আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী নির্যাতন আইন কি পুরুষ নির্যাতন হাতিয়ার?

মানুষ মরেনা কখনো আগামী শুক্রবার বিয়ে! বলা নেই কওয়া নেই হুট করে শুনলাম, ছেলের বাবার বন্ধু সম্বন্ধ এনেছে। মেয়ে মফস্বলে থাকে, মাদ্রাসায় পড়ে। পর্দা-পুসিতা, ধার্মিক, বাবার পুরো পরিবার তার হাতে, অসম্ভব সংসারী, ইত্যাদি ইত্যাদি কথা-বার্তা শুনে না দেখেই মেয়ে পছন্দ হয়ে গেল সবাইর। ছেলেটা সহজ-সরল ধরনের, তাই বাবা দেখেছেন -এর উপর আর কথা নাই। জানা গেল, মেয়ের বাবা সিবিএ নেতা ছিল বিজিপ্রেসের, চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী।

কিন্তু সম্পদশালী! মফস্বলের মত জায়গায় কয়েক বিঘা জমি, চারতলা ফাউন্ডেশনের উপর দুই ইউনিটের প্রায় তিনহাজার স্কয়ার ফিটের উপর সম্পূর্ণ টাইল্স করা বাড়ী! ছেলের বাবারও বাড়ি গাড়ির অভাব নেই, শুধু দরকার একটা ভাল ঘরের ভাল মেয়ে। কথা উঠলো মেয়ের বাবার জীবিকার সাথে তো সম্পদের পরিমান মিলে না। উত্তর আসলো সম্পদের পরিমানই তো বর্তমান যুগের 'ভাল ঘরের' মাপকাঠি। সম্পদ পছন্দ হয় কি না আগে তা দেখ? আর সে তো পছন্দ না হওয়ার কিছু নাই! যাহোক ভালোয় ভালোয় বিয়ে হয়ে গেল। মেয়ে আসলো শশুর বাড়ি।

রোজার মধ্যে বিয়ে, তাই ঈদের পর বাপের বাড়ি যাবে ঠিক হলো। ঈদে সব্বাই মিলে আনন্দ করলো, নতুন বউ, নতুন ছোট মা....নতুন মামী... আনন্দের আর সীমা নাই। নতুন বলে কথা... আবার রোজার ঈদ.. আত্নিয়-স্বজনের মাঝে প্রতিযোগীতা- কে কত বড় উপহার দিতে পারে! ঈদের দুইদিন পর আসলো মেয়ের বাবা, বলল মেয়ের মা মেয়েকে না দেখে শয্যাশায়ী। আবার জামাইকে তার আত্নীয়-স্বজনরা ভালোভাবে দেখতে পারে নাই। নিয়ে যেতে চান।

অত্যন্ত ভালো প্রস্তাব। জামাইর সাথে তার বোনকে নিয়ে জামাই-বউ চলল শশুর-বাড়ি। মেয়ের ভাই বলল মেয়েকে সাজিয়ে নিয়ে যেতে, যাতে তাদের মুখ উজ্জল হয়, মফস্বল শহর.. সবাইই তাকিয়ে থাকবে। তো বিয়েতে যত গহনা উপহার পেয়েছে বউ তার বেশির ভাগই নিয়ে নিল সাথে, ঈদের উপহার - তা ও তো দেখালে মুখ উজ্জল হবে, সুতরাং তা ও ঢুকলো ব্যাগে। সবাই মিলে হাসতে হাসতে বিদায় দিলো ছেলে-ছেলে বউকে।

বাড়ি গিয়ে বউ আর জামাইর কাছে আসে না। কি ব্যাপার? ঘরে রান্নার কেউ নাই, লাকড়ির চুলায় রান্না করতে হয় তো... তাই বউকেই সব করতে হবে! দুইদিন বেড়িয়ে যেদিন ফিরবে ঢাকা; সেদিন সকাল থেকে বউ আর নাই। কোথায় গেল? মেয়ের বাবা-মা কেউই কিছু বলতে পারে না। মেয়ের ভাই বলে আছে আশে পাশেই। কিন্তু কারো মধ্যেই কোন দুশ্চিন্তার ছাপ নেই।

দুপুর গড়ায়, মেয়ে নাই। হঠাৎ করে একটা চিঠি আবিষ্কৃত হলো মেয়ের লেখাঃ মেয়ে এ জামাইর ঘরে ফিরে যাবে না.....হায় হায়! একি বলে... জামাই বলে কেন? আমি কি করলাম...উত্তর চিঠিতেই আছে.... জামাই চশমা পড়ে.. চোখে কম দেখে... শারিরিকভাবে দুর্বল... ঢাকার বাসায় সারাদিন গ্যাস থাকে না, মাঝরাতে রান্নাবান্না করতে হয়, ঘুমাতে হয় রাত্র একটায়.... কোন ভাবেই এ জামাইর ঘরে ফিরে যাবে না বউ! ফোন এলো ঢাকায়.... আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও এতবড় শক্ হয়তো পেতো না কেউ। মেয়ের ভাইকে অনুরোধ করা হলো, মেয়েকে বুঝাও, সব সমস্যারই তো সমাধান আছে, চেষ্টা করে দেখা যাক। মেয়ের ভাই জানালো মেয়েকে পাওয়া গেলে বোঝানো হবে, কিন্তু এখন জামাই আর তার বোন চলে যাক্। জিজ্ঞেস করা হলো কেন চলে আসবে বউ ছাড়া? উত্তর খুব সুন্দর! মেয়ে লিখেছে জামাই এবং তার বোনকে বাড়ি থেকে বার না করলে সে এখানে ফিরে আসবে না।

অনুরোধ করা হলো বউয়ের ভাইকে ব্যাপারটা সামাল দিতে যেভাবে পারে, তবে জামাইকে বউ ছাড়া না পাঠাতে। কোন উত্তর ছাড়া ফোন কেটে দেয়া হলো। তখন অন্য মাধ্যমে ফোন করে জানা গেল বাড়ির দশজনকে ডেকে এনে চিঠি পড়ে শুনানো হচ্ছে, তার কিছুক্ষন পর তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামাই এবং তার বোনকে এখন গাড়ি করে পাঠানো হবে, মেয়েকে বুঝাতে পারলে তারা পড়ে মেয়ে কে নিয়ে আসবে। মফস্বল শহর, অচেনা, অপরিচিত জায়গায় ২৫ বছরের সরল সোজা একটি ছেলে এবং তার ছোট বোন! ঢাকায় তখন চরম অস্থিরতা। ক্ষনে ক্ষনে মনে জেগে উঠছে কতশত অশুভ সম্ভাবনা।

মনস্থীর করলাম, অনুরোধ করে যত দ্রুত সম্ভব জামাই ও তার বোনকে নিয়ে আসা হোক। পরে দেখা যাবে কি হয়। অনেকবার চেষ্টার পর মেয়ের ভাই ফোন ধরতে দয়াপরবশ হলেন। অনুনয় করে বললাম ছেলেকে ও তার বোনকে গাড়িতে উঠিয়ে দিন! খুব সানন্দে রাজী হলো। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম বাসায় ফেরার পর।

শুনলাম তাদের করুন কাহিনী। বোনের মুখে কোন কথা নেই। হতবিহবল! এত সাধের ভাবি! কিভাবে ভোল পাল্টে গেল, কেউ কিছুই বুঝতে পারছিলো না। কিন্তু বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হয় নি। খবর আসলো, মেয়ে কোনদিনও আসবে না, এখন মেয়ের বাবা যে যৌতুক দিয়েছে তিন লাখ টাকা, তা ফিরিয়ে দিতে হবে! আবারও আশ্চর্যের অতিসহ্যে হৃদক্রিয়া বন্ধ হবার যোগার পুরো বাড়ি জুড়ে।

আরো জানানো হলো টাকা নি দিলে নারী নির্যাতন মামলায় মামলা করা হবে! এতদিন ধরে গড়ে তোলা মান-সন্মান ধুলোয় মিশে যাবার দৃশ্য সবাই দেখছে সে বাড়িতে প্রতি নিয়ত! ভাই কেউ যদি থাকেন, দয়া করে পরামর্শ দিন : আইনি পরামর্শ দরকার। টাকার ব্যাপার পুরোটাই বানোয়াট! পরিচিত কারো কাছে সে পরিবার মুখ খুলতে পারছে না। এরকম অবস্থায় আইনের কাছে কি সাহায্য রয়েছে? মিডিয়ার কল্যানে এতটুকু জানি নারী নির্যাতন মামলায় আগে জেল পরে শুনানী! কিন্তু বাস্তবে সে নারীকে কোন প্রকার নির্যাতন দুরে থাক, এত আদর এত সোহাগ ...... নাহ! আর ইচ্ছে করছে না বলতে.... প্লিজ কিছু একটা পরামর্শ দিন... অপেক্ষায় রইলাম। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.