আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃক্ষ

www.choturmatrik.com/blogs/আকাশ-অম্বর
একটি অন্তর্দহন ইঞ্জিনের ক্রমশ অন্তর্হিত হুংকার এবং ধূলিমেঘের অনাবৃষ্টির মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এক অতৃপ্ত ছায়া। অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু হলো তার, আরেকটি আকাঙ্ক্ষিত শাব্দিক অন্তর্দহনের। এই ফাঁকে চলো যাই, পায়ে পায়ে এসে দাঁড়াই মরুর বুকে মরীচিকার মত দৃশ্যমান ঐ একাকী ছায়াময় বৃক্ষের সন্নিকটে। না, ছলনাময়ী নয় সে। নয় পরাবাস্তব কিছু।

নিরেট নিখাদ দৃঢ় কষ্টসহিষ্ণু বাকলসর্বস্ব এক বৃক্ষ। শুধু তার নমনীয়তার পরিচয় দিচ্ছে বোধহয় তার ঔরসজাত কচি পেলব পল্লবেরা। চারপাশের ছড়ানো শুকনো মৃতরা গাইছে মচমচে স্তুতিগান। আর সদ্য ফোটা পত্রমঞ্জরীরা যেন অন্তঃসত্ত্বা ঘোষণায় অতিউৎসাহী। জীবন দানকারী রৌদ্রের শিৎকারে অস্তিত্বের দ্যোতনায় সদা দোদুল্যমান মানব-ছায়ার এ কেমন আচরণ, বৃক্ষ? কেন তোমার চরণতলে এসেই তার আকস্মিক অস্তিত্বহীন হওয়ার এই ব্যাকুল প্রয়াস? কেন তোমার কাছেই অশরীরী নিজেকে সঁপে দেয়ার এই স্বতস্ফূর্ত আভাস? কারণ তুমিই যে অবিনশ্বর।

তুমিই যে অলৌকিক। তুমিই যে রহস্যময়। অবগত আছো নিশ্চয়ই, হে বৃক্ষ, তোমার সমৃদ্ধ সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাসে কূটজাল বিছাতে সদা-তৎপর মানব-প্রজাদের ব্যতিব্যস্ততা। তোমাকে নিয়ে বালখিল্যতার দুরভিসন্ধি। আজ এই ক্ষণে তুমিই না হয় তোমার অবগুণ্ঠন খোলো।

নীরবে তোমার লুকিয়ে রাখা সব জ্ঞান তুলে আনো জাইলেম-ফ্লোয়েমের চক্র ভেঙ্গে, ঢেলে দাও সেই পরম সুধা অতৃপ্ত এই মানবাত্মায়। প্রকৃতি সেই কালে যখন বিযুক্ত করেছিলো তোমাকে এই মানব প্রকরণের ত্রুটি হতে বাঁচাতে, সেই তুমি, সেই তুমি কি একাগ্র একনিষ্ঠ চিত্তেই না করে গেছো জ্ঞানের অন্বেষণ! আজ কোথায় লুকিয়ে রেখেছো তোমার সেই সঞ্চিত ভাণ্ডার – তোমার আলেকজান্দ্রিয়া, তোমার আসুর্বানিপল, তোমার বেদ-তওরাত-ইঞ্জিল-কোরান, তোমার উইকি-এন্‌কার্টা? তোমার পরমেশ্বর-জ্ঞান? তোমাদের ভেতরেও কি ছিলো না কোনো সক্রেটিস, কোনো গ্যেটে? অথবা কোনো লালন? কি অমিত শক্তিমত্তা আর সহিষ্ণুতার সাথেই না তুমি অতিক্রম করেছো কোটি-কোটি মুহূর্ত! ধ্যানী তুমি, জ্ঞানী তুমি। মনে আছে কি তোমার? যখন কোন এক মহা-আদিম পরমানন্দদায়ক আধ্যাত্মিক মুহূর্তে কোন এক সুপেয় পানির জলাশয় থেকে কি এক তাড়ণায় অন্যদের হাজার বারণ সত্ত্বেও ‘ট্যেরা ফ্যর্মা’য় উঠে এসেছিলো চারটি নীল-সবুজ শৈবাল? হ্যাঁ, তোমরা কিন্তু ঋণী ওদের একজনের কাছে, ওদের একটি প্রজাতির উচ্চাকাঙ্খার কাছে, যারা আপন করে নিয়েছিলো ঐ পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আর সূচনা ঘটিয়েছিলো তোমাদের মত বহুকোষী প্রাণের। অবশিষ্ট তিনটি-প্রজাতি কিন্তু এখনও হতাশাতেই নিমজ্জিত! তোমরা এখনো ওদের দেখবে হয়তো সাধারণ শৈবালদের কাতারে। অহর্নিশি কাটাচ্ছে যাপিত জীবন! আর ঐ এক মহা-শৈবাল – তোমাদের অস্তিত্বের রূপকার, তোমাদের বিবর্তনের সূচনাকারী – ওকে কি তোমরা বানিয়েছো এডাম কিংবা নোয়া! অথবা কোন ডেমি-গড! তোমরাও কি খেল্‌ছো এক মহা-খেলা? আকাঙ্ক্ষিত ঐ শাব্দিক অন্তর্দহনের ফিরে আসায় কি অ্যাটামাইজ্‌ড হবে তোমরাও?
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.