ভদ্রলোক আমার পাশের বাসায় থাকেন। খুবই বউভক্ত ব্যক্তিত্ব। বউয়ের কথা ছাড়া এক সুতোও নড়েন না। তো ভদ্রলোককে তার বউ বললেন বাজার থেকে পেঁয়াজ নিয়ে আসার জন্য। ভদ্রলোক শুধু এক সুতো না, একদম এক কিলোমিটার খানেক নড়ে গেলেন।
কারণ বাজারটা ছিল বাসা থেকে এক কিলোমিটার দূরে। এক কিলোমিটার দূরের বাজারে পেঁয়াজের জন্য গেলে ফিরতে পনের-বিশ মিনিটের বেশি লাগার কথা না। কিন্তু তিনি সেই যে গেলেন, ফিরলেন টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা পর। বউ তো রেগেমেগে আগুন। যে স্বামী তার অনুমতি ছাড়া একটা কাশিও দেয় না, সে কিনা বাজারে যাওয়ার নাম করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় অপচয় করছে! আরও ঘণ্টা খানেক পর ভদ্রলোক ফিরলেন।
বউ যখন দেখলেন তার হাতে পেঁয়াজের ব্যাগ নেই, তিনি এমনভাবে জ্বলে উঠলেন, মনে হলো মুহূর্তের মধ্যে তিনি ইটের ভাটায় রূপান্তরিত হয়ে গেছেন। তিনি তার দুই চোখে আগুন জ্বেলে বললেন, পেঁয়াজ আননি কেন? ভদ্রলোক ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, বাজারে গিয়ে দেখি পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি। তাই পেঁয়াজ না এনে পেঁয়াজের মতোই অন্য একটা জিনিস নিয়ে এসেছি। বলেই ভদ্রলোক পকেটে হাত দিলেন। হাত দিয়ে একটা কৌটার মতো জিনিস বের করলেন।
তারপর নকল হাসি দিয়ে বললেন, তুমি তো জান পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখে পানি আসে, আবার গি্লসারিন লাগালেও চোখে পানি আসে। তাই আমার মনে হলো পেঁয়াজ আর গি্লসারিন সমান ঝাঁজযুক্ত জিনিস। এ জন্যই পেঁয়াজ না এনে গি্লসারিন নিয়ে এসেছি। প্লিজ, গি্লসারিনটা ট্রাই করে দেখ না তরকারি সুস্বাদু হয় কি না! পেঁয়াজের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে স্বামীরা শুধু গি্লসারিন কেন, আরও অনেক জিনিসই নিয়ে আসতে পারে। বেচারাদের মাথা ঠিক নেই তো! সেদিন আমার এক বন্ধু বলছিল, ভাগ্যিস, প্রতিবছর পেঁয়াজের দাম বাড়ে।
পেঁয়াজ আর রসুন তো প্রায় একই জিনিস। যদি পেঁয়াজের পাশাপাশি রসুনের দাম বেড়ে যেত, তাহলে পুরো সিজন আমাদের অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে হতো। আমি তার কথার ব্যাখ্যা দাবি করলাম। সে বলল, পেঁয়াজের দাম শুনে আমরা অজ্ঞান হয়ে যাই। আর অজ্ঞান হলেই কমন একটা প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়।
সেটা হচ্ছে হাতে পায়ে সরিষার তেল আর রসুন গরম করে দেওয়া। এবার তুই-ই বল, রসুনের দাম বাড়লে কেউ কি চিকিৎসার কাজে রসুন খরচ করতে চাইত? আমার পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মধ্যে ওইদিন যারপরনাই হতাশা লক্ষ্য করা গেল। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। তিনি মাঝারি সাইজের একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, তোর হবু ভাবীর সঙ্গে বিরহ চলতেছে রে। এইভাবে চলতে থাকলে কবে যে প্রেমে ভাঙন শুরু হইয়া যাইবো বলা মুশকিল।
আমি বড় ভাইয়ের প্রতি সমবেদনা জানানোর চেষ্টা করলাম- কেন ভাই, বিরহ চলতেছে কেন? কী হইছে একটু খুলে বলেন তো! বড় ভাই আরেকটু বড় সাইজের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, বিরহ চলতেছে পেঁয়াজের কারণে। আমি প্রায় লাফিয়ে উঠলাম, বলেন কী! পেঁয়াজের কারণে বিরহ চলতেছে? কেন, ভাবী আপনার কাছে পেঁয়াজ দাবি করেছে নাকি? বড় ভাই গলায় রাজ্যের দুঃখ এনে বললেন, নারে, এরকম কিছু না। আমি যেই মেসে থাকি, তোর ভাবীদের বাসাটা সেই মেসেরই একদম সঙ্গে। তোর ভাবীর জানালাটাও আমার জানালার কাছাকাছি। তবে তার রাগী বাবার ভয়ে জানালাটা সে বন্ধ রাখে।
আমি করতাম কী, তাকে দেখার ইচ্ছে হলেই কিছু একটা দিয়ে তার জানালায় ঢিল দিতাম। সে জানালা খুলত। আর ঢিল দেওয়ার কাজে বেশিরভাগ সময়ই ব্যবহার করতাম পেঁয়াজ। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন সেভাবে ঢিলও দিতে পারি না, তার সঙ্গে সেভাবে দেখাও হয় না। উফ বিরহ! আমি কয়েক গজ লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম- পেঁয়াজরে, শেষ পর্যন্ত প্রেমিকের প্রেমের ওপরও ভর করলি ! হায় পেঁয়াজ, খোসাওয়ালা পেঁয়াজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।