আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনার চর হতে পারে পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থান


পটুয়াখালী জেলার বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপের নাম সোনারচর। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের যাবতীয় আয়োজন রয়েছে এ দ্বীপটিতে। নদী আর সাগরের জল আছড়ে পড়েছে এ দ্বীপের চারপাশে। সোনারচরের চিকচিক বালিতে যেন ভোরের কোমল সূর্য আলো ছড়ায়। অস্তগামী সন্ধ্যার লালিমা তেমনি মায়া ঢালে নিভৃতের আধারে।

অপরুপ সোনারচর স্বর্ণালী স্বপ্নের মতই বর্ণিল শোভায় ঘেরা। অন্তত একবার দেখুন দেশের ভিতর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমী এই দ্বীপটিতে। বঙ্গোপসাগরের কোল জুড়ে বেড়ে ওঠা সোনার চরের আয়তন প্রায় ১০ হাজার একর। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা-লম্বি এ দ্বীপটি দুর থেকে দেখতে ডিমের মত। পথ দুর্গম হলেও সৌন্দর্যের নিপুন কারুকাজ সেই দুর্গমতাকে লাঘব করে অনেকখানি।

আছে বন-বনানি, দোকান-পাঠ আর অস্থায়ী পল্লী। শুধু নেই কোন অবকাশযাপনের আয়োজন। সৌন্দর্য পিপাসুদের অনেকেই সোনার চরের রূপ দেখে মুগ্ধ। কিন্তু রাত্রীযাপনের উপায় নেই বলেই সূর্য ডোবার আগে গন্তব্যে ফিরতে বাধ্য হন। নামকরণঃ সোনারচরে সোনা নেই ঠিকই কিন্তু আছে সোনার অঙ্গের বালি।

সূর্যের প্রখর রোদ যখন বালির উপর পরে দূর থেকে তা দেখতে সোনার মতই। এভাবে ৩০ এর দশকে জেগে ওঠা অপার সম্ভাবনা সৌন্দর্যের দ্বীপটির নাম পাল্টে গিয়ে হয় সোনারচর। স্বাধীনতার পর শুরু হয় বনায়ন। সোনারচরে রয়েছে ৫ হাজার একরের বিশাল বনভূমি। পটুয়াখালী বন বিভাগের তথ্য মতে, সুন্দরবনের পরেই আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সু-বিশাল সমুদ্র সৈকত। দেখা যাবে যত কিছু : এলাকাবাসীর কাছে সোনারচর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আধার। সাগরে যখন জোয়ারের জল উথলে ওঠে তখন চাদের আলোয় অন্য এক সৌন্দর্যে রূপ নেয় সোনারচর। প্রতিনিয়তই তীরে আছরে পড়ছে ছোট-বড় ঢেঁউ। ঝুরঝুরে বালি গলে পড়ছে লোনা জলে।

সবুজ ঘন অরণ্যের নিবিরতা ছেয়ে আছে চারপাশে। ছোট-ছোট নৌকা চলছে বড়-বড় ঢেঁউয়ের তালে। বিভিন্ন ধরণের জাল ফেলে মাছ ধরছে জেলেরা। সাগর থেকে আসা খালগুলোতে মাকড়শার মত অসংখ্য ঠেলা জাল দিয়ে ঠেলছে শিশুরা। সৈকতে দেখবেন যা : বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে হয়ত সহজেই চোখে পরবে বুনো মোষ, হরিণ, শুকর, বানর, মেছো বাঘসহ আরো সব বন্য প্রাণীর উপর।

এসব দেখতে হলে সাত সকালেই বেড়িয়ে পড়তে হবে নৌকা নিয়ে। সৈকতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যাবে সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য। চোখে পরবে নানা ডানা ঝাপটানো নাম না জানা পাখির দল। তাদের কিচির মিচির শব্দে সন্ধ্যার পরিবেশ টুকু উপভোগ করা যাবে নিজের মত করে। দেখতে পাবেন সমুদ্রগামী হাজারো জেলের জীবন সংগ্রাম।

সমুদ্রের নীল জলরাশি আর সবুজ প্রকৃতির এমন নিরিবিলি জায়গা সহজে কোথাও পাওয়া যাবে না। দেখেশুনে প্রবল ইচ্ছা যদি জেগেই যায় তাহলে জমিও কিনতে পারেন সোনারচরের সৌন্দর্য দ্বীপে। সোনারচরের লম্বা পথ : দেশের মানচিত্রটি সামনে ধরলে দেখা যাবে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থান করছে সাগরকন্যা হিসেবে খ্যাত পটুয়াখালী। সেখান থেকে দ্বীপ রাজ্য গলাচিপা হয়ে আপনাকে জলযানে পৌঁছাতে হবে সোনারচরে। কারণ এই দীর্ঘ সময়ে সোনারচরের সাথে গলাচিপার ভাল কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।

হিসাব করলে গলাচিপা শহর থেকে এই দ্বীপের দুরত্ব প্রায় ‘একশ’ কিলোমিটার। সেখানকার বদনাতলী ঘাটে দাঁড়ালে নীল জলরাশি ছাড়া কিছুই চোখে পড়বে না। কিছু দূরে গেলে আপছা নজরে পড়বে সোনারচরের সবুজ বনাঞ্চল। পথের দূরত্ব বেশী হলেও সৌন্দর্য্য পিপাসুদের মনের খোরাক নিভৃতির কারণে তিন ঘন্টার পথকে মনে হবে ৩০ মিনিট। লঞ্চযোগে প্রথমে গলাচিপা থেকে যেতে হবে চরমোন্তাজ।

সেখান থেকে ট্রলারে পাড়ি দিতে হবে বুড়াগৌরাঙ্গ মোহনা। সব মিলিয়ে লাগবে সাড়ে ৬ ঘন্টা। সোনারচরে কেউ কেউ কটেজ, হোটেল, মোটেল করার চিন্তা ভাবনা করলেও এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি। তাই মন চাইলে বন বিভাগের জরাজীর্ণ ডাক বাংলোটিতে থাকা যায়। আর রাত যাপনের ইচ্ছা হলে সোজা চলে আসতে হবে চরমোন্তাজে।

এখানে একাধিক হোটেল, মোটেল রয়েছে। বৃষ্টির কিংবা শীতের শান্ত প্রকৃতিতে কেউ যখন কুয়াকাটায় যান তাদের অনেকেই এ সময় ঘুরে আসেন সোনারচর। আর কুয়াকাটা থেকে স্পীডবোট রিজার্ভ করে সোনারচর যাওয়ার সু-ব্যবস্থাও রয়েছে। যতটুকু সম্ভাবনা : পর্যটন শিল্পে এখন প্যাকেজ ট্যুরের বিষয়টি বেশ পরিচিত। পারিবারিকভাবে তো বটেই।

সবাই মিলে একসাথে দলবেঁধে ঘুরে বেড়াবার মজাও কিন্তু কম নয়। ঢাকা থেকে আসা বেশির ভাগ পর্যটকই এ জেলার অপর পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা এসে ঘুরে চলে যান। কিন্তু সোনারচর, রূপারচর, চরহেয়ারসহ সমুদ্রফুড়ে জেগে ওঠ সবুজ বনাঞ্চলের সন্ধান জানে না অনেকেই। এসব চর আর সৌন্দর্যের বনাঞ্চলকে পর্যটনমূখো করতে আগে দরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। প্রথমেই যে কাজটি করা দরকার তা হল কুয়াকাটা থেকে সেনারচর পর্যন্ত সি-ট্রাকের ব্যবস্থা।

একইভাবে গলাচিপা থেকেও সি-ট্রাকের ব্যবস্থা করতে হবে। এই দুই পথে সি-ট্রাক চলাচল করলে পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধা বাড়বে। পাশাপাশি নিয়মিত সি-ট্রাক চালু হলে এইসব এলাকার লাখো মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবের সূচনা হবে। এজন্য সোনারচরে একটি পল্টুন স্থাপন করা জরুরি। রূপারচর, চরমোন্তাজ, চরআন্ডাসহ পাশের দ্বীপগুলোতে হোটেল, মোটেলসহ রেষ্ট হাউজ তৈরী করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে সরকারী উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসতে পারেন। ইতিকথা : শুধু সোনারচর নয় পার্শ্ববর্তী রূপারচর, মৌডুবি, চরকবির, চরফরিদ, শিপের চরসহ আরো কয়েকটি দ্বীপের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার মত। এর প্রত্যকটিই সাগরের বুক চিরে জেগে উঠেছে প্রকৃতির অনাবিল নিবিরতা নিয়ে। সৌন্দর্যের আধার দ্বীপগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করলে পর্যটন শিল্পে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে। সোনারচর দেশের যে কতটা সুন্দর দ্বীপ তা সাগর পাড়ের দ্বীপগুলো ঘুরে না আসলে বোঝানো যাবে না।

(সোনারচরথেকে ফিরে)
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.