আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্র ঠাকুর এবং তাহার পূর্ববঙ্গ

নিজের বিষয়ে কিছুই বলিবার নাই

আসসালামু আলাইকুম, আজ ২৫ শে বৈশাখ। আজ কিনা রবীন্দ্র ঠাকুরের জন্মদিন। যে-কবি গান লিখিয়াছেন কবিতা লিখিয়াছেন গল্প লিখিয়াছেন উপন্যাস বানাইয়াছেন এমন কি নোবেল পুরস্কার বাগাইয়াছেন তাঁহাকে উপেক্ষা করিবার সাধ্য কাহারও নাই। অন্তত অবলা বাঙালির তো না-ই। রবীন্দ্র ঠাকুরকে নিয়া পরাধীন পশ্চিমবঙ্গের মাতামাতি তবু খানিকটা হইলেও বুঝিতে পারি।

রবীন্দ্রনাথকে লইয়া তাহারা নিজেদের দীনতার প্রতিশোধ লইতে চাহিতেছে। মুখে স্বাধীনতার কথা বলিতে পারে না, রবীন্দ্রনাথ লইয়া অন্যদের বুঝাইতে চেষ্টা করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিগণ হেলাফেলার পাত্র নহে। কিন্তু স্বাধীন বাংলার মাতামাতি খানিকটা অবোধ্য রহিয়া গিয়াছে। অনেকেই বলিয়া থাকেন, রবিবাবু নিজেও পূর্ববঙ্গের প্রতি তাহার দরদের কথা নানাভাবে লিখিয়া গিয়াছেন। কীভাবে তিনি বোটে ( ঠাকুর যে-কারণে ট্যাগোর হইয়াছেন, বাংলার নৌকা সেই কারণেই কি বোট?) চড়িয়া পদ্মা, আত্রাই প্রভৃতি নদীতে চড়াইয়া বেড়াইতে ভালো বাসিতেন।

তিনি শুধু ভ্রমণ করিতে নয়, তাহার পিতৃদত্ত জমিদারির দেখ-ভাল করিতেই পূর্ববঙ্গে আসিতেন। পূর্ববঙ্গ বরাবরাই মুসলিম-প্রধান অঞ্চল। এখনও তাহাই। এইটা জুলুমের কথা নয়। ঐতিহাসিক সত্য।

রবীন্দ্রনাথের বোট যাহারা ঘাম ঝরাইয়া টানিতেন তাহারা মুসলমান ছিলেন। যাহারা তাহাকে খাজনা দিতেন তাহাদের বেশীরভাগ মুসলমান ছিলেন। তিনি নাকি দিনের পর দিন বোটে চড়িয়া প্রকৃতি মানুষ দেখিতেন। তাহা সত্য হইলেও মুসলমানের মসজিদও তাহার চোখে পড়িবার কথা। তাহার রচনায় ''মসজিদের'' কথা নাই।

তিনি নদীতে-নদীতে গায়ের মেয়েদের স্নানের দৃশ্য দেখিয়াছেন। তাহা হইলে নিশ্চয় মসজিদ হইতে আজানের ধ্বনিও শুনিয়াছেন। তাহার রচনায় 'আজান' শুনিতে পাওয়া যায় না। তিনি যখন এই অঞ্চলে বিস্তর ঘোরাঘুরি করিয়াছেন মাসের পর মাস বসবাস করিয়াছেন, তখন নিশ্চয় মুসলমানদের রোজা-র পার্বন তাহাদের ঈদ-উৎসব তাহার চোখে পড়িয়াছে। কিন্তু ঠাকুরের লেখায় রমজানের কথা নাই।

ঈদ-উৎসবের কথা নাই। কোরবানীর ঈদ লইয়া তাহার অস্বস্তি থাকাটা স্বাভাবিক বলিয়া মানিয়া নিতে পারি। কারণ সেই সময় বিস্তর গরু জবেহ করা হইয়া থাকে। কিন্তু রমজানের ঈদ? অথচ রবি বাবুর রচনায় পূজা কথা রহিয়াছে। মন্দিরের কথা রহিয়াছে।

শ্মশানের কথা রহিয়াছে। কিন্তু গোরস্থানের কথা নাই। তিনি একেশ্বরবাদী ব্রাহ্ম ছিলেন। তাহার পরেও তাহার রচনায় দেবদেবীর অভাব নাই। কিন্তু মুসলমানের নামাজ-রোজা-হজ্জ-যাকাত তো নাই।

তাহাদের ফেরেশতার কথাও নাই। নবী-রসুলের কথা নাই। খলিফাদের কথা নাই। পূর্ববঙ্গের জমিদারি দেখাশুনা করিতে আসিলে সেখানকার প্রকৃতি তাহাকে টানিলেও এখানকার বেশীরভাগ মানুষ সম্পর্কে তিনি উদাসীন ছিলেন। কারণ একে এইখানকার মানুষ ছিলো দরিদ্র আর নিরক্ষর।

তাহার উপর মুসলমান। যাইবেন কোথায় ঠাকুর? মানুষকে বাদ দিয়া তিনি প্রকৃতি লইয়া মাতিলেন। এখন প্রশ্ন হইতেছে প্রকৃতি কি একজন মানুষের নিকট মানুষের চাহিতেও বড়ো? অন্তত রবীন্দ্র ঠাকুরের নিকট বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্বঙ্গ) মানুষ যে উপেক্ষার সামগ্রী ছিলো তাহা বুঝিতে অসুবিধা হয় না। তাহার পরেও আজ এই সাহিত্যিকের জন্মদিন। একজন পূর্ববঙ্গবাসীর উত্তরাধীকার হিসাবে তাহার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করিতেছি।

সকলে ছহি-ছালামতে থাকিবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।