. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া...
রবীন্দ্র রসবোধ—২
ভদ্রতা
বোলপুর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ট্রেনে কলকাতায় আসছিলেন।
সংগীরা ছিলেন অন্য কামরায়। বর্ধমানে কবিগুরু লেমোনেড
খেয়ে মহা বিপদে পড়ে গেলেন। কারন, উনি নিজের কাছে
কখনো টাকা পয়সা রাখতেন না। ট্রেন তখন ছাড়ো ছাড়ো,
বয়টা উনার অবস্তা বুঝে চলে গেলো।
সেই থেকে কবিগুরু
সঙ্গে কিছু টাকা পয়সা রাখতেন।
যদিও উনি বলতেন, ‘কাছে পয়সা না থাকাই বিশেষ সুবিধে।
কোনো কিছুর দরকার পড়লে, তখন এ পকেট ও পকেট
দু’একবার হাতড়াতে শুরু করলে, সঙ্গে যিনি থাকেন—
বিশেষ করে করুনহৃদয়া হলে তো কথাই নেই, .........
বলে ওঠেন, ‘ব্যস্ত হবেন না, ও আমি দিয়ে দিচ্ছি।
বলা বাহুল্য, বিন্দুমাত্র ব্যস্ত হইনি, তবু মুখের ভাবটা
যথাসাধ্য নিরুপায় এবং করুন মুখ করে বলা যায়, আহা!
তুমি আবার কেন কষ্ট করে—না, না, সে কি!!!
--এই রকম করে বেশ ভাল ভাবেই চলে যায়। ।
........................................................................। ।
Brain
এটা একটু খাবেন? রোজ রোজ আপনাকে কি নিরামিষ খাওয়াব
ভেবে পাইনে। বললেন মৈত্রেয়ী দেবী।
“ও পদার্থটা কি”?
“Brain”.
“এই দেখ কান্ড, এ তো প্রায় অপমানের সামিল! কি করে ধরে নিলে ঐ পদার্থটার আমার প্রয়োজন হয়েছে? আজকাল কি আর ভাল লিখতে পারছিনে? বিশ্বকবির কবিত্ব শক্তি হ্রাস হয়ে আসছে? থাক, সন্দেহ যখন একবার প্রকাশ করেই ফেলেছ, তখন শুরু হয়ে যাক!!!!
........................................................................
আলুবাবু
দ্বিতীয় যাত্রায় মংপু পৌছেই কবি বললেন, “ওরে আলু, আমার সেই পুরীর টাকার থলিটা সাবধানে রাখিস, এখানে আবার বলতে নেই,-----সকলের স্বভাব তেমন সুবিধের নয়।
আলু নামের উতপত্তি জানো তো? ওর একটা মজবুত রকম সংস্কৃত নাম ছিল, কিন্তু সে এখন আর কেউ জানে না, যেদিন শুনলুম ও পটোলের ভাই, সেইদিন থেকে ও আলু। আজকাল আবার দিশী আলুতে কুলোচ্ছেনা, তাই বলি পটেটো!
আমার একদিকে বলডুইন এক দিকে পটেটো...... জোরালো সব নাম”।
তা পুরীর টাকার থলিটা কি? “ওই দেখ, ঠিক দৃষ্টি পড়েছে। যার যেই স্বভাব। পুরীতে পার্স উপহার দিয়েছিল।
জানো, ওর মধ্যে আছে তাজা উনিশ টাকা আট আনা। তা যে জায়গায় এসেছি, এখন সামলে রাখতে পারলে হয়”।
........................................................................
আলোর খেলা
সন্ধ্যে-বেলায় বারান্দায় একটা চৌকিতে কবি বসতেন। সামনের পাহাড়ের গায়ে একটি একটি করে আলো জ্বলে উঠত। এইটি কবির দেখতে ভারী ভাল লাগত।
“ওকি ও, অন্ধকারে মাঠের মধ্যে আমাদের মহামান্য পটেটো আর ডাক্তার (মৈত্রেয়ীর স্বামী) কী করছেন? আলু যখন আছে তখন মনে হচ্ছে আজ একটা কান্ড ঘটবেই”।
সামনের পাহাড়ে চিত্রিতারা(ছোট বোন) আছে, তারা আলো দিয়ে এখুনি আমাদের কথা বলবে। আমাদের নিজেদের কোড আছে। তাই ওরা আলো নিয়ে তৈ্রী হচ্ছেন”।
“ও বাবা, এতো ব্যাপার কম নয়।
সুচিত্রা দেবী বিরহিনী বসে আছেন, আর এখান থেকে ভগ্নীপতি আলোর দুত পাঠাবেন। ও হে ডাক্তার, এ যে মেঘদুত কেও ছাড়িয়ে গেলো। ঐ যে জ্বলছে আলো। এতোটা বাড়াবাড়ি,- তুমি সহ্য কর কি করে?—আবার হাসে, এত হাসি কেন? বারবার বলেছি
আমার কথায় কখনো হেসোনা তোমরা। আমি তো ঠাট্টা করতে পারিনে, আমার যে হিউমার বোধ নেই তা প্রমান হয়ে গেছে, জানো না? একজন প্রফেসার প্রমান করে দিয়েছেন লিরিক কবিদের হিউমারের বোধ থাকেনা।
অকাট্য তার সব যুক্তি। কাজেই হয় মানতে হয় আমি কবি নয়, --এত কষ্টের কবি-খ্যাতিটি খোয়া যাবে? কাজ কি, তার চেয়ে আমার
কথায় তোমরা আর হেসোনা”।
........................................................................
জামা চুরি
একদিন রাত্রে প্রচন্ড ঝড় উঠল একেবারে হঠাত। কবির ঘরের স্কাই লাইট খোলা ছিল। মৈত্রেয়ীরা ভাবনায় পড়ে গেলেন।
স্বামী, স্ত্রী দু,জনে আস্তে করে কবির ঘরে ঢুকে জানালা বন্ধ করে, নিঃশব্দে কবির গায়ে কম্বল ঢাকা দিয়ে চলে এলেন। পরদিন সকালে উঠেই কবি বললেন, “ কাল তোমরা স্বামী-স্ত্রী
মিলে কি কান্ডই করলে! সে এক সমারোহ ব্যাপার! আমি চুপ করে দেখছি যে কি দুর্ঘটনা ঘটে”।
“আপনি জেগে ছিলেন? আমরা কিছু তো বুঝতে পারলুমনা”।
“বুঝতে না দিলেই বোঝা যায় না। রাত-দুপুরে এসে জানালা বন্ধ করছেন, পাছে ভুমিকম্প ঢুকে পড়ে।
দু’জনে দিব্যি আমার দুটো জামা চুরি করে......
“আহা আপনার জামা কেনো চুরি করব”?
“আবার বলে কেন চুরি করব? ঐ রকমই স্বভাব বলে। স্পষ্ট দেখলুম আমার মত জামা”। “ওতো ড্রেসিং গাউন”।
ফস্ করে একটি ইংরেজি নাম বলে দিলেই হল,-- যাক্ যা যাবার তা যাবে, একলা চলেছি এ ভবে, জামা যার লবার সে লবে”।
........................................................................
বয়স তাঁকে ছোঁয়নি
"বয়স হলেই বৃদ্ধ হয়ে যে মরে
বড় ঘৃণা মোর সেই অভাগার' পরে
প্রাণ বেরোলেও তোমাদের কাছে তবু
তাই তো ক্লান্তি প্রকাশ করিনে কভু"
এ কথা যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে কত সত্য তা যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, সবাই জানতেন।
আশি বছর বয়সেও নবযৌবনের প্রতীক কবি, শারীরিক কোনো দুর্বলতা, রোগের ক্লান্তি, কিছুই তাঁর মনকে স্পর্শ করতে পারত না। তিনি সহাস্য পরিহাসে আলাপে কৌ্তুকে আনন্দে মুখরিত করে রাখতেন কাছের মানুষদের।
কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু হাসিমুখে, কবিতার ঝর্ণায়, সুরের প্রবাহে, সহাস্য কৌ্তুকে শরীরের সমস্ত দুঃখ গোপন করেছেন। কাউকে এতটুকু দুঃশ্চিন্তা দেয়া দূরের কথা, আনন্দে মাতিয়ে রেখেছেন চারপাশের আবহাওয়া।
মানুষের জীবন কত আনন্দোজ্জ্বল, কত প্রাণরসে পরিপুর্ণ, কৌ্তুকে সুস্নিগ্ধ হতে পারে তা তাঁকে না দেখলে কেউ কল্পনা করতে পারত না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।