আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্যাতন থেকে নারীকে বাঁচাবে কে?



আরীফ মুহাম্মদ একটি রাষ্ট্রকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে ইনসাফভিত্তিক নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে সমাজ উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের সমাজ উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁডিয়েছে নারী নির্যাতন। অতীতের কোনো সরকার নারী নির্যাতন কমিয়ে আনতে পারেনি। বরং ক্ষমতাসীনদের দ্বারাই নির্যাতনের বেশি শিকার হয়েছে নারীরা।

তারাই নারীর হক (অধিকার) বেশি নষ্ট করেছে। একইভাবে বর্তমান সরকারের সময়েও অতীতের যে কোনো সময় থেকে নারী নির্যাতন বেড়ে গেছে। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের এক বছরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৯ সালের শুধু ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৯৭ নারী ও কন্যাশিশু। আর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৫৪ জন নারী। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক নারী ২১১ এবং কন্যাশিশু ২৪৩ জন।

গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৭ প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও ৭৯ কন্যাশিশু। যৌতুকের কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১০৯ নারী। অধিকারের জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৬ নারী ও কন্যাশিশু। তাদের মধ্যে ১৩ নারী ও ২৩ কন্যাশিশু। ২৩ কন্যাশিশুর মধ্যে একজনকে ধর্ষণের পর হত্যা ও ৫ জনকে গণধর্ষণ করা হয়েছে।

১৩ প্রাপ্তবয়স্ক নারীর মধ্যে ১ জন পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ৩০ নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যৌতুকের শিকার হয়েছেন ২৭ জন নারী। একই সময় ৫ জন এসিডদগ্ধ হয়েছেন। এর বাইরে আরও কত নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জা-ভয়ে নীরবে কেঁদেছেন তা বলা অসম্ভব।

২০১০ সালে এসে তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে সিডি বাজারজাত করছে দুর্বৃত্তরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্রী নিপীড়ন বেড়েছে। এমনকি পিতৃতুল্য শিক্ষকের কাছেও ছাত্রীরা নিরাপদ থাকতে পারছে না। কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের রাষ্ট্র! চলতি বছরে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে গেছে।

গত সাড়ে পাঁচ মাসে ইভটিজিং ও প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ১৩ জন ছাত্রী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। এরা হলো নাসফিয়া আকন্দ পিংকি, বৃষ্টি, ফাহিমা, রেশমা আক্তার, চাঁদমণি, অরুন্ধতী, ইলোরা, নুরিরা আক্তার, সায়মা, ফারহানা নাজ রুহী, সানিয়া সুলতানা প্রভা প্রমুখ। নির্যাতিত নারীরা অধিকাংশ সময় ন্যায্য বিচারটুকুও পান না। নির্যাতিত বা তাদের পরিবার বিচারের আশায় থানা-পুলিশের কাছে গিয়েও কোনো ফল হয় না। সিআইডির ২০০৮ সালের তথ্য অনুযাযী, এসিড-সন্ত্রাসের ১৬১ মামলার মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ২৮টি।

৬৭টি মামলা খালাস, বাকিগুলো বিচারাধীন। ঢাকা মহানগরী মুখ্য হাকিমের ২০০৯ সালের নিষ্পত্তি হওয়া ৬৪৬টি মামলার ৯৬ শতাংশই খারিজ হয়ে গেছে। ঢাকার সিএমএম আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে ১ হাজার ৩১১টি, এর মধ্যে ২২৮টি ধর্ষণের, বাকি ১ হাজার ২২৯টি মামলা যৌতুক, প্রতারণা ও আত্মহত্যায় প্ররোচনাসহ বিভিন্ন নির্যাতন সংক্লান্ত। এসব মামলার অধিকাংশ ক্ষমতাসীনদের দাপটে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। আবার অনেক মামলা নির্যাতিতরা তুলে নিতে বাধ্য হয়।

কেউই আবার সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে লজ্জায় ঘটনা লুকিয়ে রাখেন। এসব অবস্থা বিশ্লেষণ করলে মনে হয়, রাষ্ট্র ক্রমেই পেছনে হাঁটছে। রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কোনো বিপ্লবী যোদ্ধা এগিয়ে আসছে না। প্রশ্ন জাগে, দেশের বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী হয়েও নারীদের জন্য কি করেছেন? অথচ তারা দুজন নারী দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার মসনদে ছিলেন, এখনও আছেন। তারা হয়ত শক্ত আইন করবেন।

কিন্তু কি লাভ! এখনও আইন আছে, প্রয়োগ কোথায়? এ অবস্থায় নির্যাতন থেকে নারীকে কে বাঁচাবে? এভাবে কী নারীর প্রতি নির্যাতন-নিপীড়ন চলবে? অন্যদিকে বিনাবিচারে মানুষ হত্যাও চলবে! এভাবে চললে রাষ্ট্র একদিন খুনি হয়ে উঠবে। তখন খুনি রাষ্ট্রকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে নয়া রাষ্ট্র নির্মাণে মেহনতি মানুষকে নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করবে তরুণরা। এজন্য নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের মাধ্যমেই শুরু হোক নয়া রাষ্ট্র নির্মাণের সংগ্রাম। এ লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তরুনদের আহ্বান জানাচ্ছি। ।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.