এই ব্লগ একান্ত আমার ব্যাক্তিগত চিন্তা চেতনা ও মত প্রকাশের ক্ষেত্র। মতের অমিল থাকা অস্বাভাবিক নয়। আবার আমার লেখা বা মতেও ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। তাই যেকোন বিষয়ে সুস্থ আলোচনা-সমালোচনা কাম্য।
র্যাগিং- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মাত্রই পরিচিত একটি শব্দ।
আর যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রাখার রঙিন স্বপ্ন দেখে তাদের অনেকের কাছেই আতঙ্কের নাম। প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলাম তখন যতটা না পরীক্ষা নিয়ে আতঙ্কিত থাকতাম, তার চেয়ে বেশি আতঙ্কিত থাকতাম র্যাগিং নিয়ে। ভর্তি যুদ্ধের সূচনা করেছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে, আর র্যাগিং এর জন্য জাহাঙ্গীরনগর এর সুনাম কারও অজানা থাকার নয়। যাই হোক তখনও বুঝতে শিখিনি র্যাগিং কি? আমার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে এক বড় ভাইকে প্রশ্নই করেছিলাম যে ভাই র্যাগিং কি? এইটা কি খাওয়ার কোন জিনিস নাকি অন্যকিছু?
যাই হোক বড় ভাইয়ের কল্যাণে র্যাগিং সম্পর্কে কিছু ধারণা পেয়েছিলাম জাহাঙ্গীরনগর থেকে, তারপর জাবি তে বেশ কয়েকবার র্যাগিং এর হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে সমর্থ হয়েছিলাম।
তারপর যে বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি পরীক্ষা দিতে যেতাম, সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কেই আগে খোঁজ নিতাম, বিশেষ করে র্যাগিং হয় কি না- এইটাই ছিল মূখ্য।
অবশেষে ভর্তি হলাম হাবিপ্রবি তে। ভর্তির পর যখন প্রথম দিন ভার্সিটিতে হলে উঠলাম, আমার জীবনের প্রথম র্যাগিং এর মুখোমুখি হলাম তখন। দুপুর একটার দিকে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢুকার পর দুপুর দুইটায় লাঞ্চের পর পরই র্যাগিং।
আমি ও আমার এক বন্ধু হোটেল থেকে লাঞ্চ করে ফেরার সময় ডি বক্সে অপেক্ষমান(যারা কিনা র্যাগিং এর জন্য এখানেই পজিশন নিয়ে থাকতেন) সিনিয়র ভাইরা আমাদের ডাকল। প্রথমবার শুনেও না শুনার ভান করে দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম।
কিন্তু দ্বিতীয়বার আর পারলাম না, বড় ভাইরা দেখি সব এক্কেবারে ভাইভা নিতে বসে গেছে। আমার সাথে থাকা বন্ধুটি অনেক কম কথা বলে, আর দৈর্ঘ্য প্রস্থেও আমার প্রায় অর্ধেক, তাই সমস্ত প্রশ্নের মুখোমুখি আমাকেই হতে হল। ঐ বেটা আমার পিছনে শুধু দাঁড়িয়ে থাকল। প্রশ্নত্তোর চলল কিছুক্ষন, অবশেষে জনৈক নেতার কল্যাণে ছাড়া পেয়েছিলাম পরিস্থিতি আরও খারাপ হবার আগেই। তারপর অনেকদিন ডি বক্সের সামনে দিয়ে যাইনি, রুমের বাইরে হলের মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও বের হতাম না।
তখন থেকেই মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম ভার্সিটি লাইফে কাউকে র্যাগ দিব না, আজ পর্যন্ত যা অক্ষত রেখেছি।
এখন দেখি ক্যাম্পাসে র্যাগিং এর অবস্থা আরও সিরিয়াস পর্যায়ে গেছে। আমাদের সময় কোন সিনিয়র গায়ে হাত তুলতো না, কাউকে দিগম্বর করার মত কিছুও ঘটে নাই, র্যাগিং এর পর খাওয়ানোর প্রচলন ছিল। এখন র্যাগিং পুরাই নেগেটিভ। নিউ ফার্ষ্ট ইয়ারের পুলা পাইনের অবস্থা দেখে খুব কষ্ট লাগে।
সারাদিন শুধু “আসস্লামুয়ালাইকুম ভাইয়া, “আসস্লামুয়ালাইকুম ভাইয়া”। সালাম দেয়া ভাল। কিন্তু অবস্থা এতটাই খারাপ যে, মুখে ব্রাশ নিয়ে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছি, তখন ১০ জনের এক গ্রুপ আসল, এসেই সালাম, একে একে সবার সালাম নাও, যেন উলটা র্যাগ। ওযু করছি, এমন সময় সালাম। সব দোষ র্যাগিং এর- প্রথমেই এদেরকে এমন ভাবে র্যাগিং দেয়া হয়েছে যে যাকে দেখবে তাকেই সালাম দিবে।
যাই হোক, অনেক সময় অনেক খারাপ ঘটনা ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন র্যায়গিং এর ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন। প্রতি বছর র্যাগিং প্রতিরোধে নোটিশ টাঙানো হলেও, কাজের কাজ কিছুই হয় না। কেউ প্রশাসনের কাছে অভিযোগেরও সাহস পায় না। অনেকে জানেই না যে প্রশাসনের কাছে র্যাগিং এর অভিযোগ আনা যায় র্যাগ দাতার বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে র্যাগিং অনেকেই ভাল চোখে দেখলেও আমি দেখি সম্পূর্ণ নেগেটিভ হিসেবে।
বর্তমানে এটি খুব বাজে একটি ট্রেডিশন হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে আবির্ভূত হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে যে সব বাজে সংস্কৃতি চালু আছে তার মধ্যে এটি একটি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আর এ সংস্কৃতি বন্ধের দায়িত্ব নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুলোকেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।