আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তগদ্য: পাখিজ্বর বিষয়ক কবিতা, আমাদের গ্রামে একপাল পাখিশিকারি এবং মাঠে তার ছায়া

ডুবোজ্বর

০১. আমার সলিম আলীকে মনে পড়ে। তিনি পাখি শিকারি ছিলেন না জেনেছি। তার দুটি ডানা ছিলো, তিনি তার শার্টের ভিতর লুকিয়ে রাখতেন। জ্ঞান চলতেই থাকে। মানুষের চোখে এই অসুখ বিস্তারের মাধ্যম পাখি শিকার।

সংক্রমিত পাখির সংস্পর্শে সংক্রমিত কাক, বালিহাঁসের সংস্পর্শ জানা নেই। জ্বরাক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে মানুষের এই জ্বরের লক্ষণ জানা নেই। ০২. আমি একটা পাখির নাম রেখেছি নীলকান্তপাখি। শরীরের পালক নীল। এরা আমাদের বিদ্যালয়ের পথে পাহাড়ের গায়ে গর্তনীড়ে থাকে।

এদের নাম পরে জেনেছি শাদামাটানাকুটি। কিন্তু আমার কাছে তারা নীলকান্ত, নন্দিতার কাছে যেমন। ০৩. দেয়ালঘড়ির নিষ্ঠুর কাঁটায় গেঁথে আছে রাত্রি। পরিযায়ী পাখিদল আসে উড়ে। তাদের জ্বর সন্দেহ হলে কি করেন? খেয়ে ফেলেন অথবা কিছুই করেন না।

না, বিক্রি করে ফেলেন কিংবা সুস্থগুলি হতে পৃথক করে রাখেন কিংবা মেরে ফেলেন কিংবা কতৃপকে রিপোর্ট করেন। কিন্তু আপনি তাদের ধরলেন কেনো ? ০৪. সকল অঞ্চলে এরও বেশি পাখিপালনকারিদল জ্বর সম্বন্ধে শোনে নি বা জানে নি। মনে করে যে তাদের পাখিতে জ্বর হওয়ার ঝুঁকি আছে, কিন্তু তারা কোন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয় না। বাড়িতে পাখিরা মুক্তভাবে চরে বেড়ায়। তারা ভূগোলের কাস সন্ধান করে।

০৫. জ্বর সংক্রান্ত যোগাযোগের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যোগ্যতা খুবই কম। জ্বর প্রতিরোধের তথ্যাদি বিতরণে লিখিততথ্য যেমন সংবাদপত্র, পোস্টার, পুস্তিকা, লিফলেট এবং রেডিও এর গুরত্ব কম। একটা দোয়েলপাখির শিস এক্ষেত্রে তাৎপর্যময়। শিকারিপালের কাছে এইসব জানানোর দরকার নেই। ০৬. আমি অনেকদিন শালিকপাখি চিনতাম না।

উঠানে একদল পাখিকে আমার মা ভাত ছিটিয়ে খাওয়াতেন। আর বলতেন এই পাখিদের নাম, ভাউত্তা। ওয়ান ফর সরো, টু ফর জয় জানার অনেকদিন পর জানলাম ওইসব শালিক। আর মিলুর কবিতায় ইহাদের ছড়াছড়ি। ০৭. আমাদের গ্রামে একপাল পাখিশিকারি ঘুরে বেড়ায়।

আর উড়ে বেড়ায় একঝাঁক শিকারিপাখি। এইখানে পাখি আর পুরুষ পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বি। তারা রূপকথার পাখিদের কথা জানে না। ইকারুস একদিন পাখি হতে চেয়েছিলো সূর্যকে ভালোবেসে। ০৮. আমরা একবার সিলেটে বিবিয়ানায় লং-মার্চ।

ওখানে ভাতের দোকানে পাখির মাংস বিক্রি হয়। পাখির মাংস অতিব সুস্বাদু। খেতে গিয়ে আমার উড়ার অভিলাষ হলো। আমি সানকি অথবা কলাপাতা হাতে সূর্যের দিকে যেতে চাই। সন্ধ্যা হলে মাটি আর নদীর গন্ধে একটা মাঠে শুয়ে পড়ি।

আমি ঘুম এবং স্বপ্নের পাহাড়। ০৯. রবিবাবু পাখি নিয়ে অনেকগান লিখেছেন। পাখি আমার একলা পাখি, খাঁচার পাখি বলে প্রমুখ। তিনি অবশ্য হাঁস-মুরগিকে পাখি মনে করতেন কিনা জানি না। আমরা মনে করি না।

আমরা তাহাদের হত্যা করে গভীর শীত আর আতপে রেখে দিই। ডিপফ্রিজে তারা বরফ হয়ে নিজের অস্তিত সংরণ করে। ১০. একটা ময়ুর পাখির স্মৃতি আছে। আমি আর ছোটাপা পেয়েছিলাম কাশবনে একটা ময়ুর। উঠা নাচতে পারতো।

ওটা একটা পুরুষ ময়ূর। ব্যাপ্ত পালক। একটা কুৎসিত লোক এসে দাবী করলো এই নর্তকপাখিটি তার। সুতরাং সে নিয়ে গেলো। কেবল একটা পেখম আছে আমাদের কাছে।

পাখিটি অনেকদিন শিকিপাখা হয়ে গেছে। ১১. উঠানের ছায়ায় চলে আসে গাঁয়ের সকল আকাশ। আকাশভর্তি পাখি। কাকপাখি। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর চোখ ইহাদের।

টলটলে দিঘি। কাকপাখি ডাকে কাকলি, কা কা নয়। কাক থেকে কাকলি। জীবনানন্দ বলেছেন, সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে অথবা কাকচক্ষু জল। ১২. পাখিদের মধ্যে খুব সম্ভব বড়কায়া হলো উটপাখি।

উটপাখির ইংরিজি নিশ্চয় ক্যামেলবার্ড নয়। উচ্চতায় এইপাখি মানুষের সমান হয়তো। এই পাখিটির দুঃখ আছে চিরদিন। সুরম্যডানার বহর। এই পাখি উড়তে পারে না।

এই পাখি বোঝে মানুষের কষ্ট। কিন্তু মানুষ উটপাখির কষ্ট বোঝে না। ১৩. পৃথিবীর সবচেয়ে রূপবতী পাখি হলেন চিলপাখি। এতোসুন্দর পাখি আমি আর কোথাও দেখি নি। তিনি যখন শূন্য মাঠের অনেক উপরে চক্রাকারে উড়তে থাকেন।

যখন নিজেকে তার সমক ভাবতে ভাবতে আমি দীঘল হাহাকার। মাঠে তার ছায়া।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।