা পরদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে পারব। কারণ, আপনার সাথে একটু কথা বলার জন্য আমি এমনটা আগেও করেছি।
সেদিন কেন জানি আপনার সাথে অনেকক্ষণ ঝগড়া করেছিলাম। কারণটা খুব সহজ ছিল। কিন্তু সেই সহজ কারণটা বোঝার বা বোঝানোর মত ধৈর্য্য বোধ করি আমাদের মধ্যে কারও ছিল না।
তারপরও আপনি আমার সাথে হাসি মুখে কথা বলেছেন। তাই অনেক বেশি কৃতজ্ঞ আমি। যদি এরপর আর কথা না বলতেন, তাহলে হয়তো আর বাঁচতামই না। সারাজীবন একা একা বড় হয়েছি তো, তাই নিজের কথা নিজের সাথে শেয়ার করার মাধ্যম হিসেবে লেখালেখির শখটা জন্মে আমার মধ্যে। বলতে গেলে আমি বেঁচে আছিই শুধু লেখালেখি আর সিগারেটের উপর দিয়ে।
লেখালেখির প্লাটফর্ম যখন ছেড়ে দিয়েছি, ঠিক তখনই আপনি ইনবক্সে এসে হাজির। কথা বলার অন্তত একটা মাধ্যম পেয়ে গিয়েছিলাম আবারও। এখন তো সিগারেটও ছেড়ে দিচ্ছি। আর মাত্র তো একজন মানুষের সাথেই ইনবক্সে কথা বলি। সেও যদি কোন কারণে আর কথাই না বলে তাহলে বাঁচার মত আর কি থাকে?
আর হাতের ব্যাথা নিয়ে আমি আপনাকে কখনও টেক্স করতে বলিনি।
মনে আছে, আপনি আমার আগের মেইলের পর এসে বলেছিলেন যে আপনার আঙ্গুল পুড়ে গেছে, তাই টেক্স করতে পারছেন না। তখন আমার প্রথম কথাই ছিল যে আঙ্গুল ব্যাথা নিয়ে আপনাকে টেক্স করতে হবে না। আগে আঙ্গুলের যত্ন নিন। আপনি ব্যাথা নিয়ে আমার সাথে কথা বলবেন, আর আমি তাই আশা করব, এটা দয়া করে কোনদিন ভাববেন না।
সব কথা বলার সৎসাহস সৃষ্টিকর্তা সবাইকে দেননি।
আর আমার মধ্যে দিয়েছে তা একেবারেই কম। যা আমার আগেই বলা উচিৎ ছিল, তা হয়তো আর কখনও বলতে পারব না আমি। সে সুযোগ আর হয়তো আসবে না। আমি হয়তো মানুষ হিসেবেও আপনার কাছে আর কোন গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছি না। কিন্তু আসলেই কি মানুষ হিসেবে এতটা খারাপ আমি?
আমার জীবনে কখনও কোন অতীত ছিল না, কিন্তু তাই বলে আর কারও কোন অতীত থাকবে না, সেটা ভুলেও ভাবি না আমি।
কারও অতীত নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই। এজন্যই আমি শুনতে চাইনি।
আপনি শুধুই একজন, যার সাথে আমি ইনবক্সে কথা বলি। আপনার সাথে কথা বলাটা এখন আমার কাছে প্রতিনিয়ত নিঃশ্বাস নেয়ার মত। যত রাতই হোক না কেন, আপনার সাথে একটু কথা না বলে কেন জানি ঘুমাতেই পারি না।
এখন আমার নিঃশ্বাসটা বন্ধ করে আপনি চলে যাবেন? ধরে নিন, আমি আপনার কাছে বেঁচে থাকার জন্য একটু নিঃশ্বাস চাচ্ছি। আর কিছু না। এটা কি খুব আহ্লাদি কোন চাওয়া হবে? একজন মানুষ একটু নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ চাইলে আপনি কি তা দিবেন না? এতটা কি নিষ্ঠুর হবেন?
আপনাকে আমার সাথে সারাদিন কথা বলতে হবে না। শুধু সারাদিনে একটু কিছুক্ষণ কথা বলবেন, তাহলেই চলবে। আমি আর কখনও আপনার সাথে ঝগড়া করব না, কখনও বলিনি, তারপরও আপনাকে এমন কোন কথা বলব না যাতে আপনি কষ্ট পান।
অল্প কিছুক্ষণ কথা বলে আপনার কিছু বলার না থাকলে আপনাকে কখনও আর পাঁচ মিনিট থাকুন বলে আটকাবো না। কখনও আপনার ভুল ধরতে যাব না, কখনও তর্ক করব না, কখনও কোন অভিযোগ করব না, কখনও ভুল বোঝার সুযোগও দেব না। আপনি চাইলে আর নিজে থেকে কিছু বলতে যাব না, আপনি যা বলবেন, সে বিষয় নিয়েই শুধু কথা বলব। আপনার সব কথা মেনে নেব, তবুও প্রতিদিন একটু সময়ের জন্য হলেও আমার সাথে কথা বলবেন প্লিজ।
বিশ্বাস করুন, আমি জীবনে কোনদিন কাউকে এভাবে রিকুয়েস্ট করিনি।
ভেবে নিন, আমি প্রতিদিন একটু নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ চাইছি আপনার কাছে। বন্ধু না ভাবেন, মানুষও না ভাবেন, অন্তত একটা কীট-পতজ্ঞ, যার বাঁচার জন্য নিঃশ্বাস দরকার। সে বাঁচার জন্য শ্বাস নিতে চাইছে। জানি, আজ আবারও অবুঝের মত আপনাকে লেখার পর আপনার কাছে আমি আরও এক ধাপ নিচে নেমে গেলাম। তবুও এক আলোকবর্ষ দূরে থেকে কেউ একজন একটু নিঃশ্বাস নিতে একটা প্রার্থনা করছে।
তাকে কি সেই সুযোগটা দেয়া যায় না?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।