‘কষ্ট সুখের দুয়ার খুলে, পুরানো সকল জড়তা ভুলে,
এসো মনের জানালা খুলে, বরন করি নতুন বছর’
‘শুভ নববর্ষ ১৪১৭’
তপোবহ্নির শিখা জ্বালো জ্বালো, নির্বাণহীননির্মলআলো, অন্তরেথাকজাগি' কবির এই আহ্বানের মতোই নতুনস্বপ্ন, উদ্যমও প্রত্যাশার আলোয় রাঙানো নতুন বাংলা সাল, স্বাগত বাংলা ১৪১৭। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের ভাষায় আরও বলাচলে _ 'মুছেযাকগ্লানি, ঘুচেযাকজরা, অগ্নিস্নানেশুচিহোকধরা। রসেরআবেশরাশি, শুষ্ককরেদাওআসি, মায়ারকুজ্ঝটিকাজালযাকদূরেযাক। ...এসো, এসো, এসোহেবৈশাখ। '
বাঙালীর সর্বজনীন উৎসবের আনন্দময় দিন আজ পয়লাবৈশাখ।
দেশের সর্বত্রই প্রাণোচ্ছলতা ও আনন্দের বন্যা বইবে আজ নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর বহুমাত্রিক এ উৎসবে। গ্রীষ্মের তীব্র খরতাপ উপেক্ষা করে দেশের প্রতিটি পথে, মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে কোটি মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য, উৎসব মুখরতার একবিহ্বলতা। কারণ ধর্মান্ধ অপশক্তির কূটষড়যন্ত্র, কুসংস্কার, কূপমূণ্ডকতার বিরুদ্ধে লড়াই করবার অনুপ্রেরণা দেয় এই পয়লা বৈশাখ। নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। বুক ভরা তেমনি প্রত্যাশা নিয়ে নতুন উদ্যমে, নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ জাতি আজ উদযাপন করবে।
চিরাচরিত ঐতিহ্য অনুযায়ী ধর্ম, বর্ণ, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলে মিলে মেতে উঠবে বৈশাখী উৎসবে। অন্তরে থাকবে জাতীয় কবি নজরুলের সেইগান_ ' তোরা সব জয়ধ্বনি কর, তোরা সব জয়ধ্বনি কর। ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখীর ঝড়...এই সুর বাণীর মধ্য দিয়ে বাঙালী নতুন বছরের সব অপ্রাপ্তি ভুলে গিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
আজ বদলে যাবে রাজধানী ঢাকার দৃশ্যপট। শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলায় বর্ণাঢ্য হয়ে উঠবে শহর।
বরাবরের মতোই রমনা বটমূলে ভোর সোয়াছ'টায় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছায়ানট এবারও বাদ্যযন্ত্রের সুরে বৈশাখকে স্বাগত জানাবে। তার পরই শুরু হবে ছায়ানটের সমবেত ও একক কণ্ঠের পরিবেশনা। তারপর রমনা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ধানমণ্ডি লেকের পাড়, সংসদভবনসহ শেরেবাংলানগর, গুলশান, মিরপুর, প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্সইউনিটি, পুরনো ঢাকা অর্থাৎ এককথায় পুরো ঢাকা শহর পরিণত হবে উৎসবের নগরীতে। ভোর থেকেই নগরীতে নামবে আনন্দ পিয়াসী নগরবাসী। বৈশাখী রংলাল-সাদায় বাহারি নকশা করা শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া থাকবে নারীর বসন।
পায়ে আলতা, হাতে মেহেদি আর খোঁপায় থাকবে তাজা ফুলের মালা। পুরুষের পোশাক ফতুয়া-পাঞ্জাবিতে থাকবে লাল-সাদার আধিপত্য। তবে লাল-সাদার সঙ্গে এবারের বৈশাখে হলুদ, কমলা, সবুজ, নীল, কালো সহ অন্যান্য রঙের পোশাকও দেখা যাবে তরুণ-তরুণী সহ সব বয়সী মানুষের গায়ে।
দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলেও বৈশাখকে বরণ করে নিতে বসবে বৈশাখী মেলা, লোকজ গানের পালাও যাত্রাপালা। এসব আয়োজনে গ্রামের সহজ-সরল মানুষরা রাতভর মেতে থাকে নির্মল আনন্দে।
বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী খাবার ইলিশ-পান্তাছাড়াও, এদিন ঘরে ঘরে তৈরি হবে মুখরোচক পিঠা, পায়েস, বিভিন্ন দেশীয় নানা ধরনের পিঠা। শহরের বাসাবাড়িতে রান্না হবে খাঁটি বাঙালী খাবার। কায়মনে বাঙালী হয়ে ওঠার বাসনা ছাড়া সব কিছুই তুচ্ছ মনে হবে এদিন সকলের।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাকার আজ নববর্ষে আমাদেরও প্রত্যাশা: 'এসো, এসো, এসোহে বৈশাখ, তাপস নিঃশ্বাস বায়ে... মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক... মুছে যাক গ্গ্নানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।