সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
একটা বিজ্ঞাপন :
আমি একজন দুঃস্থ কবি, সিনেমা বানাইতে চাই; আছেন কোনো দয়ালু নারী একটি মুভি ক্যামেরা পাঠাইবেন? প্রেম দেব, ভালোবাসা দেব। কবিও বানায়ে দেব। দাম্পত্য জীবনে অসুখী, ডিভোর্সি হইলে অগ্রাধিকার। গোপন সম্পর্কের কথা কাউকে বলবো না।
রাজি থাকলে ইনবক্সে মেসেজ পাঠান। ওয়ালে কিছু লেখবেন না। কেউ জেনে গেলে অসুবিধা।
কাইলকা সকাল বেলা মানবজমিন পত্রিকায় ফেসবুকে ঢাকাই কবিদের প্রতারণা শিরোনামে রিপোর্ট পইড়া একটা স্টেটাস দিছিলাম।
স্টেটাসটা নিম্নরূপ :
মানবজমিন ও নতুন দেশে প্রকাশিত সেরিন ফেরদৌসের রিপোর্টটা খারাপ সাংবাদিকতার উদাহরণ।
পড়ে দেখেন। প্রাইভেসি লংঘন, ঢালাও অভিযোগ সহ বহু অভিযোগ করা যায় রিপোর্টটা নিয়া।
স্টেটাস দেওনের পর লঙ্কা কাণ্ড ঘইটা গেছে। আমার ইনবক্সে অনেক মেইল আসছে। সবার বক্তব্য হরে দরে এক।
মাহবুব, কাজটা ভাল হয় নাই। সেরিন ফেরদৌসের রিপোর্ট সঠিক। এইটা সবার জানা উচিত। সবাই যাতে সতর্ক হয় সেইজন্য এই রিপোর্টের দরকার আছে। তুমি স্টেটাস সংশোধন করো।
স্টেটাসে অনেকে কমেন্ট কইরা বলছেন, এইটা খারাপ বা হলুদ সাংবাদিকতার উদাহরণ, ব্যাখ্যা বা প্রমাণ দেও। এইটা কেমনে প্রাইভেসি লংঘন করে? আমি উত্তরে কইছিলাম, রিপোর্ট যেহেতু ধারাবাহিক অতএব পুরা রিপোর্ট পইড়া তথ্যপ্রমাণ সব জাইনা লিখুম, কেন এই রিপোর্টরে খারাপ বলতেছি।
অনেকে আমাকে সমর্থন জানাইছেন। বলছেন, তারাও মনে করেন এইটা হলুদ সাংবাদিকতার উদাহরণ।
পরিস্থিতির সিরিয়াসনেস দেইখা আইজকাই লেখতে বসলাম।
বিলম্বে দেরি হয়া যাইতে পারে।
প্রথমত, এইটা বইলা নেওয়া ভাল, যারা আমারে মেইল দিছেন ঘটনা সত্য বইলা তাদের সবার বক্তব্য, যুক্তি, তথ্যপ্রমাণের আভাস দেইখা আমি মোটামুটি বিশ্বাস করছি, ঘটনা সত্য। ঢাকার এক বা একাধিক কবি ও ফিল্মমেকার প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছেন বইলা প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়। সেইদিক থিকা সেরিন ফেরদৌসের রিপোর্টে সত্য আছে বইলা ধারণা করা যায়।
কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হইলো, ঘটনার সত্যতা সত্ত্বেও সেরিনের রিপোর্টকে ভাল সাংবাদিকতা বলা যাইতেছে না।
কেন সেরিন ফেরদৌসের রিপোর্টকে ভাল সাংবাদিকতা বলা যাইতেছে না?
১. সেরিন অপরাধীদের পরিচয় দিছেন শুরুতে। লিখছেন, '' ওরা মূলত কবি; সঙ্গে কেউ কেউ গান করেন, কেউ আবার সিনেমাও বানান। ঢাকার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মোটামুটি একটা পরিচিতি আছে এদের। ''
ঢাকা শহরে কবি, গান করে আবার সিনেমাও বানায় এমন লোকের সংখ্যা এখন অনেক। এদের অনেকে ভাল কাজ করতেছেন।
কবিরা সিনেমা বানাইতেছেন এইটা সিনেমার জন্য ভাল। সিনেমা বানায়া মোটামুটি পরিচয় অর্জন করছেন এমন লোকের সংখ্যা অনেক। সেরিন অপরাধীর পরিচয় এমন সার্বিকভাবে দিছেন যে, প্রথম কয়টা লাইন পইড়াই কবি ও ফিল্মমেকার যত লোক আছে তাদের সবাইরে সন্দেহ করতে হয়। কেউ যদি কয়, লম্বা চুলের কয়জন লোকরে দেখলাম টিএসসিতে মারামারি করতেছিল। তাইলে পরদিন টিএসসি গামী সকল লম্বা চুলের লোকদের দিকে মারামারির অভিযোগ উঠবে।
পাবলিক শুধু লম্বাচুল দেখবে। কিন্তু যে সাংবাদিক সে মারামারি করা লোকগুলা ছাত্রদল না ছাত্রলীগ না ছাত্রশিবির এইটা দিবে। যখন রিপোর্টের লক্ষ পাঁচজন লোক তখন সব কবি ও ফিল্ম মেকারকে দোষী সাব্যস্ত করা খারাপ ও দুর্বল সাংবাদিকতা।
২. রিপোর্টে সেরিন কবিতা লিখে নারীদের মন পাওয়াকেও অপরাধ হিসাবে দেখছেন। বলছেন, 'ফেসবুকে বন্ধু বানিয়ে রোমান্টিক কবিতায় প্রলুব্ধ করা হয়েছে প্রবাসী নারীদের।
' এইটা কোনো অপরাধ না। কবিরা কবিতা লিখে যদি কারো প্রেম অর্জন করে তবে সেইটারে অপরাধ গণ্য করা যায় না। কবিতা যদি নারীদের প্রলুদ্ধ করে তবে বুঝতে হবে কবি শক্তিশালী অথবা নারীরা কবিতা পছন্দ করে। এইটা শৈল্পিক ব্যাপার। রিপোর্টে সেরিন কবিতাকে দোষারোপ না করলেও পারতেন।
৩. সেরিন রিপোর্টে 'পরকীয়া', বহুপ্রেম বা পলিগ্যামি ইত্যাদিকে খারাপ হিসাবে দেখছেন। এইটা একটা নৈতিক অবস্থান। এমন নৈতিক বায়াসনেস নিয়া রিপোর্ট লেখা যায় না।
৪. যারা 'ভিকটিম' তাদের ভাষ্যকে তিনি প্রমাণ হিসাবে ধরে নিছেন। এই 'অপরাধে' তাদের ভূমিকা আড়াল হয়া গেছে।
'ভিকটিমের' পরিচয় গোপন করা সাংবাদিকদের একটি নীতি। কিন্তু তার বক্তব্যকে সংবাদের একমাত্র সোর্স করে নয়। সেরিনের কাছে যদি অকাট্য প্রমাণ থেকেই থাকে তবে তিনি 'অপরাধী'কে নির্দিষ্ট করে দিতে পারতেন। পারলে তার নাম পরিচয় দিতে পারতেন। এ নিয়ে ধারাবাহিক গুজব রচনার দরকার আছিল না।
নিয়ম হইলো, যে অভিযুক্ত তার বক্তব্যও নিতে হবে। সভ্য সমাজে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়াটা সংবাদপত্র, আদালত সবাই স্বীকার করে।
৫. সেরিন লিখছেন, 'নারীরা স্বেচ্ছায় ও অসাবধানতাবশত এই চক্রে পা দিয়েছেন' ফেসবুকের মতো একটি ওয়েল প্রটেক্টেড, প্রাইভেসি সচেতন সাইটে অসাবধানতাবশ পা দেওয়ার সুযোগ নাই বইলাই আমার মনে হয়। টিনেজ বা শিশুদের কথা আলাদা। রিপোর্টে পরকীয়া সম্পর্কে 'ভিকটিম' বইলাই হয়তো এই লাভ-গেমে নারীদের ভূমিকা আড়াল করা হইছে।
তাদের সক্রিয়তার পুরা ইতিহাসটা আড়াল কইরা রিপোর্টটাকে একপাক্ষিকভাবে পরিবেশন করা হইছে।
৬. কোনো নারী কোনো কবি ফিল্মমেকারের সঙ্গে সম্পর্ক রচনার পর তার সঙ্গে গিফট বিনিময়ের পর কোনো কারণে সম্পর্কের অন্ত ঘটলে তাকে ভিকটিম করতেছেন কি না এবং স্বেচ্ছাপ্রদত্ত গিফটকে মুক্তিপন আখ্যায়িত করতেছেন কি না, এই স্বাভাবিক প্রশ্নের জবাব রিপোর্টে নাই। গিফট পাঠানো প্রেম বা বন্ধুত্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপরাধ নয়। দামী গিফট পাঠাইলে ভাল। দুঃস্থ কবির নানা কাজে সহায়তা করা সমাজ সেবার লক্ষণ।
প্রতারকরা এইটা মনে না রাখলেও পরকালে এইজন্য বহুত সওয়াব হাসিল হবে। অবশ্য পরকীয়ার জন্য কঠিন শাস্তিও হবে।
৭. রিপোর্টে অপরাধ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে একটা তথ্যই। সেটা হইলো : 'একপর্যায়ে টাকা পাঠাতে কেউ কেউ অপারগতা প্রকাশ করলে তাদের পাঠানো উপহার সামগ্রী, মেইল এবং ফেসবুক তথ্য তাদের স্বামী ও অন্যদের জানিয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে দু-একজন দেশে বেড়াতে গেলে গোপনে ছবি তুলে বস্ন্যাকমেইল করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
ঢাকায় গিয়ে থানা-পুলিশও করতে হয়েছে কাউকে। '
এইটুকু সত্য প্রকাশ করতে গিয়া সেরিন ফেসবুক কোম্পানি, মার্ক জুকারবার্গ থেকে শুরু করে ঢাকার কবি, ফিল্মমেকার, লিটলম্যাগাজিনকর্মী, অনলাইন ম্যাগাজিন কর্মীদের দিকে যেমনে অঙ্গুলিনির্দেশ করছেন। যেমনে সবাইরে সন্দেহের তালিকায় যুক্ত করছেন তাতে তার বিরুদ্ধে কয়েকশ মানহানির মামলা হওয়া উচিত।
সব কথার শেষ কথা :
যে আসলেই অপরাধ করছে সেরিনের উচিত নতুন দেশ পত্রিকার সার্কুলেশন বাড়ানোর চিন্তা না কইরা দ্রুত তার নাম তথ্যপ্রমাণ সহকারে, তার বক্তব্য সহকারে প্রকাশ কইরা দেওয়া। নইলে, এই নিউজের লক্ষ্য হবে শুধু কানকথা তৈরির উপাদান হওয়া।
নারীরা সাবধান হয়া কবিদের ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে প্রত্যাহার করা শুরু করলে দেশের সাহিত্যে গজব নাইমা আসবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।