আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিএনজির জানালা গলিয়ে

পরে জানাচ্ছি

বেশ চঞ্চল গতিতে সিএনজিটা ছুটে যাচ্ছে। দেখে খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পের কথা মনে হলো আমার। যেন সিএনজিটা কোন রেসের মধ্যবর্তীকালীন সময়ে আছে। সামনের সিএনজি স্টেশনে গিয়ে সিএনজি নিতে হবে বলে রেসে একটু এগিয়ে থাকতে চাইছে। আমি সিএনজিটার ঠিক পেছনে, বাইকে।

যথারীতি জ্যামে পড়েছি। তাই এদিক সেদিক তাকিয়ে মানুষ দেখে সময় কাটানোর চেষ্টা করছি। মানুষের মুখ আমাকে বরাবরই আকর্ষন করে। এত কোটি কোটি মানুষ চারদিকে, এই পৃথিবীতে। সবারই দুটি করে চোখ, কান, একটি করে নাক, মুখ আছে কিন্তু সবাই দেখতে কী রকম অন্যরকম! শার্লক হোমস না হয়েও মুখ দেখেই মানুষের কত কিছু বলে দেওয়া যায়! সেই মুখগুলো আমাকে দারুনভাবে প্রভাবিত করে।

আমার আগের অফিসে আমি মন খারাপ থাকলে নীচে নেমে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতাম। কত মানুষ আসছে যাচ্ছে। কেউ হন হন করে, কেউ হালকা চালে। কেউবা দাড়িয়ে ফোন কানে। কারও জন্যে কেউ বা অপেক্ষা করছে।

এদের মধ্যে কারও বা একটু চমৎকার হাসি দেখে মন ভালো হয়ে যেত। আমি অফিসে ওঠার লিফটের জন্য বাটন চাপতাম। আমি দাড়িয়ে আছি সিএনজিটার পেছনে। সিএনজির পেছনের অংশ সাধারণত অর্ধস্বচ্ছ এক ধরনের পলিথিন দিয়ে আটকানো থাকে। কিন্তু এই সিএনজিটার পলিথিনটা মনে হয় ছিড়ে গেছে।

তাই চালক খুব যত্নের সঙ্গে পুরোটাই ছিড়ে ফেলেছে। ধন্যবাদ তাকে। তার ফাঁক গলে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটা ফর্সা সুন্দর হাত। সিটের উপরের অংশে হালকা চালে রাখা। একদম ধবধবে ফর্সা না।

সোনালী। কিন্তু জামার সঙ্গে কন্ট্রাস্টটা করেছে মারাত্মক। টিয়া এবং সবুজের মাঝামাঝি রংয়ের ফ্লোরাল প্রিন্ট, সঙ্গে লাল বংয়ের চিকন বর্ডার (হলিক্রস স্কুলের মেয়েদের জামায় যেমন লালচে বর্ডার থাকে তারচেয়েও চিকন) । অদ্ভুত সুন্দর লাগছে হাতটা। আমি জাস্ট প্রেমে পড়ে গেলাম ফ্লোরাল প্রিন্টটার, চিকন লালচে বর্ডারটার তার তার সঙ্গে থাকা হাতটার।

আহা এই হাতের বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার শুধু মনে হলো এই অসাধারণ হাতটার জন্য আমি আমার সব ছেড়ে ছুড়ে দিতে পারি। শুধু হাতটা। হাতের সঙ্গে থাকা মানুষ আমার প্রয়োজন নেই। এই হাতটা আমি যখন মন চাইবে দেখব, একটু ছুয়ে দেব।

অথবা কেউ যদি আমার বর্তমান এই অবস্থাটা ফ্রিজ করে রাখার প্রস্তাব দেয়, সিএনজিটাও আর আগাবে না, আমিও সিএনজিটা থেকে সামনে যেতে পারব না, এভাবেই অনন্তকাল কাটবে, আমি থেকে যেতাম। হাতটা একটু নড়ে উঠল। ওহে মেয়ে তুমি পেছনে তাকিও না। আমি তোমাকে দেখতে চাই না। তোমার হাতটাই শুধু আমাকে মন ভরে দেখতে দাও।

কিন্তু মেয়েদের সেন্স! এমনিতে কেউ সিএনজির ভেতর বসে এত কষ্ট করে পেছনের ফাঁকা দিয়ে তাকায় না। কিন্তু উনি তাকালেন। তাকানোর জন্য উনাকে কসরত করতে হলো। হাতটা ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। কেন তাকালেন??? কেন? কেন? আমি উনাকে দেখতে চাইনি।

আমি শুধু উনার হাতটা দেখতে চাইছিলাম। উনি সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকালেন। আমার যে কি হলো। হেলমেটটা খুললাম। মাথাটা একটু সামনে এগিয়ে বললাম, আপনার হাতটা খুব সুন্দর।

উনি খুব অবাক হলেন। আবার বলতে হলো আমাকে কথাটা। উনি বুঝতে পেরে সুন্দর একটা হাসি দিলেন। আমি বললাম আপনি হাতটা যেভাবে রেখেছিলেন আগে সেভাবেই রাখবেন? উনি আমার অনুরোধটা শুনলেন। হাতটা ঠিক আগের মতোই রাখলেন।

আমার যাওয়ার কথা ছিল শাহীনবাগ। মেয়েটাকে যখন সিএনজি নামিয়ে দিলো তখন আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউতে। *টীকা: সেদিনই আমি প্রথম আবিষ্কার করলাম রাস্তা ফাঁকা থাকলে সিএনজি সাধারণত ৬০ কিলোমিটার বেগে চলে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.