মানুষ আর প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো-চেতনাগত ও সংস্কৃতিগত।
http://www.biplobiderkotha.comView this link
একবার বিদায় দে-মা ঘুরে আসি।
হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী।
কলের বোমা তৈরি করে
দাঁড়িয়ে ছিলেম রাস্তার ধারে মাগো,
বড়লাটকে মারতে গিয়ে
মারলাম আরেক ইংল্যান্ডবাসী।
শনিবার বেলা দশটার পরে
জজকোর্টেতে লোক না ধরে মাগো
হল অভিরামের দ্বীপ চালান মা ক্ষুদিরামের ফাঁসি
দশ মাস দশদিন পরে
জন্ম নেব মাসির ঘরে মাগো
তখন যদি না চিনতে পারিস দেখবি গলায় ফাঁসি’
এই গানের মধ্যে দেশমাতাকে ছেড়ে যাওয়ার যে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে এবং যার কথা উঠে এসেছে সে এ উপমহাদেশেরই সূর্য সন্তান_ক্ষুদিরাম।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন কারণে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী যাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। যে ফাঁসির মঞ্চে হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন, সে আর কেউ নয়, বাংলার বিপ্লবী ক্ষুদিরাম।
ক্ষুদিরামের ফাঁসি কার্যকর হয় ১৯০৮ সালের ১১ আগষ্ট। সময়ের ঘড়িতে তখন ভোর ৪টা। সে সময় ক্ষুদিরামের পক্ষের আইনজীবি ছিলেন শ্রী উপেন্দ্রনাথ সেন।
তাঁর ভাষ্যমতে - “ফাঁসির মঞ্চে ক্ষুদিরাম নির্ভিকভাবে উঠে যান। তাঁর মধ্যে কোন ভয় বা অনুশোচনা কাজ করছিল না। এদেশের নবীন যৌবনের প্রতীক হয়ে হাসিমুখে তিনি উঠে যান ফাঁসির মঞ্চে। ”
যে গানটি আজও বিভিন্ন গণ আন্দোলনের অনুপ্রেরণা যোগায়, বিপ্লবী ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি চেতনার আয়নায় চিত্রায়ন করে, সেটি রচনা করেছিলেন বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাস। যে বিপ্লবীর আত্মত্যাগের উপাখ্যানকে কেন্দ্র করে এই গান তার নাম ক্ষুদিরাম।
সরল লৌকিক ঝুমুর বাউল সুরে গীত গানটি সারা বাংলায় জনগণের অন্তরে গেঁথে রয়েছে।
ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী। দুটি নাম। দুজন বিপ্লবীর নাম। নাম দুটি শুনলেই চেতনার আয়নায় ভেসে উঠে একটি ফাসিঁর দৃশ্য ও একটি রিভলভার দিয়ে মাথায় গুলি ছোড়ার দৃশ্য ও শব্দ।
কিছুক্ষণের জন্য হলেও চেতনা অসাড় হয়ে যায়। সমস্ত শরীর-মন শিহরণে কেঁপে উঠে। এ এক অদ্ভুদ ক্ষোভ আর গর্বের অনুভূতি। কিন্তু কিয়ৎক্ষণ পরেই আমরা সব ভুলে যায়। ফিরে চলি সাম্রাজ্যবাদী চেতনায়।
তখন আমাদের সামনে দেশপ্রেমের চেয়ে নিজস্বার্থ বড় হয়ে দাড়ায়। কোনো ত্যাগ নয়, ভোগই মূল দর্শন। যার কারণে আজকে কাউকে বিপ্লবী বললে সন্দেহ চলে আসে। এবং যারা সন্দেহ করে তারা এই বৃত্তের বাইরে আসতে সক্ষম হয় নি। আপনি আমি সকলে একই।
প্রফুল্ল চাকী ক্ষুদিরামের তিন মাস দশ দিন পূর্বে নিজের রিভলবারের গুলিতে মোকামঘাট রেলস্টেশনে জীবন বিসর্জন দেন। ব্রিটিশ বুনো জানোয়ারের হাতে মরবে না বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
১৯০৮ সালে এমনি আরো অনেক বিপ্লবীকে ইংরেজের ফাসিঁ কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছিল কানাইলাল, সত্যেন বসু, গোপাল সেনসহ আরো অনেককে।
ক্ষুদিরামের বাবা- ত্রৈলক্যনাথ। মা- লক্ষ্ণী দেবী।
অপরূপা, সরোজিনী, ননীবালা তিন বোনের নাম। ক্ষুদিরামের জন্মের পূর্বে দুই ভাই মারা যায়। ছেলে সন্তান না বাঁচার কারণে লক্ষ্ণী দেবী ক্ষুদিরামের জন্মের পর তাকেঁ তিন মুঠো চালের ক্ষুদের বদলে অন্যের কাছে ঠেলে দেন।
বাবা মারা যায় ক্ষুদিরামের বয়স যখন সাত বছর। মা মারা যান তার ছমাস পরে।
দুর সম্পর্কের এক দাদা ও বৌদির কাছে কতটুকু আর স্নেহ-ভালবাসা পাওয়া যায়। শুধু কাজ আর অত্যাচার। অশান্তিতে ভরা মন। সঙ্গী হল দুঃখ আর একাকীত্ব। তবু পেটের দায় ৮/৯ বছরের ছেলেকে সবই সইতে হতো।
এ সকল কারণে পড়াশোনায় তার মন আর বসলো না। কিন্তু ফাঁক পেলেই খেলাধুলা, ব্যায়াম, এ্যাডভেঞ্চার জাতীয় কোনো কাজে প্রচুর আকর্ষণ ছিল তার।
দাদা-বৌদির দিনের পর দিন অমানবিক আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন ক্ষুদিরাম। বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে পড়লেন একদিন। বোনের বাসায় যাবেন কিনা ভাবতে ভাবতে মেদিনীপুরে এসে পৌছলেন।
ক্ষুদিরাম বোনের বাসা চিনতেন এবং তাকে ভগ্নীপতির বাড়িতে পৌছে দিলেন। সেখানে থেকে মেদিনীপুর হ্যামিলটন স্কুলে ক্লাস ফোরে ভর্তি হলেন। তারপর ভর্তি হন কলেজিয়েট স্কুলে। এই স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।
ক্লাস ফাকিঁ দেয়া ও পড়াশোনা না পারার জন্য তাকে স্কুলের মাস্টার মহাশয় সকল প্রকারের শাস্তি দিতেন।
তার উপর বখাটেদের ওস্তাদ বলেও গালি দিতে বাদ দিতেন না কখনো। ক্ষুদিরাম তার মতো বাউণ্ডুলে স্বভাব ছেলেদের নিয়ে ভুত ধরা এবং তাড়ানোর দল গড়লেন। তখনকার দিনের কুসংস্কার তাকে মোটেও স্পর্শ করতে পারেনি। তাই সমাজের মানুষের মধ্য থেকে কুসংস্কার দুর করার জন্য এই প্রচেষ্টা। এজন্যও তাকে অনেকের বকাবকি খেতে হয়েছে।
এক পর্যয়ে স্কুলটা ছেড়ে দিলেন। মেধাবী ও দুরন্ত এবং কিছুটা বাণ্ডুলে স্বভাবের কিশোর ক্ষুদিরাম ১৯০৩ সালে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে পড়াশুনা বন্ধ করে দেন। এ সময় তিনি ঝুকে পড়েন দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডে। অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সংকল্প গ্রহণ করেন।
স্কুলের অদুরে ভবানী মন্দির প্রাঙ্গনে গিয়ে সময় কাটাতেন।
সেখানে স্বাক্ষাৎ হলো সত্যেন বসুর সাথে। ১৯০৩ সালে ক্ষুদিরাম তাঁর কাছে গুপ্ত সমিতির (সশস্ত্র বিপ্লববাদী সংগঠন) মন্ত্র শিষ্য হিসেবে দীক্ষা গ্রহণ করলেন। এতো দিন পর ক্ষুদিরাম মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারলেন। মনে ইচ্ছা মতো পড়াশোনা, খেলাধুলাসহ নানা কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকতেন। বিপ্লবীদের আদর-স্নেহ-ভালবাসায় সিক্ত করলেন নিজেকে।
রাজনৈতিক পড়াশোনা ক্রমান্বয়ে বাড়াতে থাকলেন। শপথ গ্রহণ করলেন দেশমাতৃকাকে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য।
১৯০৫ সালের অক্টোবরে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন চলার সময় বরিশালের টাউন হলে অশ্বিনী কুমার বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনকে জোরদার করা প্রসঙ্গে তার উপলব্দির কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন_ ‘আমরা যে সব বক্তৃতা করে বেড়াচ্ছি, যদি কেউ তা যাত্রাপালা আকারে গ্রামে গ্রামে প্রচার করে, তাহলে তা_ আমাদের এরূপ সভা বা বক্তৃতার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হবে’।
অশ্বিনী কুমার দত্তের এই বক্তব্য মুকুন্দদাস খুবই গুরুত্বসহকারে নিলেন। মাত্র ৩মাসের মধ্যে রচনা করলেন অসাধারণ যাত্রাপালা ‘মাতৃপূঁজা’। মাতৃপূঁজার মূল বিষয় ছিল দেশপ্রেম। দেশমাতৃকাকে একত্রীকরণের লক্ষ্যে তার সন্তানরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে ভারতমাতাকে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করবে। পুলিন দাস, অশ্বিনী কুমার দত্ত, মুকুন্দদাস দারুণ দেশপ্রেমের উন্মাদনা সৃষ্টি করলেন তরুণ সমাজের মধ্যে।
“বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে জন্ম নেয় স্বদেশি আন্দোলন। যে আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে ছাত্ররা। বিশেষ করে স্কুলের কিশোরেরা। আর এই দুই আন্দোলনের সমর্থনে সক্রিয় অহিংস সংগ্রাম যেমন পরিচালিত হয়, তেমনি সহিংস কর্মকাণ্ডভিত্তিক গোপন সংগঠনেরও জন্ম হতে থাকে।
বঙ্গভঙ্গবিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন ক্ষুদিরাম বসু।
এ সময় ক্ষুদিরাম সত্যেন বসুর নেতৃত্বে গুপ্ত সংগঠনে যোগ দেন। এখানে তাঁর শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও রাজনৈতিক শিক্ষা হয়। এখানে পিস্তল চালনার শিক্ষাও হয়। এই গুপ্ত সংগঠনের কর্মসুচির অংশ হিসেবে ক্ষুদিরাম ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় জ্বালিয়ে দেন এবং ইংল্যান্ড থেকে আমদানীকৃত লবণবোঝাই নৌকা ডুবিয়ে দেন। এসব কর্মকান্ডে তাঁর সততা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়।
ফলে ধীরে ধীরে গুপ্ত সংগঠনের ভেতরে তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়”-রতন সিদ্দিকী।
১৯০৬ সালে কথা প্রসঙ্গে সত্যেন বসু বললেন, হঠ্যাৎ দেশটা বেশী রকম কালীভক্ত হয়ে উঠছে। তাঁর কথার জবাবে ক্ষুদিরাম বলে উঠলেন, আর যাই হোক কালীর কৃপায় পাঠা খেতে মিলে আর সেই পাঠার লোভে ভক্তও জোটে। সত্যিকার অর্থে এমন সময়টাই তখন চলছিল। দেশপ্রেমের একটা ছোট বই ছাঁপা হয়েছে, এগুলো বিক্রির জন্য তরুণদের উপর দায়িত্ব পড়ল।
ক্ষুদিরাম তাদের মধ্যে অন্যতম।
মেদিনীপুর মারাঠা কেল্লায় প্রবেশ দ্বারে দাড়িয়ে ক্ষুদিরাম বই হাতে বলছেন- আসুন পড়ুন। দেশের দুর্দশার খবর জানুন। অত্যাচারী রাজশক্তির নির্মমতার নজির – এই বই আপনাদের জন্য।
“ভারতের ছাত্র আন্দোলনের সূত্রপাত সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতার মধ্য দিয়ে।
বৃটিশদের শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার অদম্য মানসিকতা সেদিনের ছাত্র সমাজকে আপসহীন বিপ্লবী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিল। বহু যুবক বিপ্লবী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিল। বহু যুবক বিপ্লবী দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল এমনকি আমরা দেখেছি শিক্ষকদের প্রেরণাতেও বহু মেধাবী ছাত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শিক্ষক-ছাত্রের এক অনুকরণীয় সম্পর্ক গড়ে দিয়েছিল সে সময়। ক্ষুদিরামেরা সেই অগ্নিগর্ভ সময়েরই সৃষ্টি।
সে সময়ে তারুণ্যের প্রাবল্য আঘাত হানে অত্যাচারী শাসকের দুর্গে। ‘বোকা’ ক্ষুদিরামরাই নতুন পথ দেখান”-
নির্মল সেন।
হঠ্যাৎ এ্যাই কেয়া করত্যা হ্যায়। চুপ বই। একজন হাবিলদার ক্ষুদিরামের হাত চেপে ধরল।
শক্তি ও বয়সে তার চেয়ে অনেক বেশি। তবুও ক্ষুদিরামের কাছে-কুছ পরোয়া নেহি। হাবিলদারের মুখের মধ্যে এক বকসিং মেরে দিলেন সমস্ত শক্তি দিয়ে। তৎক্ষনাৎ নাক ফেঁটে রক্ত বেরুলো। সত্যেন বসু ঠিক ওই সময় এসে হাজির হলেন।
দেখলেন বিষয়টি। সান্তনা দিলেন হাবিলদারকে। ক্ষুদিরাম মুহূর্তের মধ্যে হাওয়া। কয়েকদিন আত্নীয়ের বাড়িতে আত্নগোপন করে রইলেন। তাতে কি আর একজন দেশপ্রেমিক শান্তি পায়? দেশ জোড়া বিপ্লবের ঢেউ।
হাজার হাজার ছেলে মেয়ে জড়িয়ে আছে দেশমাতৃকার কাজে। পুলিশে ধরার ভয়ে আর কত দিন পালিয়ে থাকা যায়। মনস্থির করলেন পুলিশের কাছে ধরা দেবেন। তাই আলীগঞ্জের তাঁতশালায় চলে এসে ধরা দিলেন। পুলিশ মারা ও নিষিদ্ধ বই বিলির অপরাধে ক্ষুদিরামের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের মামালা করা হল।
বাংলাসহ সারা ভারতবর্ষ এই প্রথম ক্ষুদিরামকে চিনলো। ১৩ এপ্রিল ক্ষুদিরাম মুক্তি পেল। খানিকটা শাস্তি পেলেন সত্যেন বসু। ক্ষুদিরাম এবার গুপ্ত সমিতির কাজে আরো উঠে পড়ে লাগলেন।
ইতোমধ্যে বিলেতী পণ্য বর্জনের পালা শুরু হলো।
বিলেতী পণ্য নৌকায় দেখলে ক্ষুদিরামসহ বাংলার অসংখ্য ক্ষুদিরাম বাহিনী তা ডুবিয়ে দিত।
১৯০৭ সালের শেষের দিকে ক্ষুদিরাম তার দিদির সাথে কালী পুঁজা দেখতে যান। কালী পুঁজার সময় একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে ডাকহরকরাকে ছুরি মেরে গুপ্ত সমিতির জন্য টাকা সংগ্রহ করে আনেন।
সারাদেশে শুরু হলো ব্রিটিশ শাসক আর সশস্ত্র বিপ্লববাদীদের সংঘর্ষ। ধড়পাকড় আর নির্যাতন।
বিপ্লবীরাও সুযোগ বুঝে গুম করে দেয় ব্রিটিশ শকুনদের। ব্রিটিশ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধিয়েঁ দিল। এক্ষেত্রে ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর যথেষ্ট উস্কানি ছিল। তিনি ছিলেন হিন্দু বিদ্বেষী।
স্বাধীনতাকামী বিপ্লববাদী দলগুলোকো দমন করার জন্য ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী মরিয়া হয়ে উঠে।
একের পর এক বিপ্লবীকে ধরে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা রুজু করে শারিরীক নির্যাতন, আন্দামান,আলীপুরসহ বিভিন্ন জেলে যাবতজীবন কারাদণ্ড দিয়ে পাঠানো শুরু করলো। ব্রিটিশ বিচারক ছিলেন কিংসফোর্ট। এক নিষ্ঠুর বিচারক। ১৩ বছরের ছেলে সুশীল সেন। পুলিশ সার্জেন্টকে ঘুসি মেরে নাক ফাঁটিয়ে দেয়।
সুশীল সেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হলো। কিংসফোর্ট বিচারক। বিচারে ১৫ টি বেত্রাঘাত মারার হুকুম দিল। রক্তাক্ত হলো সুশীল সেন। দুঃসহ যন্ত্রণায় কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়লো।
খবরটি দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়লো। সকল তরুণ বিপ্লবী এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইংরেজকে বিতাড়িত করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো। বিপ্লববাদী দলের সুবোধ মল্লিক, হেমচন্দ্র, চারুদত্ত, বারীন ঘোষ ও অরবিন্দ সিদ্বান্ত নিলেন কিংসফোর্টকে হত্যা করার। মিটিংয়ে প্রশ্ন উঠলো একাজের দায়িত্ব কাকে দেব? আড়াল থেকে মিটিংয়ের কথা শুনে প্রফুল্লচাকী বললেন-আমি প্রস্তুত। বলুন কি করতে হবে আমাকে।
কিন্তু সবাই ভাবলেন একাজের জন্য আরো একজন দরকার। ভেবেচিন্তে ক্ষুদিরাম বসুর নাম ঠিক হলো।
ক্ষুদিরামের অবিভাবক সত্যেন বসুর কাছে চিঠি লিখে পাঠানো হলো। চিঠি অনুযায়ী ১৯০৮ সালের ২৫ এপ্রিল ক্ষুদিরাম কোলকাতায় এসে পৌছালেন। গোপীমোহন দত্তের ১৫ নম্বর বাড়ি ছিলো বিপ্লবীদের তীর্থক্ষেত্র।
এখানে বসেই হেমচন্দ্র ও উল্লাসকর শক্তিশালী book bomb তৈরী করলেন। এ বোম বইয়ের ভাঁজে রাখা যেত। বেশ কৌশলে একটি বই কিংসফোর্টের কাছে পাঠানো হলো। কিন্তু কিংসফোর্ট বই না খোলার কারণে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেন। আবার নতুন প্রস্তুতি।
কোলকাতার নবকৃষ্ণ ষ্ট্রীটের ৩৮/৫ এর বাড়ি। বারীন ঘোষের মাধ্যমে কিংসফোর্টকে মারার বোমা পৌছে গেল প্রফুল্লচাকী ও ক্ষুদিরামের কাছে। রিভলবার কেনার জন্য টাকা ও মজঃফরপুরে যাওয়ার মানচিত্র দেয়া হলো তাদেরকে। এই প্রথম দুজন একত্রিত হলো রেলস্টেশনে । এর আগে কেউ কাউকে চিনতো না।
কথা হলো। সিদ্বান্ত নিলো কিংসফোর্টকে হত্যা করার। পাঁচ পাঁচটা দিন চলে গেল। ক্লাব হাউজ থেকে সন্ধার পর সাদা ফিটন গাড়িতে নিয়মিত ফিরে আসেন কিংসফোর্ট। ৩০ এপ্রিল।
ছায়াঘন পিছঢালা পথ দিয়ে সাদা ফিটন গাড়ি আসতে ছিলো। গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করলো লড়াকু সৈনিকরা। কিন্তু ওই গাড়িতে কিংসফোর্ট ছিলো না। ছিলো দু’জন বিদেশী। তারা মারা গেল।
তাৎক্ষনিক ওই স্থান থেকে চলে গেলেন উভয়ে। কিন্তু এক পর্যায়ে ধরা পড়লো ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্লচাকী। প্রফুল্ল ধরা পড়ার সাথে সাথে নিজের মাথায় রিভলবারের গুলি ছুড়ে মারা যান। প্রায় তিন মাস দশ দিন পর ১১ আগষ্ট ১৯০৮ সাল। ক্ষুদিরামের সকল বিষয় জানা ছিলো।
হাঁসতে হাঁসতে ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন। ভারতমাতার জয়—একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি...........
“ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের যেসব সত্য কাহিনী লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে কিংবদন্তির রূপ নিয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলো ভগত সিং, সুর্যসেন, বিনয়-বাদল-দিনেশ ও ক্ষুদিরামের কাহিনী। এর মধ্যে ক্ষুদিরামের কাহিনী অধিক মাত্রায় লোকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার কারণ সম্ভবত ক্ষুদিরামের বয়স ও দুঃসাহসিকতা”-রতন সিদ্দিকী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।