বিগত নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থী এবং মহানগর কমিটির নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে ঝুলে গেছে নগরীর আওতাধীন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। ৪৯ থানার মধ্যে গঠিত হয়েছে মাত্র ৯টি কমিটি। ১২টি ইউনিয়ন কমিটির একটিও হয়নি। আর ১০০ ওয়ার্ডের মধ্যে ২০-২৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ১৬ মাসে কমিটি গঠনের হতাশাজনক এ চিত্র দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তাই অঘোষিত ৪০টি থানার সর্বস্তরের নেতাকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করে সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের তালিকাসহ রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। রিপোর্ট পাওয়ার পর সবার সমন্বয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই থানা কমিটি গঠন করবেন বলে জানা গেছে।
গত বছর ১৪ মে সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন খালেদা জিয়া। কমিটিকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন
কমিটি গঠন শেষে সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে।
কমিটি গঠনের পর পরই নগর বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাস এবং সাদেক হোসেন খোকার মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠন নিয়ে দু'নেতার অনুসারীদের মধ্যে কোন্দল আরও তীব্র হয়।
সমকালের অনুসন্ধানে অধিকাংশ থানায় কোন্দলের নানা চিত্র উঠে এসেছে। কোথাও আধিপত্য বিস্তার, আবার কোথাও আগামী নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুত রাখতে পছন্দের নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। বেশির ভাগ থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনের এমপি প্রার্থীদের সঙ্গে নগর কমিটির নেতাদের দ্বন্দ্ব প্রকট।
এ ধরনের কোন্দলের চিত্র পাওয়া গেছে তেজগাঁও, রমনা ও শেরেবাংলানগর থানায়। এ এলাকায় কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাহাবউদ্দিন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও সাবেক কাউন্সিলর এমএ মজিদ। মো. সাহাবউদ্দিন গত জাতীয় নির্বাচনে তেজগাঁও থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন।
এ তিনজনের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জালাল আহমেদকে সভাপতি ও ইকবাল হোসেন পাটোয়ারীকে সাধারণ সম্পাদক করে তেজগাঁও থানা; রুহুল আমিন জাহাঙ্গীরকে সভাপতি ও গোলাম সাবের চৌধুরী কিরণকে সাধারণ সম্পাদক করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা এবং আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারকে সভাপতি ও শাহ আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে শেরেবাংলানগর থানার প্রস্তাবিত কমিটি গঠন করে। দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন যুগ্ম আহ্বায়ক প্রস্তাবিত কমিটিতে স্বাক্ষর করেন।
পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টার ইন্ধনে আনোয়ার নিজ থানা শেরেবাংলানগরের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতির পদ ছেড়ে তেজগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি হওয়ার জন্য জোর লবিং শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার ওই উপদেষ্টা তেজগাঁও এলাকার সাবেক এমপি ছিলেন। আগামীতেও তিনি ওই এলাকা থেকে নির্বাচন করতে চান। তাই নিজ অনুসারী আনোয়ারকে তেজগাঁও থানার সভাপতি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে চান তিনি। অবশ্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার সমকালকে বলেন, তেজগাঁও এলাকার নেতাকর্মীরা তাকে ওই থানায় সভাপতি হিসেবে চান।
নেতাকর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দল তাকে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মতিঝিল থানার কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও থেমে আছে অনেক দিন। সেখানে মির্জা আব্বাস এবং আবদুস সালামের অনুসারীরা পৃথক দুটি কমিটি জমা দিয়েছেন। ডেমরা-শ্যামপুরের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ, তাকে না জানিয়ে তার এলাকার সব কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে মহাসচিবের কাছে নালিশ করেন তিনি।
একইভাবে মিরপুর-পল্লবীর কমিটি গঠন নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সঙ্গে সাবেক কাউন্সিলর আহসান উল্লাহ হাসান; মোহাম্মদপুর, আদাবরসহ আরও কয়েকটি থানা কমিটি নিয়ে যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সঙ্গে সাবেক কমিশনার আতিকুল ইসলাম মতিনের এবং ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামপুর থানা কমিটি নিয়ে সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক কাউন্সিলর নবীউল্লাহ নবীর গ্রুপের মধ্যে কোন্দল চলছে।
মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বিগত নির্বাচনে অংশ নেওয়া যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, মাঠ পর্যায়ে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে দক্ষ ও ত্যাগীদের দিয়ে কমিটি করা দরকার। এক্ষেত্রে প্রতিটি এলাকার সাবেক এমপি প্রার্থীর মতামত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কারও মতামত নেওয়া হচ্ছে না।
মহানগরের ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ডেমরার সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদ কমিটির নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাকে কেউ কোনো কিছু অবহিত করেননি।
অবশ্য সালাহউদ্দিনের প্রতিপক্ষ নবীউল্লাহ নবীর দাবি, সবার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সালাহউদ্দিনের অভিযোগ সত্য নয়।
সূত্রমতে, থানা কমিটি গঠন করতে সাদেক হোসেন খোকা যুগ্ম আহ্বায়কদের দায়িত্ব ভাগ করে দেন। কিছুদিন না যেতেই দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সাদেক হোসেন খোকার কাছে লিখিত অভিযোগও করেন কয়েক জন।
পরে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কার্যক্রম তদারকি এবং থানা কমিটির রিপোর্ট তৈরি করতে নগর বিএনপির তিন যুগ্ম আহ্বায়ক_ এমএ কাইয়ুম, কাজী আবুল বাশার এবং আলী আজগর মাতাব্বরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কিন্ত সবাই চোর ধান্দাবাজ কিভাবে নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য পাই এটা নিয়েই তারা সব সময় ব্যস্ত। তাহলে কিভাবে তারা নিজেদের দলকে পুর্নগঠন করে সামনের পথ চলবে? এসব কোন্দল থেকে বিএনপি কি বেঁচে থাকতে পারবে? পারবে কি সামনের নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে? কিন্তু নীতি নির্ধারকরা কি করবে ভেবে উঠতে পারছে না কারণ তাদের সামনে রয়েছে অগ্নি পরীক্ষা আর এই পরীক্ষা থেকে তারা কিভারে সামনে পথ চলতে পারবে এ প্রশ্ন সকলের। তাই বিজ্ঞজনরা মনে করেন যে বিএনপির অর্ন্তকোন্দল ভবিষ্যতে ইহার কোন অস্তিত্ব থাকবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।