বেচে থাকার কারণ খুজে চলেছি....আজ ও জানিনা গন্তব্য কোথায়!পথ আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে......
দিনগত রাত সোমবার ২টা। রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের এক পাশে মানুষের জটলা। মধ্য রাতে এত মানুষের জটলা দেখে কৌতুলবশত গাড়ি থামিয়ে গেলাম কাছে। চোখ পড়লো খাবারের ডালায়।
ডালায় করে বিক্রি হচ্ছে লোভনীয় খাবার মোরগ পোলাও।
দাম মাত্র ২০ টাকা! দামটা একটু অবাক হওয়ার মতো বটে। তবে অবস্থা দেখে কেউ ভুল করতে পারেন পোলাওয়ের হাট বলে। ছোট বড় ডালায় ২০-৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে খাবারগুলো। ময়লা, আবর্জনার ডালার মধ্যে খাবার! সারি সারি সাজানো। ঠিক সবজির দোকানের মতো।
এত রাতে গাড়ি থামিয়ে কাছে যাওয়ায় প্রথমে একটু চমকে গেল সবাই। বিষয়টি নিয়ে জানার লোভ হলো। কথা বললাম এখানের বিক্রেতাদের সঙ্গে।
জানা গেলো, সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ, রিকশা, ঠেলা চালক ও ভাসমানদের খাবার এটি। যাদের বেশি টাকায় হোটোলে বসে মোরগ পোলাও খাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য এ ব্যবস্থা।
তবে কোনো জনহিতৈষী এ ব্যবস্থা করেছেন বিষয়টি এমনও নয়। খাবারগুলো সেখানে তৈরিও হয়নি, এসেছে বড় বড় কমিউনিটি সেন্টার, ক্লাব ও হোটেল রেঁস্তোরা থেকে। সবই উচ্ছিষ্ট। যে খাবারগুলো উচ্ছিষ্ট হিসেবে থাকে সেই খাবারগুলো এখানকার কিছু ব্যবসায়ীরা কিনে আনে। কিনে মধ্যরাতে তারা বিক্রি করে।
বাসি হলেও তাদের কাছে মোরগ পোলাও বলে কথা!
এখানকার এক ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, তারা প্রায় ১৫জনের মতো ব্যবসায়ী রয়েছেন। যারা এ ব্যবসায় জড়িত। রাত ১২টার পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কমিউনিটি সেন্টার, হোটেলে ও রেঁস্তোরার উচ্ছিষ্ট খাবার তাদের কাছে বিক্রি করতে আসে। তারা সেগুলো কিনে এই সাধারণ লোকদের কাছে বিক্রি করে।
খাবারগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে নূরুল ইসলাম বলেন, “ভাই এগুলো কি আমরা বুঝি! আমরা করি ব্যবসা।
আর যারা খায় তারা তো ভালো হোটেলে খেতে পারে না। এগুলো খেয়েই মন কে সান্ত্বনা দেওয়া। ”
তিনি বলেন, “কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ, তা যাচাই করলে এরা তো খেতে পারবে না। “
নুরুল ইসলামের মতো আরেক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, “রাত হলেই আমরা এখানে আসি।
এরপর খাবার নিয়ে আসে লোকজন। তাদের কাছ থেকে খাবার কিনে আমরা খুচরাভাবে বিক্রি করি। এটা দিয়েই আমরা সংসার চালাই। ”
এই খাবারগুলো আপনারা খান কি-না এমন প্রশ্নে শহিদুল বলেন, “আমরা খাই না, তবে যারা খায় তারা তো খারাপ বলে অভিযোগ করে না। অনেক দিন ধরেই আমরা এ ব্যবসা করছি।
”
শহিদুল বলেন, “আমরা এক হাজার টাকার খাবার কিনে দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করি। এভাবেই আমাদের সংসার চলে। দিনের বেলা ঘুমাই আর রাতে এই ব্যবসা করি। ”
প্রতি রাতে এখানে দুই থেকে প্রায় পাঁচশ’ লোক এখানে খেতে আসে বলেও জানান তিনি।
শহিদুল, নুরুল ছাড়াও সেখানে দেখা যায় মমিনুল ইসলাম, কোরবান আলী, আসলাম, শরিফুলসহ অন্তত ১০জন ব্যবসায়ীকে।
এদিকে খাবার খেতে আসা শাহাজাহান আলী বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা তো এই খাবার হোটেলে খেতে পারবো না, যার কারণে এখান থেকে খাচ্ছি। ”
তিনি বলেন, “আমরা এখানে ২০ টাকা দিলে পেটপুরে মোরগ পোলাও খেতে পাচ্ছি। আর হোটেলে খেতে গেলে দেড় থেকে দু’শো টাকা লাগবে। আমাদের পক্ষে এত টাকা দিয়ে খাবার খাওয়া কি সম্ভব!”
সমাজের নিম্ন আয়ের এই লোকগুলো বোঝে না কোনটা স্বাস্থ্যসম্মত আর কোনটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাদের কাছে মুখ্য বিষয় ২০ টাকায় পোলাও থেতে পারা।
শুধু নিজেরা নয়, বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য কিনে নিয়ে যান তারা। মোরগ পোলাও খাওয়ার শখ তো তাদেরও আছে।
সূএঃ Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।