বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া : নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত
নিজেদের কৃতকর্মের কারণেই নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেন, পক্ষপাতমূলক ভূমিকার কারণে এ নির্বাচন কমিশনের আর পদে থাকা উচিত নয়। এ কমিশন গঠন করা হয়েছিল তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনের লক্ষ্য পূরণের জন্য। এ কমিশনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিকাশ ও মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে না। তারা বলেন, সরকারের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে এসে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তার ভূমিকা রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের অন্য সদস্য ও কর্মকর্তাদের ভূমিকায় স্পষ্টতই প্রমাণ করে তারা সবাই সঙ্কীর্ণদলীয় মনোবৃত্তিতে আবদ্ধ।
গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই হচ্ছে একমাত্র উপায়। আর নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। যেহেতু নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, সেহেতু তাদের আর পদ আঁকড়িয়ে থেকে গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ : বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও টিআইবি ট্রাস্টি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেছেন, একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল এখন ক্ষমতায়।
নিজের প্রার্থীকে বিজয়ী করে জনমত যাচাইয়ের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সরকার সবধরনের রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজে লাগাবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছে বলে আমি মনে করি না। হয়তো তারা চেষ্টা করেছে। যেহেতু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এ কারণে এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণই নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায়।
সরকারের হস্তক্ষেপে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়ে অতীতেও নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের পদত্যাগ করতে দেখা গেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনেরও বিষয়টি মূল্যায়ন করে দেখা উচিত। কেননা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাও বাধাগ্রস্ত হবে। আমার ওপর একটি দায়িত্ব এসেছে। আমি যদি ওই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হই, তাহলে ওই পদ আঁকড়ে থাকার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামান : বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেছেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। উপনির্বাচনের নামে ভোলা-৩ আসনে আমরা যা দেখেছি সেটাকে প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু বলার উপায় নেই। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ উপনির্বাচনে যে কোনো মূল্যেই জিততে হবে—সরকারি দলের মধ্যে এ ধরনের একটা প্রবণতা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করা গেছে। আর সরকারি দলের প্রার্থীকে জিতিয়ে দিতে হবে—তা না হলে চাকরি থাকবে না, এ ধরনের মনোভাব দেখা গেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনের অপর সদস্যদের মধ্যে।
এ কমিশনের মাধ্যমে আর যাই হোক, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। নির্বাচন কমিশনের পদে থাকা কতটা যুক্তিসঙ্গত গণতন্ত্রের স্বার্থেই সিইসিসহ অপর সদস্যদের এটা ভেবে দেখা উচিত।
আসাফউদদৌলা : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সচিব আসাফউদদৌলা বলেন, ভোলার-৩ উপনির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক ভূমিকা রেখে এরই মধ্যে বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে, এটাও বলা যায় না। কেননা গোটা নির্বাচন কমিশনই সরকারদলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করানোর জন্য কাজ করেছে।
গোলযোগ হওয়ায় নির্বাচন কমিশন ৯টি ভোটকেন্দ্রের ভোট বাতিল করল। এ ঘটনার তদন্ত ও অনুসন্ধান করে দোষীদের শাস্তি দেয়ার আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা নির্বাচন সুষ্ঠু ও খুব সুন্দর হয়েছে বলে ঘোষণা দিলেন। এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন ভূমিকার কারণেই নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। ন্যূনতম মানমর্যাদা থাকলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ গোটা নির্বাচন কমিশনের ভোটের দিনই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। আমি জানি না নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মানমর্যাদার লেভেল কতটুকু।
তারা যদি কোনো ভদ্র ঘরের অধিবাসী হয়ে থাকেন, তাহলে পদত্যাগ করবেন। আর যদি তারা পদত্যাগ না করে পদ আঁকাড়ে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অপর সদস্যদের মানমর্যাদার লেভেল বলতে কিছুই নেই। তবে এটা বলা যায়, পদ আঁকড়ে পক্ষপাতমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করার অধিকার নির্বাচন কমিশনের নেই।
ড. বদিউল আলম মজুমদার : স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র কতটা মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তা ওই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হলে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিরক শাসন ব্যবস্থা শুধু যে বাধাগ্রস্ত হবে তাই নয়—গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য।
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন করার দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের ওপর। পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে আমি যতটা দেখতে পেরেছি, তাতে মনে হচ্ছে ভোলায় নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এটা বোঝা উচিত ছিল, তারা সরকারের অধীনে নয়। সাংবিধানিকভাবেই নির্বাচন কমিশন একটি সংস্থা। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের একটি রুটিন ওয়ার্ক।
নির্বাচন কমিশন যদি এ রুটিন ওয়ার্কটি করতে না পারে, তাহলে কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পদে থাকার কোনো আইনগত অধিকার নেই।
তথ্যসূত্র : দৈনিক আমারদেশ, ২৯.০৪.২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।