আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাশফুলের কন্যা

সাগর সরওয়ার

মেয়েটির পরেছিল সবুজ শাড়ি৷ বাতাসে ফুরফুর করে উড়ছিল শাড়ির আঁচল, মাথার চুল... আকাশের দিকে তাকিয়ে কি হাটা যায়? ব্রক্ষ্ণপূত্র নদের পাড়ে সেইভাবেই হাটার চেষ্টা করছিল নীল৷ ওর নামটি শুনে অনেকেই জিজ্ঞাস করে কেন ওর নাম নীল? প্রশ্নের উত্তর দেয় প্রশ্ন দিয়েই... কারও নাম যদি লাল হয়, আপনি কি জিজ্ঞাস করেন কেন তার নাম লাল? এ কথা শুনে অনেকেই চিমসে যায়, কেউ কেউ মুখ বাঁকা করে, ভাবে কি উদ্ধত ছেলেটা! নীল এমনি৷ ও জানে ওর নামের রহস্য৷ মা বলেছে৷ নীলেরা থাকে ময়মনসিংহে৷ শহরের পাশ দিয়ে যে নদী গেছে তারই নাম ব্রক্ষ্ণপূত্র৷ নদী পুরুষ না নারী, নদ না নদী এই প্রশ্ন কুঁড়ে খায় নীল কে৷ ভালো লাগে না৷ নদী তো নদী৷ রিভারকে -কে মেয়ে বানাবে, কে বানাবে পুরুষ? এই নদীতে এক সময় গভীর পানি ছিল৷ আকাশের রঙ সাদা না কালো , না ধূসর... যাই থাকুক না কেন সেই নদী থাকতো নীল রঙে৷ নীলচে কঁচের গ্লাসের মতো সেই পানির রঙ৷ এখন নেই সেই রঙ ৷ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে৷ যে নদীতে পানি থাকে না, তার আবার রঙ! সেই হাটুজলের নদীতে এখনো কাশফুল জন্মায়৷ বাতাস বয়ে যায়। দূরে শম্ভুগঞ্জ মিলের সাইরেন এখনো বাজে৷ সেই কাশফুলের চরেই মাঝে মাঝে হাটতে যায় নীল৷ নীল কাশফুল ভালোবাসে৷ আজ এমনি একদিন৷ সুন্দর হালকা গোলাপী রঙের টি শার্ট পড়ে হেটে বেড়াচ্ছে নীল৷ খালি পা৷ হাটতে হাটতেই হঠাৎ তার চোখে পড়লো মেয়েটিকে৷ মেয়েটি পরেছে সবুজ শাড়ি৷ বাতাসে ফুরফুর করে উড়ছিল শাড়ির আঁচল, মাথার চুল...৷ নীল অবাক৷ একা একা কোন মেয়ে সাধারণত এই নির্জন মরা নদীর চরে ঘুরে বেড়ায় না৷ মেয়েটি ঘুরছে৷ ছেলেটিকেও দেখে মেয়েটি৷ এগিয়ে যায় নীল৷ : আপনি? : হ্যা আমি৷ কেন : না, এমনি৷ আপনি কি ঘুরতে এসেছেন? নীলের প্রশ্ন৷ : না এখানে বড় একটা ভোজসভা হবে৷ সেই ভোজ সভায় নানা খাবার আছে৷ মোগলাই পরোটা আছে, চটপটি আছে, ফুঁচকা আছে৷ টক তেতুলের খাট্টা দেওয়া৷ আমি নিমন্ত্রিত তাই এসেছি৷ কিছুটা অপ্রস্তুত নীল৷ বলে কি মেয়েটা৷ ঠোটকাটা কি একেই বলে৷ নীল ভাবে৷ হঠাৎ মেয়েটির প্রশ্ন : আচ্ছা মোগলরা কি চটপটি খেতো, ফুঁচকা? : জানি না৷ আমার মনে হয় না৷ তারা মাংস পোলাও খেতো বলে শুনেছি৷ : তাহলে তো মোগল মেয়েরা আসল মজাটি পায়নি৷ যদি পেতো তাহলে ফুচকার নাম কি হতো জানেন? : জানি না৷ : নাম হতো মোচকা৷ মোগল এবং ফুচকা এই দুই নামের একরূপ৷ আচ্ছা এই চরের কি নাম? : এই চরের কোন নাম নেই৷ কাশবনের চর বলতে পারেন৷ সারা বছর এখানে কাশ থাকে৷ সময়ে ফুল ফোটে৷ : এখানে পাখি নেই? টুনটুনি? : আছে তো৷ আমি তো প্রায়ই দেখি৷ : আমাকে দেখাবেন৷ আমি কখনো টুনটুনির বাসা দেখিনি৷ নীল টুনটুনির বাসা খোঁজে৷ কাশ সরিয়ে তাকায় এদিকে, ওদিকে৷ পেয়েও যায়৷ : দেখুন এই যে টুনটুনির বাসা৷ ছোট্ট বাসা৷ কাশের ঝাড়ের দুটি গাছের সঙ্গে কি সুন্দর করে বাসাটি বানানো৷ : আচ্ছা ওরা এতো সুন্দর করে বাসা বানায় কেন? : থাকার জন্য, জন্য ভালোবাসার জন্য৷ প্রিয়ার জন্য, প্রিয়‘র জন্য৷ : ওরা কি ভালোবাসা বোঝে? : বোঝে তো! তা না হলে এতো কিছু কেন? : ভালোবাসলেই কি সব কিছু করা যায়? : যায়৷ : আপনি করেছেন কখনো? : আমি...দ্বিধায় পড়ে যায় নীল৷ নীল তার জীবনে কাউকে জড়ায়নি৷ কিংবা তাকে কেউ টানেনি৷ কথাগুলো অনেকটা গুছিয়ে বললো সে৷ মেয়েটি শুনলো৷ মেয়েরা নাকি ভালো শ্রোতা নয়, ভালো বক্তা, কে যেন বলেছিল৷ এই মেয়েটি তেমন নয়৷ : প্রেমে পড়েননি... তাহলে তো কবিতাও লিখেন নি৷ : তা লিখেছি৷ : তাই! কাকে নিয়ে? : আকাশ, এই নদী৷ কালো রাত, সবুজ ঘাস..রঙ্গিন পাখি৷ : বাহ, খুব ভালো৷ এই প্রথম পেলাম, যে কোন মেয়েকে নিয়ে কবিতা লিখেনি৷ : আপনি, মানে আপনি কখনো কবিতা লিখেছেন? : জানতে চাইছেন প্রেমে পড়েছি কি না? : ঠিক তাই৷ : মেয়েরা প্রেমে পড়লে কবিতা লিখে না৷ শোনে৷ নিজেকে নিয়ে অন্যকেও কবিতা লিখবে, সেই কবিতা সে শুনবে৷ এটি দারুন মজার ব্যাপার৷ ওরা হাটতে থাকে৷ কথা বলতে থাকে৷ মেয়েটির সবুজ শাড়ি উড়ে ফিরে, কপাল বেয়ে পড়ে কালো চুল৷ ওরা শামুক দেখে৷ দেখে হাটুজল নদীর কুলকুল চলে যাওয়া৷ দূরে আকাশে সাদা বক উড়ে যায় তাও দেখে৷ আজ আকাশে হালকা কালো মেঘ করেছে৷ বকটিকে মনে হয় মেয়েটির কপালের সাদা টিপ৷ মেয়েটি হাটুজলে হাটতে থাকে৷ দাঁড়িয়ে যায় নীল৷ নীল এখনি পানিতে পা ডোবাবে না৷ সন্ধ্যা হবে, জোনাকিরা বাতি জ্বালাবে, তারপর ফিরে যাবে সে৷ মেয়েটি চলে যাচ্ছে৷ একবারের জন্য পিছনে তাকালো কেবল৷ বললো : ভালো থাকবেন৷ ঝিরঝিরে বাতাস৷ কোথাও একটা নাম না জানা পাখি ডেকে বেড়াচ্ছে৷ হয়তো সে তার সঙ্গীকে খুঁজছে৷ সঙ্গীটি কি হারিয়ে গেছে? ভাবে নীল৷ শাড়িটিকে সামান্য তুলে হাতে স্যান্ডেলটি ঝুলিয়ে চলে যাচ্ছে মেয়েটি৷ বেশ খানিকটা হাটতে হবে তাকে৷ হাটতে হাটতে এক সময় হারিয়ে যাবে সে৷ হারিয়ে যাওয়া এ মেয়েটির নাম জানে না নীল....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।