আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আওয়ামী এমপির ড্রাইভারও কোটিপতি

ভাল

পেশায় ড্রাইভার। বেতন পান সাকল্যে আট হাজার টাকা। বর্তমান দুর্মূূল্যের বাজারে এই বেতনে কোনোমতে চেয়েচিন্তে দিন কাটানোর কথা তার। কিন্তু তিনি তো আর যেনতেন কারো ড্রাইভার নন। এমপি সাহেবের ড্রাইভার।

আর মূলত এই ‘খেতাবের’ জোরেই দিনকে রাত আর রাতকে দিন করছেন ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মোহাম্মদ আসলামুল হকের ব্যক্তিগত ড্রাইভার হুমায়ুন কবীর জুয়েল। বছর কয়েক আগেও থাকতেন একরুমের টিনশেড বাসায়। এখন তিনি থাকেন হাল আমলের আলিশান ফিটিংসের বাসায়। মিরপুরে জব্বার হাউজিংয়ের যে বাসায় এখন ড্রাইভার হুমায়ুন কবীর জুয়েল থাকেন, সেই বাসার বাড়িওয়ালাকে তিনি শুধু অগ্রিমই দিয়েছেন দুই লাখ টাকা! এমপি সাহেবের ড্রাইভার বলে কথা! শ্যামলীর ব্যান্ডবক্স নামের আধুনিক ধোপাখানা থেকে জামাকাপড় ইস্ত্রি হয়ে আসে তার। এমপি সাহেবের ডিউটি শেষ করে নিজ বাসায় ফেরেন অত্যাধুনিক মডেলের পালসার হোন্ডায় করে।

সেই হোন্ডার পেছনে তার রোজকার খরচ প্রায় আটশ’ টাকা! সম্প্রতি ব্যবসায়িক কাজে এমপি আসলামুল হকের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে যাওয়া একজন ব্যবসায়ীর হাতে ড্রাইভার হুমায়ুন সাড়ে পাঁচশ’ মার্কিন ডলার দিয়ে অনুরোধ করেছেন—‘আমার জন্য একটা ৪০ ইঞ্চি এলসিডি মনিটরের টিভি নিয়ে আসবেন’! আসলামুল হকের ড্রাইভার হিসেবে বেশ ক’বছর ধরে চাকরি করছেন হুমায়ুন। তবে গত সংসদ নির্বাচনে আসলাম আওয়ামী লীগের টিকিটে ঢাকা-১৪ আসনের এমপি নির্বাচিত হবার পর থেকেই যেন কপাল খুলে গেছে ড্রাইভার হুমায়ুনের। গত এক বছরে তার জীবনযাত্রার আধুনিকায়ন এবং ধনসম্পদ ও সহায়-সম্পত্তির বিপুলতার সঙ্গে পেছনের হিসেবটা ভীষণ গোলমেলে। হুমায়ুনের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, গত এক বছরে এমপি সাহেবের ড্রাইভার কোটিপতি হয়ে গেছেন! বন্ধুবান্ধব এবং ঘনিষ্ঠজনদের গর্ব করে হুমায়ুন বলেছেনও—‘আমার টার্গেট একটাই—পাঁচ বছরে পাঁচ কোটি টাকা বানাবো। ’ পেছনের এক বছরে নিজের বেঁধে দেয়া সেই টার্গেট বেশ ভালমতোই পূরণ করেছেন এমপি সাহেবের সুযোগ্য ড্রাইভার।

প্রায় একদশক ধরে যারা ড্রাইভার হুমায়ুনকে দেখে আসছেন, সেই ঘনিষ্ঠজনরা আফসোসের সুরে বলেছেন—‘ভাইরে, ওর হাতে আলাউদ্দিনের চেরাগ আছে। পুরো এলাকায় সে এখন এমপি সাহেবের চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর। যাকে দিয়ে যা ইচ্ছে তাই কাজ করানোর ক্ষমতা রাখে সে। এমনকি স্থানীয় দারুসসালাম থানার ওসি মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে তার দুই নম্বরি ব্যবসা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এমপির কান ভারী করে সেই ওসিকে থানা থেকে বদলি পর্যন্ত করে ছাড়িয়েছে ড্রাইভার হুমায়ুন। ’ এমপি সাহেবের দারুণ ক্ষমতাবান এই ড্রাইভারের নানান অপকর্মে স্থানীয় শাসক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পর্যন্ত অস্থির এবং আতঙ্কিত।

এমপির এই ড্রাইভারের দাপটে খোদ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা পর্যন্ত মর্যাদা হারাচ্ছেন। আমার দেশ-এর কাছে গতকাল দুঃখ করে এমনই এক নেতা জানালেন—‘ভাই কি বলবো, এক ড্রাইভারের যন্ত্রণায় অস্থির আমরা সবাই। এমপির কাছে অনেকবার অভিযোগ করেছি, কিন্তু তিনি কানেই তুলছেন না কিছু। মূলত এমপির আস্কারা পেয়েই এই ড্রাইভার আজ ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত। ’ ড্রাইভার জুয়েল এখন বেশিরভাগ সময় নানা তদবিরে ব্যস্ত থাকেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, এমপি সাহেবের সঙ্গে কখন কে সাক্ষাত্ করবেন সেটা পর্যন্ত ঠিক করে দেন ড্রাইভার হুমায়ুন। আর বিভিন্ন সমস্যায় পড়া এসব সাক্ষাত্প্রার্থীর কাছ থেকে ‘ফি’ আদায়ও তার নিত্যদিনের আয়ের অন্যতম একটা অংশ। তবে তার প্রতিদিনের আয়ের বিশাল অঙ্ক আসে মিরপুরের মাদক ব্যবসা, বাসস্ট্যান্ড, ফলের বাজার, দারুসসালাম রোডের টং ঘর, রাতে রাস্তায় রাখা বাসের টোল, চিড়িয়াখানা এমনকি মাজারের চাঁদাবাজি থেকে। মিরপুর মাজার রোডে মদ-বিয়ার ও হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে শহীদ নামের এক ব্যবসায়ী। এলাকাবাসীর অভিযোগ—অবৈধ মাদক বিক্রির দায়ে জেল খেটে আসা শহীদের এই ব্যবসার মূল নিয়ন্ত্রক এমপির ড্রাইভার হুমায়ুন।

শহীদের এই মাদক ব্যবসার আয়ের একটা বড় অংশ যায় এমপির ড্রাইভার হুমায়ুনের কাছে। এছাড়া এলাকার চ্যাম্পিয়ন গাড়ি এবং সাত ও আট নম্বর বাস থেকে প্রতিদিন বড় অঙ্কের চাঁদা পান জুয়েল। সব মিলে মাসে তার চাঁদা আসে কমপক্ষে ২ লাখ। আর তদবিরের আয়তো আছেই। এলাকাবীসার অভিযোগ, এমপির কাছের লোক—এই ভয় দেখিয়ে মিরপুরের নবাববাগে ব্যাংকের নিলামে ওঠা আড়াই কাঠার প্রায় কোটি টাকা মূল্যের প্লট ড্রাইভার হুমায়ুন মাত্র ২৫ লাখ টাকায় নিজের নামে করে নিয়েছেন।

এছাড়া মিরপুর থানার বসুপাড়া মৌজার ২৫৭ নং খতিয়ান, দাগ নং ১১৩৫-এর ০.০৫৯ অংশের জমি নিজ নামে নামজারি করার জন্য ড্রাইভার হুমায়ুন কবীর জুয়েল রাজস্ব অফিসে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে তিনি আবার সেই জমিতে বালু ফেলার কাজও শুরু করেছেন। এলাকাবাসী এবং ড্রাইভার হুমায়ুনের আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে আসা এই বিস্তর অভিযোগ প্রসঙ্গে হুমায়ুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যে। আমার উন্নতি দেখে অনেকের চোখ টাটাচ্ছে। আমি এখানে খুব ভালো বেতন পাই, এটাই অনেকের সহ্য হচ্ছে না।

’ তিনি কথা বলার সময় প্রচণ্ড রেগে যান। এক পর্যায়ে হুমকির সুরে বলেন—‘লেখেন আপনার যা ইচ্ছে হয় লেখেন, প্রমাণ করে আমারে হাতকড়া পরিয়ে থানায় দিয়ে আসেন। তবে আমি জানি, আপনারা ওসব লিখেটিকে আমার কিছুই করতে পারবেন না। কতজনরে দেখলাম!’

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.