আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোতা কাহিনী

আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছি!
আমার একটা পোষা তোতাপাখি আছে। পাখিটার বিশেষ বৈশিষ্ট্য অনর্গল মানুষের ভাষায় কথা বলতে পারে। মাঝে মাঝে একটু বেশী বলে ফেলে। ছোটকাল থেকে আমার কাছে আছে। বিভিন্ন কসরত দেখিয়ে, সুরেলা কন্ঠে বিভিন্ন ধরনের গান গেয়ে আমার মন জয় করে নিয়েছে।

ইদানীং দেখি কাজের চাইতে বেশী কথা বলতে পছন্দ করে। এই বাচালতার জন্য টুটি চেপে শ্বাসরোধ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। মারতে পারিনা বড় আফসোস হয়। ******************************************************************** তাকে নিয়ে একবার অনেক দূরের এক গাঁয়ে বেড়াতে গেলাম। আত্নীয়ের বাড়িতে নেমতন্ন ।

যাকে বলে মহাভোজ। তোতারে নিয়ে খেতে বসলাম। খাওয়ার সময় গৃহকত্রী ও অন্যান্যদের সঙ্গে পাশের বাড়ীর এক তোতী আসলো। আমার তোতা পাখিটা আবার ভোজনরসিক। পথের ক্লান্তিতে তার ক্ষিধে যেন একশ গুন বেড়ে গেছে।

আমার সঙ্গে গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষ করে বিরাট এক ঢেঁকুর তুলে সামনের দিকে নজর দিল। এবার সে সুন্দর পেলব পাখনার তোতীরে নয়ন জুড়িয়ে দেখছে। তার হৃৎপিন্ড পর্যন্ত হিম শীতল হয়ে গেল বোধ করি। হায় হায় তোতা দেখি চোখ তোলে না।

তার এহেন কর্মে লজ্জার মধ্যে পড়লাম। চোখ টিপে বোঝালাম এত মানুষের মাঝে আমাকে বেইজ্জতি করিস না তোতা। তারপরও সে চোখ তোলে না। আমার কোন কথাই শোনে না সে। উল্টো পাখা ঝাপটিয়ে আমাকে শাসাতে থাকে।

হেচকা টান দিয়ে হাতে তুলে নিয়ে আসলাম। পথে তার কাকুতি মিনতি শুনতে শুনতে অস্থির। ******************************************************************** বাড়িতে আসার পর তাকে অনেক বোঝালাম কিন্তু সে অবুঝের মত আচরণ করতে লাগল। নাওয়া খাওয়া এক প্রকার ছেড়ে দিল। যে তোতা সারাদিন হৈ হুল্লোড়ে দিন কাটাতো।

কখনও এগাছে কখনও বা ঔগাছে নেচে বেড়াতো আর গান গাইতো সে এখন রানীক্ষেত রোগাক্রান্ত মুরগীর ন্যায় ঘরের কোনে ঝিমানো শুরু করলো। বাধ্য হয়ে নিয়ে গেলাম আত্নীয়ের বাড়িতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তোতীকে পেয়েই দেখি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে তোতা। বেশ খাতির জমিয়ে ফেলেছে। কয়েকদিন ঠিকমত না খেয়ে শরীরের অবস্থা বেশ সঙ্গিন।

তারপরও তার লাফালাফির অন্ত নেই। তোতীরে সঙ্গী করে গাছে গাছে উড়ে বেরাচ্ছে আর সুর করে গান ধরেছে। কখনওবা তারা ফুল বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রজাপতির রূপ ধরে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। বাড়ি ফেরার পালা।

এবারও দেখি কাঁন্না কাটি। তার শখ যেন মেটেনি। এরপরও তোতাকে বেশ কিছুদিন নিয়ে গেলাম তার কাঙ্খিত গন্তব্যে। তোতা বেশ ঘনিষ্টতা অর্জন করলো তোতীর। ******************************************************************** একদিন তোতাকে বেশ উত্তেজিত অবস্থায় দেখা গেল।

বেশ লাফাঝাপা করছে আর বাড়ির এপাশ থেকে ওপাশে দৌঁড়া দৌঁড়ি করছে। জিজ্ঞেস করলাম "তোতা তোর কি হয়েছে?" আমাদের পাড়ার লাল্লু তোতা আমার তোতীরে নিয়ে এসেছে সে জবাব দেয়। তোর তোতীরে নিয়ে এসেছে মানে? হ্যা ওস্তাদ সে ঘর সংসার শুরু করেছে লাল্লুর সঙ্গে। কপটসুরে বললাম "তাই বলে এরকমভাবে লাফালাফি করবি?" কি করবো ওস্তাদ? এতদিনের সাজানো স্বপ্ন এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেল যে। ******************************************************************** তোতার এক কঠিন ব্যামো শুরু হলো।

সারাদিন লাল্লুদের বাড়ির দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। খাওয়া দাওয়ার কথা একদম ভুলে গেল। অনেক চেষ্ঠা সত্ত্বেও তাকে একটা দানা পানি খাওয়াতে পারলাম না। শরীর শুকিয়ে কাষ্ঠপ্রায়, পাখনা ঝরে চেহারা কদাকার। একদিন সকালে মৃতবৎ আবিস্কার করলাম তাকে।

তার মৃত্যু কষ্টটাকে সহজ করার জন্য এক বোতল বেগুন ক্ষেতের পোকা মারা ঔষধ খাইয়ে দিলাম। পা দুটো ধরে চ্যাং দোলা করে জীর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত একটা বাড়ির কাছে বিশালাকার বট গাছের নিচে রেখে আসলাম আর আমিও কয়েকদিন অন্তরীণ থাকলাম। ছবিসূত্রঃ আন্তজাল।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।