আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাননীয় নির্বোধ সাংবাদিকেরা যুদ্ধাপরাধীর তালিকা বিনির্মাণে একটু দায়িত্ববোধের পরিচয় রাখুন, অন্তত তদন্ত কমিটিকে সময় দিন

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

অনেক প্রত্যাশিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে গত ২৫শে মার্চ। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, কমিটির কাছে তথ্য উপাত্ত জমা দেওয়া যাবে, এই তদন্ত কমিটির ক্ষমতা রয়েছে , তদন্ত কমিটি ইচ্ছা করলেই বাংলাদেশী নাগরিকদের কাছে তথ্য আহ্বান করতে পারবে এবং তথ্য প্রদান বাধ্যতামূলক। তদন্ত কমিটি যাদের সাক্ষ্য হিসেবে ডাকবে তাদের কোনো রকম ভয়-ভীতি দেখানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচিত হবে। সাক্ষীদের কোনরূপ প্ররোচনা দেওয়া যাবে না, প্রভাবিত করা যাবে না। নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতার সাথে আন্তরিকতার মিশেল ঘটলে এই তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে কোনো সংশয় তৈরী হওয়ার সুযোগ নেই।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি তদন্ত কমিটির কাউকেই চিনি না বলে নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না, তবে তারা ৭১এর যুবক, সুতরাং তাদের আন্তরিকতা প্রশ্নে সংশয় নেই আমার। আন্তর্জাতিক একটা রীতি বিদ্যমান, এখানে আদালতের রায়ে দোষী সব্যস্ত হওয়ার আগে কাউকে অপরাধী স্বীকৃতি দেওয়া মূলত বিচারের রায়কে প্রভাবিত করবার মতো একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সংবাদ মাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের এ বিষয়ে আরও আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। তারা , বিশেষত প্রথম আলো- ডেইলী স্টার, এবং আমাদের সময়, স্কুপ নিউজ এবং ব্রেকিং নিউজের তাড়নায় তাড়া করছেন এই তদন্ত কমিটির সদস্যদের। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে এক সপ্তাহও হয় নি।

তাদের সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত যাচাই করে একটি নিরপেক্ষ এবং একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন হবে। তবে আমাদের প্রথম আলো-ডেইলী স্টার এবং আমাদের টিভি মিডিয়ার সাংবাদিকদের সে সময় কোথায়? তারা বাসর রাতে সতীচ্ছদ ছিন্ন হওয়ার আগেই আশা করে বসে থাকেন সন্তান হবে এবং সন্তানের জন্য তারা ওয়াকিং প্যাড কিনে রেখেছেন। বিবেচনাবোধের এমন ঘাটতি অন্য কোনো দেশের মিডিয়ায় দেখা যায় না। টাইমের একটি রিপোর্টের জন্য দুজন সাংবাদিক ৪ বছর খেটেছেন, এবং অবশেষে তারা পঞ্চম বছরে এসে তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছেন, বাংলাদেশের তদন্ত কমিটির কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার জন্য খানিকটা সময়তো দিতে হবে তাদের। প্রতিনিয়ত টিভিক্যামেরার তাড়া খেয়ে তারা কতটুকু অগ্রগতির সংবাদ জানাতে পারবেন? তাদের তো পড়তে হবে, বিবেচনা করতে হবে, একটা গ্রহনযোগ্য অভিযোগ পত্র দাখিল করতে হবে।

বিষয়টার অনেক আনুসাঙ্গিক বিষয়াদি আছে, আবেগের বশবর্তী হয়ে একটি ফালতু ট্রায়াল করে তো লাভ নেই। কম্বোডিয়ায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিলো ২০০৫ সালে, সে তদন্ত কমিটি ২০০৮ সালে এসে একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করতে পেরেছে। অনেক রকম অন্তর্ঘাত ছিলো সেখানে, ক্ষমতাসীনেরা আন্তরিক ছিলো না, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আলাদা, এখানে সরকার আন্তরিক, তবে আন্তরিকতার অভাব মিডিয়া এবং বিরোধী দলের। মিডিয়া কিংবা আরও স্পষ্ট করে বললে মিডিয়ার অত্যাধিক বাড়াবাড়ী বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যহত করতে পারে এমনটাই আমার অনুমান। মিডিয়াকে আরও সংযত ভুমিকা পালন করতে হবে।

ফলপ্রত্যাশা করা এবং সুন্দর সমাপ্তির আশা করা আশাবাদী মানুষের কাজ, তবে মিডিয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হয়ে মিডিয়াকে আরও বেশী সংযত এবং সংহত আচরণ করতে শিখতে হবে। এবং যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের মিডিয়া সম্পাদকদের ডেকে স্পষ্ট জানানো উচিত তারা কোথায় তাদের সীমারেখা অতিক্রম করছে। পাপ্পারাজ্জির ভুমিকায় দেখতে চাইছি না আমি সাংবাদিকদের। বরং তাদের মানুষের প্রতি সহানুভুতিশীল একদল সংবাদপত্র কর্মী হিসেবে ভাবতেই আমি সাচ্ছন্দ্য বোধ করবো। তারা পাপারাজ্জির মতো তদন্ত কমিটির সদস্যদের পেছনে ধাওয়া না করে অন্য কোনো উপায়ে সংবাদ সংগ্রহ করে তাদের ব্রেকিং নিউজের পাতা ভরিয়ে তুলুন সমস্যা নেই, কিন্তু একটা সীমারেখা বজায় রাখা প্রয়োজন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেছিলাম আগে, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এলজিআরডি মন্ত্রী এবং সরকারের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যের সমন্বয়হীনতা এত বেশী প্রকট যে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিলো। এখনও সে সমন্বয়হীনতা কাটে নি। তদন্তকমিটি গঠিত হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যের ধারা হওয়া উচিত ছিলো তদন্ত কমিটি নিজেদের কাজ করছে, তারা তদন্ত শেষে যা সিদ্ধান্ত দিবে, যেভাবে অভিযোগপত্র সাজাবে, সে সাজানো অভিযোগপত্রের ভিত্তিতেই ট্রাইব্যুনাল কাজ করবে, ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পরে তাদের বক্তব্য প্রকাশের কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং তারা যদি হ্যান ত্যান বলে একে তাকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা দেন কিংবা সাংবাদিকদের এমন সব প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন এবং সেটা যখন দৈনিকে ছাপা হয় তখন সাধারণ মানুষের ভেতরে সংশয় তৈরি হয়। বিএনপি আজ তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে, জামায়াত ঘোষণা দিয়ে প্রতিহত করবার, এইসব ক্ষেত্রে তদন্তকমিটি ব্যতিত অন্য যেকোনো ব্যক্তির আলটপকা মন্তব্য কিংবা এখতিয়ারবহির্ভুত মন্তব্য শুধু সংশয় বৃদ্দি করবে এবং তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

এবং এমনটা চলতে থাকলে স্বয়ং বিচারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ৩৯ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করেছে সুবিচার এবং ন্যায় বিচারের। সামান্য কয়েকজন নির্বোধ এবং অশোভন সাংবাদিক এবং একই রকম নির্বোধ জননেতাদের অহেতুক বাক্যব্যয়ে সেই ন্যায়বিচার যদি হুমকির মুখোমুখি হয় সেটা হবে আরও বেশী দুঃখজনক। সুতরাং একটা প্রস্তাব পাঠানো যায়, সেটা প্রধানমন্ত্রী[ ইদানিং বাংলাদেশের যে অবস্থা এবং সরকারের আন্তবিভাগীয় সংযোগের যে দুরাবস্থা, তাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ব্যতিত কোনো কিছু করা কঠিন] দেশের সকল সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনের সংবাদের সম্পাদকদের ডেকে ব্যখ্যা করে বলবেন, তিনি সুন্দর করে তাদের সীমারেখা জানিয়ে দিবেন, এবং একই সাথে তিনি আইনমন্ত্রী,উপআইনমন্ত্রী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং তার উপদেষ্টাদের নির্দেশ দিবেন যেনো তারা যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে যেকোনো সাংবাদিকদের প্রশ্নের একটা মাত্র উত্তর প্রদান করেন, তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে, তারাই অভিযোগ গঠন করবেন এবং তারাই জানাবেন কাকে কাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সম্পাদকদের ডেকে অনুরোধ করবেন যেনো তারা এমন নিউজহান্ট করতে গিয়ে খোদ ট্রাইব্যুনালকে হত্যা না করে, সুতরাং সরকার ট্রাইব্যুনালের জন্য একজন মিডিয়া করেসপন্ডেন্স নিয়োগ দিবেন এবং সে করেসপন্ডেন্সের কাছেই যুদ্ধাপরাধের যাবতীয় এনকোয়ারী করবে সাংবাদিকগণ।

যদি কোনো সাংবাদিক এই নির্ধারিত সীমারেখার বাইরে গিয়ে কোনো আচরণ করেন তবে সেটা আইনবহির্ভুত গণ্য হবে। এবং এটাকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রন করা হবে। এই মেসেজটা ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। সংকট হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা নিয়ে, তদন্ত কমিটির সদস্যগন সাধারণ মানুষ, তবে তাদের উপরে আরও বড় একটি দায়িত্বের বোঝা রয়েছে, তাদের যেকোনো ভ্রান্তি কিংবা মানবীয় ভুল একজন সাম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধীর মুক্তির সনদ হয়ে যেতে পারে, অভিযোগ যথাযথ না হলে আদালত এমন কি নিশ্চিত খুনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও দায়মুক্ত করে দিতে পারেন, সুতরাং তাদের আরও বেশী মনোযোগী হয়ে কাজ করবার নির্বিঘ্ন পরিবেশের ব্যবস্থা করে দেওয়া আমাদের সকলের কর্তব্য। সাংবাদিকগণ নিজেদের মনমতো তালিকা নিয়ে হাজির হচ্ছেন এবং সে তালিকা প্রকাশ করছেন নিজেদের দৈনিকে।

এক একটা সংখ্যা জানিয়ে দিচ্ছেন এবং সেটা ব্রেকিং নি্উজ কিংবা এমন কিছু একটা হিসেবে ছাপা হচ্ছে। এই আত্মঘাতী পদক্ষেপ বিষয়ে সরকারের নির্লিপ্ততা আমাকে আরও বেশী বিভ্রান্ত করছে। দায়িত্বজ্ঞানহীন সাংবাদিকতার নজির দেখেছি অনেক, তবে পরিস্থিতির গুরুত্ব না বুঝা সাংবাদিক এবং একই সাথে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়া রাজনীতিবিদদের এই সম্মিলন দেখে নিজেই চিন্তিত আদৌ বিচারের কাঠগড়ায় কাউকে আনা সম্ভব হবে কি না। সুতরাং সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটু দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধ করছি।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.