জলাজঙ্গলার মধ্যে দোতলা দালানের খসে পড়া প্লাস্টারের ভিতর থেকে ইটগুলো বের হয়ে আছে, বারান্দার রেলিঙের উপর কয়েক স্তর ধুলার আচ্ছাদন, ছাদ থেকে ঝুল ঝড়ছে, ভাঙা কয়েকটি জানালার কাঠ ঝুলছে। দেয়ালের মাঝে মাঝে শ্যাওলার আস্তর ভরে কালচে রং ধারণ করেছে। দালানের পাশে অশ্বত্থ গাছ মোটা গুঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছে। গুঁড়িগুলো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠেছে দেখতে অনেকটা মিথের কোনো মূর্তির মুখের মতো লাগছে। অশ্বত্থ গাছের চারদিক গোল করে বাঁধানো, এর মাঝে কোথাও কোথাও মেঝে খসে গেছে, ভিতরের কয়েকটা ইট চোখে পড়ছে।
গাছটির পাতাগুলো ছড়িয়ে ঝুলে গেছে চারধারে। গাছটির পিছনে পচা পাতা ও কচুরিপানায় ভরা পুকুর আর ধারে ভাঙাচুরা ঘাট। পুকুরের ঘাটে মুখ ভাচকানো, এবড়ো থেবড়ো মূর্তি। পুকুর আর অশ্বত্থ গাছের মাঝখানটায় জোনাকি পোকা উড়ছে, পাতার ঝাঁকের ফাঁকে ফাঁকে চাঁদ উঁকি মারছে। আলো বলতে এইটুকুই।
দোতলা বারান্দার শেষপ্রান্তে একটা হাতল ভাঙা আরাম চেয়ারে বসে আছেন উজ্জ্বল গৌর বর্ণের সাদা লম্বা দাড়ির এক ব্যক্তি। মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ তিনি হেসে উঠেন। অশ্বত্থ গাছের গুঁড়িতে পিঠ ঠেস দিয়ে কুচকুচে কালো এক লোক বসে আছেন, তার গাল ভরতি কাঁচাপাকা দাড়ি, মুখের চাপাটা ভাঙা।
এ্যামন একটা পরিবেশে গদ্যকার কেন, কী করে এল Ñ ইত্যকার প্রশ্ন এই গল্পের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। শুধু এইটুকু বলা যায়, খানিকটা শুনে, কিছু মনগড়া কল্পনা মিশিয়ে একটা চিত্রগল্পের মিকচারের মতো কিছু একটা খাড়া করা হয়েছে।
তবে মিশটা খুব সূক্ষ্ম হয়নি।
বিরাট সদর দরজার দুই পাশে সিংহ মুখের মূর্তি। এই সদর দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকলে দু’পাশে চোখে পড়ে বিশাল বাগান। ঝক্ঝক্ েসাদা দেয়ালের কয়েক হাত সামনে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গাছ । এই সীমারেখার মাঝখানে বারান্দা ঘেরা দোতলা দালান।
দালানের গায়ে কারুকার্য। বাড়িটির পিছনে পাথরে বাঁধানো পুকুর-ঘাট, ঘাটে চকচক করছে একটি শিশুর মূর্তি। পুকুরের চারিপাশে উঁচু উঁচু নারিকেল গাছ। পুকুর আর বাড়ির মাঝে অশ্বত্থ গাছ, মাঝখানে অশ্বত্থ গাছটির চারধার গোল শান দিয়ে বাঁধানো । কাঠের তৈরী ভারি দরজার গাটি কারুকার্যময়।
দোতলার বারান্দায় হাতে লাঠি নিয়ে মাথা উঁচিয়ে, বুক ফুলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছেন বিরাটকায়, ফর্সা এক পুরুষ আজিজ খাঁ। দরজা খুলে গেল। তিনি বের হন, সামনে দাঁড়িয়ে আছে ঘোড়ার গাড়ি, তিনি গাড়ির গদিতে বসলেন। ঘোড়ার গাড়ি সদর দরজার দিকে যাচ্ছে। বাগানের মালিরা আজিজ খাঁ যাবার সময় কাজ থামিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।
সদর দরজার দুই ইয়া জোয়ান দারোয়ান দরজা খুলে বুক ফুলিয়ে সালাম দিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে আছে। দালানের পিছনে অশ্বত্থ গাছের তলে দাঁড়িয়ে কুচকুচে কালো বর্ণের একজন কিশোর মালি রোজ সকালে এই দৃশ্য দেখত।
মালি ছেলেটি ছাড়াও দোতলার জানালাটা একটু ফাঁক করে আজিজ খাঁর ঘোড়ার গাড়ি যদ্দূর দেখা যায় ততদূর পর্যন্ত তাকিয়ে দেখত এক কিশোরী। তারপর ছটফট করে লাফিয়ে লাফিয়ে এই ঘর থেকে ঐ ঘর ছুটোছুটি করে একবার পুকুর, একবার গাছ-গাছালির দেখে দেখে সময় কাটত তার। কিন্তু পুকুরঘাটে, গাছ-গাছালির কাছে সে যেত না, অন্দরমহল থেকে বাইরে যাওয়া তার জন্যে নিষিদ্ধ ছিল।
পুকুরের উপর সূর্য কিরণের চকমকি, ঘাটের উপর পড়া গাছের ছায়ার আকারের পরিবর্তন তার চোখে পড়ত। সে লক্ষ করত গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে আলো উঁকি মারে আবার ঢেকে যায়, মাঝে মাঝে মনে হত হঠাৎ এলো বাতাসে গাছের সব পাতা এক ঝাঁক পাখির মতো একসাথে আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে। মেঘ ভেসে যেতে দেখে সে কল্পনায় আঁকত নানা ছবি Ñ কখনও বুড়োর দাড়ি, কখনওবা সাদা ডিঙির ভেলা, কখনও খুব উঁচু পাহাড় খুব ছোটবেলায় তার বাবার সাথে যে-ই পাহাড় সে দেখেছিল। মেয়েটির নাম আমিনা এবং আজিজ খাঁ-র তৃতীয় ও তখন পর্যন্ত শেষ স্ত্রী হবার কারণে সে এই দালানের ভিতরে থাকতে পারছে। বাইরে তাকাবার সময় কখনও কখনও চোখে পড়ে কুচকুচে কালো রঙের একটি ছেলেকে যে কখনও মাটি খুঁড়ে, চারা লাগায়, মাঝে মাঝে তার বাজানো বাঁশির সুরও আমিনার কানে আসে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর এলেই আমিনার ছুটাছুটিতে ছেদ পড়ে। আজিজ খাঁ তখন ঘরে ফেরেন, আহার করে কিছু সময় বাসায় অবস্থান করে আবার বেরিয়ে যান। এইটুকু সময় দালানের অন্দরমহলে থাকে ভয়ার্ত থম্থমে পরিবেশ, দম বন্ধ করা ভাব। বেলা একটু পড়লেই আজিজ খাঁ আবার বাইরে যান। আর, আমিনার ভয়ংকর দম বন্ধ ভাবটা কাটে, সে আবার জানালা খুলে।
বাড়ির বাইরের অশ্ব^ত্থগাছের পাশে লণ্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কুচকুচে কালো কিশোর মালিকে। উঁচু দেয়ালে ঘেরা বিশাল কম্পাউন্ডের ভিতর এমনটি প্রতিদিনের ঘটনা ছিল।
তবে এর মধ্যে মাঝে মাঝে কিছু ঘটনার কথা আমিনার কানে ভেসে আসে যা শুনে তার ভিতর ভয়ংকর আতংক হয়, গলা শুকিয়ে যায়, অস্থির লাগে। যেমন, একদিন শুনল যে আজিজ খাঁ-র দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় কাবুল মিয়ার ছয় বছরের ছেলে মারা গেছে। মৃত ছেলেটির দাফনের আয়োজন চলছিল।
কোনো কারণে তারা আজিজ খাঁ-কে খবর দিতে পারেননি। তারপরও আজিজ খাঁ ছুটে গেছেন। তাকে খবর না দেওয়াটিকে তার মনে হয়েছে তার প্রতি অবহেলা, তাকে উচ্চ সম্মান না দেওয়া। তা-ই মৃত ছেলের পাশে মা যখন বুক চাপড়িয়ে কাঁদছে Ñ তখন আজিজ খাঁ লাশ ছিনিয়ে নিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। লাশটিকে বনের পাশে ফেলে দেওয়া হয়।
ছেলেটির মা ও বাবা তার পাশে বসে থেকে দেখেন কেমন করে দুইটা কালো কুকুর লাশটিকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। মৃতের মা ও বাবার চোখ থেকে র্ঝর্ঝ করে পানি পড়ছে ভেঁউ ভেঁউ করে কাঁদছে। তাতে অবশ্য আজিজ খাঁ-র কোনো বিকার হয়নি। তিনি বাড়িতে ফেরেন এবং সারাক্ষণ পায়চারি করতে করতে নিজে নিজে কথা বলতে থাকেন। কথার মধ্যে ‘আমি, আমি, আমি’ শব্দের মাঝে বারবার একটি প্রসঙ্গ আসে যে তার মেজ ছেলে কাবুল মিয়ার পরিবারের একবার একটা উপকার করছিলেন Ñ ছেলেটির মাকে ছেলের জ্বরের ওষুধ কিনবার পয়সা দিয়েছিলেন।
অন্য কামরায় আমিনা ঢোঁক গিলতে থাকে, ভয়ে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আজিজ খাঁ যখন বারান্দায় পায়চারি করে, তখন ভয়ংকর তীব্র একটা আতংক আমিনার উপর ভর করে। সে ছুটতে থাকে। ছাদে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। বাড়ির ভিতরের কারো কাছে অবশ্য আমিনার কান্নার দৃশ্য কোনো দাগ কাটেনি।
শুধু বাড়ির বাইরে দূরে অশ্বত্থ গাছের নিচ থেকে কুচকুচে কালো রঙের মালি দেখে ছাদে দাঁড়িয়ে ভেজা চোখের একজন মেয়েকে। মালিটি কী করে যেন দূর থেকে কান্নার ধ্বনি শুনতে পায়, চোখ থেকে টপটপ করে অশ্র“ পড়ার দৃশ্য দেখতে পায়। মালিটির ভিতরটা কেমন যেন ‘না, না’ করে উঠে।
সেইদিন বিকালে আরেকটি খবর ভেসে আসে। আজিজ খাঁ-র বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কথা বলেছে গ্রামের আঠার বছর বয়সের এক গাতক কবি।
আজিজ খাঁ-র সামনে উঁচু গলায় কথা বলেছে Ñ এই স্পর্ধা সহ্য করা যায় না। পরে খবর ভেসে আসে গাতক কবির জিহ্বা টেনে ছিঁড়ে ফেলে তারপর তাকে তপ্ত বালিতে শুইয়ে রেখে পুরো শরীর গরমে আধা ঝলসানো হয় আর মুখ থেকে গলগলিয়ে রক্ত গড়াতে গড়াতে বালুগুলোর মাঝে রক্তের কণা চিক্চিক্ করতে থাকে। এই ঘটনার পর আজিজ খাঁ আশা রাখে তাকে কখনও কেউ আর উচ্চৈঃস্বরে কিছু বলবে না। তারপরও কী করে যেন ঘটনার কথাটি আমিনার কানে চলে আসে। আমিনা কান চেপে ধরে, মাথা ঘুরাতে থাকে, চোখ দু’টি কোটরের ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে চায়।
হাতে-পায়ে পোড়ার মতো জ্বালা লাগছে। মনে হচ্ছে পুরো শরীর চোখা ধারালো কিছু দিয়ে ছ্যাঁচা হচ্ছে। আমিনা যখন দিশেহারার মতো অন্দরমহলের কোণায় কোণায় ঘুরছে, ঠিক সেই সময়ে অশ্বত্থ গছের নিচে বসে বাঁশি বাজাচ্ছে কুচকুচে কালো রঙের এক ছেলে, বাঁশির সুরটি দূর থেকে খুব মৃদুভাবে শোনা যাচ্ছে তবে সুরের মূর্ছনার মাঝে কোথায় যেন দুঃখ, বেদনা জাগানিয়া অনুভূতি ছড়াচ্ছে Ñ বুকের মাঝে কেমন যেন হুহু শূন্যভাব তৈরি করছে। আমিনা চোখের পানি মুছছে, আবার টপ্টপ্ করে পানি গড়ায়, নাক দিয়ে পানি ঝরে। চোখের পানি, নাকের পানি মুছতে মুছতে চোখ আর নাকে জ্বালা ধরে যায়।
এর মধ্যে আরেক ধরনের খবর আসে। জিহ্বা ছিঁড়বার পর গাতক কবির দেহ যখন উত্তপ্ত বালুতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল তখন খালি গায়ে জায়গায় জায়গায় মাটি মাখানো এলোমেলো চুলের এক ক্ষ্যাপা চাষা বটি হাতে তাড়া করে আসে। চোখ বড় বড় করে, মুখের দাঁতগুলো খিঁচিয়ে, জিহ্বা বের করে সে আজিজ খাঁকে কোপাতে তার দিকে ছুটে আসে। শেষ পর্যন্ত আজিজ খাঁকে ছুঁতে না পারলেও তার এক পেয়াদার হাতে বটির একটা কোপ দিতে পারে, সেই পেয়াদার লাল রক্তের খানিকটা আজিজ খাঁ-র জামাতে, এমনকি তার হাতেও কয়েক ফোঁটা রক্তের ছিটা লাগে। তবে, ক্ষ্যাপা চাষা ততক্ষণে আধা মরা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে, গোঙানির শব্দ শোনা যাচ্ছে, নাক ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে, কপাল আর মুখ বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছে।
সেই রাতে আজিজ খাঁ দোতলার বারান্দার শেষপ্রান্তে এক হাতল ভাঙা আরাম চেয়ারে বসেন। দুই হাতলে তার দুই হাত রেখে একটু ঝুঁকে নিচে অশ্বত্থ গাছটির দিকে তাকিয়ে আছেন, ফর্সা মুখে গাল ভরা দাড়ির ফাঁক দিয়ে মাঝ মাঝে তার হাসি দেখা যাচ্ছে। তারপাশে দাঁড়িয়ে আছে তার মেজো বউয়ের মেজো ছেলে তামান খাঁ। তামান খাঁ চোখের পানি ফেলে, আজিজ খাঁ-র সামনে প্রায় বেহুঁশ হবার ভান করে পরে খুব দরদ মিশিয়ে বলছে যে আরেকটু হলেই ভীষণ বিপদ হতে পারত। আরও যোগ করছে যে আজিজ খাঁ-র আধিপত্যকে এই চাষা মানছে না, এমন চলতে থাকলে অন্যদেরও স্পর্ধা বেড়ে যাবে।
তামান খাঁ ভাল করেই জানে আজিজ খাঁ-র দুর্বলতার কথা যে Ñ কোথাও আজিজ খাঁ পুরো গুরুত্ব না পেলেই, সবাই তাকে নিয়ে পুরো মেতে না থাকলেই সে অস্বাভাবিক ভয়ংকর হয়ে উঠে।
অশ্বত্থ গাছের পাশে মশাল হাতে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি জোয়ান শরীর। অশ্বত্থ গাছটির সাথে মাথা নিচু পা উঁচু করে চাষাটির নিথর দেহটি বাঁধছে তিন জোয়ান। এরপর শাস্তির যেটুকু বর্ণনা পাওয়া যায় তা হল তাকে টাঙ্গিয়ে, শরীরের বিভিন্ন অংশে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে ছ্যাঁক দেওয়া হয়, লোহার রড আগুনে পুড়িয়ে লাল শিক চোখে ঠেসে গলিয়ে দেবার পর পায়ের গোড়ালি ফুটো করে রশি ঢুকিয়ে টান মেরে শরীর থেকে চামড়া ছাড়ানো হয়। আরেকটু তথ্যও পাওয়া যায় যে চাষার প্রাণ বায়ু সাংঘাতিক ছিল, সে মারা যায় নি, তার চামড়া ছিলানো জীবন্ত দেহটি অশ্বত্থ গাছটির সাথে ঝুলে ছিল।
ঝুলন্ত শরীর থেকে টপটপ করে রক্তের ফোঁটা পড়ছিল অঝোরে। আর, আজিজ খাঁর ছোট ছেলে দাশু খাঁ চিৎকার করে বলছে, “বাঘের লেজ দিয়ে কান চুল কাস। তোর কল্লা ফেলে দেব। বউরে বিধবা বানাব। ”
মেঘ ভেসে আকাশের চাঁদকে ঢেকে ফেলে।
হঠাৎ করে জোরে হাওয়া বইতে শুরু করে। শোঁ শোঁ শব্দ হয়, চারপাশ ঝাপসা হয়ে যায়। ঝরঝর করে চোখ বেয়ে কান্নার ফোঁটা পড়ছে আমিনার, প্রবল ছটফটানি হচ্ছে। হঠাৎ তীব্র বেগে দরজা ধাক্কিয়ে আমিনা বের হয়ে গেল, দরজা বাড়ি খাওয়ার প্রচণ্ড শব্দ হল। অশ্বত্থ গাছ থেকে খানিক দূরে দাঁড়ানো মালিটি দেখছে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরা এক মেয়ে ছুটছে, ছুটতে ছুটতে অশ্বত্থ গাছের কাছে পৌঁছে গেল।
মশাল হাতে দাঁড়ানো একদল মুশকো জোয়ানকে পেরিয়ে ঝুলন্ত দেহকে জড়িয়ে ধরে অশ্বত্থ গাছের গায়ের সাথে লেপ্টে গেল। আমিনার দু’চোখ বন্ধ, ডানগালটি গাছের কাণ্ডকে ছুঁয়ে আছে, দু’হাত দিয়ে আমিনা ছাল ছড়ানো দেহটিকে চেপে ধরেছে। কয়েক পলের মধ্যে আমিনা আর ছাল ছাড়ানো দেহটি মিলিয়ে গেল অশ্বত্থ গাছের মাঝে। মুহূর্তের মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি দোতলার কেদারায় ঝুঁকে বসা আজিজ খাঁ দেখলেন, থমকে গেলেন ।
তারপর থেকে এই দোতলা দালানের কাছে দাঁড়ালে দেখা যায়, দোতলা বারান্দার শেষপ্রান্তে এক হাতল ভাঙা আরাম চেয়ারে বসে আছেন উজ্জ্বল গৌর বর্ণের সাদা লম্বা দাড়ির এক ব্যক্তি।
মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ তিনি হেসে উঠেন। অশ্বত্থ গাছের গুঁড়িতে পিঠ ঠেস দিয়ে দিয়ে কুচকুচে কালো এক লোক বসে আছেন, তার গাল ভরতি কাঁচাপাকা দাড়ি, মুখের চাপাটা ভাঙা।
কয়েক পলের মধ্যে আমিনা আর ছাল ছাড়ানো দেহটি অশ্বত্থ গাছের মাঝে মিলিয়ে যাবার পর রাত কাটল, দিন এল। দিন শেষে আবার রাত। আজিজ খাঁ সেই দিন থেকে দোতলার আরাম কেদারায় বসে মাথা ঝুঁকিয়ে অশ্বত্থ গাছের দিকে তাকিয়ে আছেন।
দিনের পর রাত, রাতের পর দিন আসে। প্রচণ্ড তপ্ত লু হাওয়ার পর বৃষ্টি আসে, বৃষ্টি থেমে হিমেল হাওয়া বয়, হিমেল হাওয়া ধীরে ধীরে আরও হিম হয়, পাতা ঝরে পড়ে, আবার নতুন করে জন্ম নেয়। সেইসাথে ফুলের মুকুল ধরে, পাখির কিচির মিচির বাড়ে কেউই থেমে থাকে না শুধু কুচকুচে কালো মালিটি ধ্রুব তারার মতো স্থির। অশ্বত্থ গাছের ঠিক যেখানে আমিনা মিলিয়ে গিয়েছিল সেখানে পিঠ ঠেকিয়ে সে বসে থাকে। মাঝে মাঝে সে নাকি শুনতে পায় এক কিশোরী কণ্ঠ বলছে নতুন ভোর আসছে, নতুন ভোর আসছে....................।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।