গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত
মুক্তি : ১৯৮২
দৈর্ঘ : ১৮৮ মিনিট
রঙ : রঙিন
দেশ ও ভাষা : ভারত, ব্রিটেন। ইংলিশ, হিন্দি।
পরিচালনা : রিচার্ড এটনবরা
প্রযোজনা : রিচার্ড এটনবরা
চিত্রনাট্য : জন ব্রেইলি, আলেক পাদমাসি, ক্যানডিস বার্গেন
অভিনয় : বেন কিংসলে, রোহিনি হাতনগাড়ি, রোশন শেঠ, সাঈদ জাফরী, ক্যানডিস বার্গেন, এওয়ার্ড ফক্স, জন গিলগাড, ট্রেভর হাওয়ার্ড, আলেক পদমাসি, অমরেশ পুরি, শ্রীরাম লাগু, ওম পুরি, ডেনিয়েল ডে লুইস
সঙ্গীত : রবি শঙ্কর, জর্জ ফেন্টন
চিত্রগ্রহণ : বিলি উইলিয়াম, রনি টেলর
সম্পাদনা : জন ব্লুম
কাহিনী সংক্ষেপ : ৩০ জানুয়ারী ১৯৪৮ সালে গান্ধীর ঘাতকের গুলিতে নিহত হওয়া এবং তার জমকালো শেষকৃত্য অনুষ্ঠান দিয়ে ছবি শুরু হয়। ছবিতে গান্ধীর শৈশব কৈশোর দেখানো হয়নি। বরং তার মৃত্যুর পর ৩৫ বছর পিছিয়ে ফ্লাশব্যাকে ছবি শুরু হয় ১৯৮৩ সালে দক্ষিন আফ্রিকায়।
ট্রেনের একটি কামরা থেকে কালো বলে সাদা চামড়ারা তাকে নামিয়ে দেয়। এরপরই শুরু দক্ষিন আফ্রিকায় ভারতীয়দের অধিকার আদায়ের অহিংস আন্দোলন। একাধিক গ্রেফতারের পর তিনি তার অধিকার আদায়ে সক্ষম হন। এরপরতাকে ভারত বর্ষে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দক্ষিন আফ্রিকার বিজয়ের সূত্রে তিনি নায়কের মর্যাদা পেয়ে গেছেন।
ভারতে এসেই তিনি ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার আন্দোলনে সচেষ্ট হন। তারা নিজেরা অহিংস থাকলে তার আন্দোলনের কর্মীদের উপর হামলা হয়, তিনি নিজেও একাধিকবার জেলে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও শেষ হয়, আন্দোলনের চাপ ব্রিটিশরা সইতে পারে না। অবশেষে তারা ভারতকে স্বাধীন ঘোষণা করে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা।
গান্ধী দাঙ্গা থামানোর জন্য আমৃত্যু অনশন শুরু করেন। দাঙ্গা থামে, কিন্তু গান্ধীর প্রিয় স্বদেশ বিভক্ত হয়ে যায়, একদিকে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান, অন্যদিকে হিন্দু আধিক্যের ভারত। ধারণা করা হয়েছিলো, হিন্দু-মুসলিমকে ভৌগলিকভাবে আলাদা করলে কোন দাঙ্গা হবে না। গান্ধী এই দেশ বিভাগ মেনে নিতে রাজী হন না, এমনকি তিনি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ অবিভক্ত পুরো ভারতবর্ষের প্রধান মন্ত্রী হওয়ার আমন্ত্রণও করেন। বহু রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গান্ধী ভিন্ন মত পোষণ করেন, এমনকি রাগও দেখান।
তাদেরই একজনের কোপে শেষে আতাতায়ীর হাতে তাকে মরতে হয়। ছবি ফিরে আসে, গান্ধীর মৃত্যুর আগে শেষ সংলাপ, হে রাম এর মাধ্যমে। পবিত্র গঙ্গায় গান্ধী দেহ ভস্ম ছড়িয়ে দেয়া হয়, তার অহিংস বাণী দিয়ে ছবি শেষ হয়।
বিশেষত্ব : ব্রিটিশ বিরোধী অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর জীবনে নিয়ে এ ছবি তৈরি করা হয়েছে। শ্রেষ্ট চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা, সেরা চিত্রনাট্যসহ চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা, মেকআপ ও সঙ্গীতে অস্কার পায়।
এছাড়াও বাফটা [ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম এওয়ার্ডেও ৫টি ক্যাটাগরি এবং গাল্ডেন গ্লোবে ছয়টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায়।
বিশেষ তথ্য : ১. গান্ধীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান দৃশ্যায়নে প্রায় চার লাখ এক্সট্রা ব্যবহার করা হয়েছিলো। গিনিজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এটিকেই বিশ্বের সর্বাধিক শিল্পীর সমন্বয়ে করা দৃশ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
২. শুরু থেকেই গান্ধী চরিত্রে কে অভিনয় করবে তা নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। এই ছবিতে কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন ভারতীয় মঞ্চ কর্মী ডলি ঠাকুর।
তার পছন্দেই বেন কিংসলেকে নেয়া হয়। বেন জাতিগতভাবেই অর্ধেক ভারতীয়। তার বাবা গুজরাটি ছিলো। জšে§র সময় বেন কিংসলের নাম ছিলো কৃষ্ণ ভানজি। ডলি ঠাকুর এ ছবির পর বহু ব্রিটিশ ও ভারতীয় ছবির কাস্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন।
৩. ভারতের বিখ্যাত মঞ্চ নির্দেশক, বিজ্ঞাপণ নির্মাতা এলেক পাদমেসি এ ছবিতে শুধু চিত্রনাট্যকারের কাজই করেননি, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন।
৪. যথার্থ অর্থেই এটি ছিলো রিচার্ড এটনবরার স্বপ্নের রূপায়ন। এর আগে দুইবার গান্ধীকে নিয়ে ছবি করার চেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে। ১৯৫২ সালে গ্রেবিয়াল পাস্কেল ভারতের প্রধান মন্ত্রী জওহর লাল নেহেরুর সঙ্গে গান্ধীর জীবন নিয়ে ছবি করার চুক্তি করেন। কিন্তু ১৯৫৪ সালে পাস্কেল মারা গেলে এই ছবির ভবিষ্যতও শেষ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ডেভিড লিয়েন ও স্যাম স্পিগেল তাদের দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই ছবির পর গান্ধীকে নিয়ে ছবি করবেন বলেন। সে ছবিতে গান্ধী চরিত্রের জন্য এলেক জিনিসকে ভাবা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা দ্য লরেন্স অব এরাবিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলে গান্ধী ছবি আর হয় না। শেষ পর্যন্ত এটনবরাই গান্ধীকে নিয়ে বহু কাঙ্খিত ছবিটি শেষ করতে সমর্থ হন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।