সত্যকে গ্রহন করি
মিসরের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. রশীদ খলিফা কোরআন নিয়ে এক ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি প্রাথমিকভাবে কোরআনের প্রতিটি অক্ষর যেভাবে কোরআনে সন্নিবেশিত আছে সেভাবেই তিনি কম্পিউটারে বিন্যস্ত করেন। কোরআনে ১১৪টি সুরার অবস্থান ও ২৯টি সুরার শুরুতে ব্যবহৃত 'হরফে মোকাত্তায়াত' যে নিয়মে বিন্যস্ত আছে সে নিয়মের ভিত্তিতে তিনি হিসাব করতে শুরু করেন। এতে কোরআনের কিছু অলৌকিক তত্ত্ব তার তার কম্পিউটার স্ক্রীনে ভেসে উঠে। এ অলৌকিক তত্ত্বের একটি হচ্ছে এই যে, সমস্ত কোরআন গণিতের এক রহস্যময় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে।
সমগ্র কোরআন যেন ১৯ সংখ্যাটিরই একটি সুদৃঢ় বন্ধন।
আল কোরআনে সুরা মুদাচ্ছিরে ৩০ নং আয়াতে সম্ভবত আল্লাহ তায়ালা একথাটিই বুঝাতে চেয়েছেন, এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন,
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ
এবং তার উপরে রয়েছে ঊনিশ.
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে "কার উপর"? আগের আয়াতে যেহেতু জাহান্নামের বর্ণনা রয়েছে তাই অনেক মুফাসসির বলেছেন, এরা জাহান্নামের প্রহরী। কোন কোন মুফাসসির বলেছেন,এটা মানুষের ১৯ প্রকারের ইন্দ্রিয় শক্তির কথা বলা হয়েছে।
আসলে আল্লাহর নবী নিজের মুখে একথাটার অর্থ না বলে মনে হয় ভবিষ্যত গবেষণার দ্বার খোলা রাখতে চেয়েছেন।
সমগ্র কোরআনে আল্লাহ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২৬৯৮ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
'রহমান' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৫৭ বার, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
'রহীম' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১১৪ বার, যা ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়।
আরবী ভাষার বর্ণসমুহের নিজস্ব একটি সংখ্যামান আছে। সে হিসেবে
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَنِ ٱلرَّحِيمِ -এর আয়াতটিতে ব্যবহৃত ১৯ হরফের সংখ্যামানের সমষ্টি হচ্ছে ৭৮৬; এ আয়াতটিতে একই অক্ষরের পুনরাবৃত্তি বাদ দিলে মোট বর্ণ থাকে ১০ টি; ১৯ সংখ্যায় ব্যবহৃত অংক দু'টির যোগফল ১+৯=১০; 'বিসমিল্লাহতে' পুনরাবৃত্ত অক্ষরগুলোর সংখ্যামান হচ্ছে ৪০৬; ৭৮৬ থেকে ৪০৬ বাদ গেলে বাকী থাকে ৩৮০, তা ১৯ দ্বারা ভাগ করা যায়। এই ১৯ টি বর্ণমালার ছোট বাক্যটি
'بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَنِ ٱلرَّحِيمِ' দিয়ে আল্লাহ তায়ালা গোটা কোরআনকে যেন একটি দুশ্ছেদ্য বাঁধনে বেঁধে রেখেছেন।
১৯-এর এই বিন্যাস ছাড়াও কোরআনের দুটি বিপরীত বস্তুর তুলনার ক্ষেত্রে একটি অবিশ্বাস্য মিল অবলম্বন করা হয়েছে। তা হচ্ছে সে দুটি নাম অথবা বস্তুকে সমান সংখ্যাতেই আল্লাহ তায়ালা তার কেতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন 'দুনিয়া ও আখেরাত' এ দুটি কথা কোরআনে সমান সংখ্যায় এসেছে, ১১৫ বার করে।
ঈমান-২৫ বার কুফর-২৫ বার।
'ক্বুল'- মানে বল তার জবাবে বলা হয় 'ক্বালু' মানে তারা বলল।
এ দুটি শব্দ কোরআনে সমান সংখ্যায় এসেছে, ৩৩২-বার করে।
গরম-৫ বার আবার ঠান্ডাও ৫ বার এসেছে।
কোন একটি কাজ করলে তার যে অবশ্যম্ভাবী ফল দাঁড়াবে তার উভয়টিকে আশ্চর্যজনকভাবে সমান সংখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে।
'মানুষ সৃষ্টি' কথাটা এসেছে ১৬ বার, আর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে 'ইবাদাত' তাও এসেছে ১৬ বার।
'গাছের চারা উৎপাদন' করলে 'গাছ' হয়।
তাই এ দুটো শব্দই এসেছে ২৬-বার করে।
কোন মানুষ 'হেদায়াত' পেলে তার প্রতি 'রহমত' বর্ষিত হয়, তাই দুটো শব্দ কোরআনে এসেছে ১৬ বার করে।
আল্লাহ বলেছেন 'যাকাত' দিলে বরকত আসে এ দুটো শব্দও কোরআনে এসেছে ৩২ বার করে।
'আবদ' মানে গোলামী আর 'আবীদ' মানে গোলাম, তাই কোরআনে উভয় শব্দই এসেছে ১৫২-বার করে।
নেশা করলে মাতাল হয় এ দুটো শব্দ এসেছে ৬ বার করে।
অংকগত মোজেযা এখানেই শেষ নয়। আশ্চর্য্য হয়ে যাওয়ার মত তথ্য রয়েছে আরও। সামনে "দৈনন্দিন পথনির্দেশিকায়" এ ব্যাপারে আরও তথ্য আসবে ইনশাল্লাহ।
আরও একটি তথ্য দিয়ে আজকের আলোচনা আমরা এখানেই শেষ করছি,
'ইয়াওমুন' মানে দিন। সমগ্র কোরআনে এ শব্দটি ৩৬৫-বার উল্লেখ করা হয়েছে।
বছরে যে ৩৬৫-দিন তা কে না জানে?
'ইয়াওমুন' শব্দের বহুবচন 'আইয়াম' মানে দিনসমুহ, এ শব্দটি এসেছে ৩০ বার। আরবী ভাষায় 'চাঁদ' হচ্ছে মাসের সূত্র সূচক, গড়ে বছরের প্রতি মাসে ৩০ দিন, এটাই হচ্ছে চান্দ্র বছরের নিয়ম। হতবাক হতে হয় চাঁদের আরবী প্রতিশব্দ 'ক্বামার' শব্দটি কোরআনে মোট ৩০ বারই এসেছে।
'শাহরুন' মানে মাস, কোরআন মাজীদে এ শব্দটি এসেছে মোট ১২ বার।
'সানাতুন' মানে বছর, কোরআনে এ শব্দটি এসেছে ১৯ বার।
কারণ হিসেবে আমরা সম্প্রতি আবিস্কৃত গ্রীক পন্ডিত মেতনের 'মেতনীয় বৃত্তের' কথা উল্লেখ করতে পারি। তিনিই প্রথম এ তত্ত্বটি আবিস্কার করেন যে, প্রতি ১৯ বছর পর সূর্য ও পৃথিবী একই বৃত্তে অবস্থান করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।