আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাহাড়ি নিপীড়িত জনগোষ্ঠির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসন দাবীর প্রশ্নে শাসকশ্রেণীর বিভিন্ন অংশের রঙ বে রঙের জোড়াতালি তত্ত্বের বিপরীতে একটি বিশ্লেষণ।

যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি

আমাদের নিজেদের মত করে সাজানো সমাজে আদ্যপান্ত লোহার ব্যারিকেড দিয়ে অনেক ধেয়ে আসা জ্বলজ্বলে সত্য, নির্মম বাস্তবতা, বেশুমার মানবতার অবমাননা আর নির্জলা মনুষ্যমৃত্যু সংবাদগুলোকে আমরা নিখুঁত কায়দায় অবজ্ঞা-অবহেলায় এড়িয়ে যাওয়া রপ্ত করেছি। একে আমরা বলি-শান্তি আর সৌহার্দপূর্ণ বসবাস! অ্যাফ্লুয়েন্ট নগরকেন্দ্রীক সমাজে এটি একটি ‘আর্ট’ বটে! চোখ মেললেই যেখানে থ্যাতলানো মুখচ্ছবি, পা বাড়ালেই যেখানে মড়ার খুলি, হাত বাড়ালেই যেখানে এলিট শ্রেণীর পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রীয় ‘আর্টিস্টিক হত্যাকান্ডের’ শিকার মৃত মানুষের ঠেলে বেরিয়ে আসা নাড়িভুঁড়ি, সেখানে আমাদের প্রাণান্ত চেষ্টা ফরগট-ফরগট-ফরগটেন! তার পরেও কিছু বেয়াড়া বাতাস কিছু অপ্রিয় বিষয় বয়ে নিয়ে আসে। আমরা ক্ষণের জন্য থমকে যাই। পর মুহূর্তে নীতি,তত্ত্ব আর আশু করণীয় মিশেল করে নিরাময়ের দাওয়াই আবিষ্কার করি। সেবন করি।

অতঃপর নিরাময়! শান্তি! শান্তি! অপার শান্তি!! এই অপার শান্তির বাতাবরণটি গত মাসের ১৯/২০ তারিখে একটু নড়ে গিয়েছিল। আমাদের দেশপ্রেমিক বীর সেনাদের তপ্ত বুলেটে কিছু পাহাড়ি ‘বেআক্কেলের’ মত মরে গিয়েছিল। অকস্মাৎ এমন বেয়াড়া ঘটনা ধামাচাপা দিতে আমরা মোটেই বিলম্ব করিনি! তাড়াতাড়ি এই মৃত্যুকে কর্পূরের মত উবিয়ে দিয়ে তত্ত-তালাশ করে তত্ত্ব হাজির করেছি। তাদের মৃত্যুকে অনিবার্য করে দিয়েছি বিচ্ছিন্ন হবার স্পর্ধার তকমা আর তিলক এঁকে। এই পোস্টের বিষয়বস্তু সেই ‘তকমা’ আর ‘তিলক চিহ্ন’ পরিয়ে মৃত্যুকে জায়েজ করবার অপচেষ্টাকারিদের বিরুদ্ধে স্বশব্দ প্রতিবাদ।

পাহাড়ে কবে থেকে বিরোধের সূত্রপাত, কেন পাহাড়িরা প্রতিবাদমুখর, সংখ্যাগুরু বাঙালিরা কেন কি উদ্দেশে পাহাড়ে শ্যেন দৃষ্টি ফেলেছে, কেন পাহাড়িরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করছে, কবে থেকে এই বঞ্চিত মনে করা শুরু সে সব কম-বেশি সকলেই জানেন। জনসমক্ষে আনব না করেও তা ঠেকানো যায়নি। তাই সেই খতিয়ান এখানে টানা হচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে চালানো অত্যাচারের মাসওয়ারি বা বছরওয়ারি পরিসংখ্যানও দেওয়া হচ্ছেনা। শুধু জাতিগত নিপীড়ন করে একটি জাতিস্বত্তার উচ্ছেদের দুরভিসন্ধীই উল্লেখের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জাতিগতভাবে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা ও নিশ্চিহ্ন চূড়ান্ত লক্ষ্য। পাকিস্তানী বড় বুর্জোয়া শ্রেণী যেমন বাঙালিদের উপর জাতিগত নিপীড়ন চালিয়েছিল,( আরো বিভৎস কায়দায়, তখন জাতিগত রিপ্লেসমেন্ট হচ্ছিলনা), ঠিক একই কায়দায় ৭২ সাল থেকে বাঙালি বড় বুর্জোয়া শাসক শ্রেণী ক্ষুদ্র পাহাড়ি জনগোষ্টির উপর জাতিগত শোষণ-নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। যা আজ গণহত্যা-জ্বালাও-পোড়াও এর সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই নিপীড়ন পরোক্ষ/অঘোষিত সামরিক শাসনরূপে চলছে। পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে বাঙালি পুনর্বাসনের প্রক্রিয়ায় এখন পাহাড়িরা নিজ ভূমিতে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে যাচ্ছেন।

৩০ বছর যাবৎ এই পুনর্বাস প্রক্রিয়া চলছে। আগামি ১০/১৫ বছরের মধ্যে পাহাড়ি জনগণের আর জাতিগত অস্তিত্ব হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তারা জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারেন। এখনই পাহাড়িরা সেটেলাদের চেয়ে সংখ্যায় কমে গেছেন। এখন প্রশ্ন আসে, কেন এই এথেনিক নির্মূলকরণ? কারণ প্রথমেই পাহাড়িরা বলে ফেলেছে-তারা তাদের নিজস্ব জাতিস্বত্তা নিয়েই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার চায়।

তারা তাদের ঐতিহ্যগত নিজস্ব সংস্কৃতি, তাদের নিজস্ব আচার, নিজস্ব ভাষাভাষির সংস্কৃতিতে বসবাস করতে চায়। তাদের চিরায়ত ভূমি ব্যবস্থকেই বহাল রাখতে চায়। আর সেই চাওয়া মানেই সেখানে বাঙালি সেটেলারদের তারা স্বাগত জানাবে না। জানায়ওনি। এটাই হচ্ছে শাসকশ্রেণীর সাথে তাদের মূল দ্বন্দ্ব।

আর শাসকশ্রেণী সেই দ্বন্দ্ব মোকাবেলা করার জন্য তোপের মুখে ঠেলে দিয়েছে সমতলেরই আর এক হতভাগ্য দরিদ্র চাষাভুষাদের। তাদের টাকা-পয়সা, জমিজিরেতের লোভ দেখিয়ে পাহাড়ে পাঠিয়েছে পাহাড়ি-বাঙালি সমতা আনার জন্য। এরপর শাসকদের পক্ষে বলা হচ্ছে- ‘পাহাড়িরা পাহাড়ের আদিবাসী নয়’! ‘বাংলাদেশের সংবিধান মানার কারণে পাহাড়েও বাঙালিদের সমান অধিকার’। ‘বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকেই পাহাড়িদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সমতলের নাগরিকদেরকেও মেনে নিতে হবে'। অসহায় গরিব সেটেলারদের ধরে ধরে পাহাড়ে পাঠানোর পর বলা হচ্ছে-‘পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমারা বার্মার আরাকান প্রদেশ থেকে এসে এদেশে বসতি স্থাপন করেছে এবং তারাই বহিরাগত!’ এসব প্রচার চালায় পাহাড়ে বাঙালি গণপরিষদ, আর সমতলে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা।

এই জাতীয়তাবাদীরা নৃত্বাত্তিক চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখাতে চায় ‘যেহেতু পাহড়িরা নৃ-জাতিগোষ্ঠি নয়, সেহেতু তারা পাহাড়ের আদিবাসীও নয়। সুতরাং তাদের ‘আদিবাসী’ দাবী ধোপে টেকে না!(যদিও ইতিমধ্যে জাতিসঙ্ঘ এই আদিবাসী বা ইনডিজেনাসদের রক্ষার জন্য একটি ক্লজ করতে বাধ্য হয়েছে। এটির ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। দুনিয়ার বেশির ভাগ স্থানেই বড় জাতির জাতীয়তাবাদের ঠেলায় ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বার ক্রমশ নিজভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের ফলেই জাতিসংঘ তাদের এই স্বীকৃতটা দিতে বাধ্য হয়েছে। ) আর এই রকম একটি ব্যাখ্যা তৈরি করে পাহাড়ে একপ্রকার ‘উপনিবেশ’ই গড়ে তুলেছে শাসকগোষ্ঠি।

এই ব্যাখ্যা নিয়ে দরিদ্র বাঙালিদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে পাহাড়ি-বাঙালি দাঙ্গা উষ্কে দিচ্ছে। শাসকশ্রেণীর হাতিয়ার হিসেবে তার সেনাবাহিনীর অফিসার থেকে শুরু করে বেসামরিক আমলা, ব্যবসায়ী, বুর্জোয়া রাজনৈতিক নেতারা প্রত্যেকেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে-পাহাড় কেটে, জঙ্গল সাফ করে, জমি লিজ নিয়ে পাহাড়ি জনগণকে স্রেফ লুট-ধর্ষণ করে। এখন নতুন এক ফন্দিফিকির বের করা হয়েছে! বলা হচ্ছে পাহাড়ে চাকমারাই বহিরাগত! আসুন দেখা যাক ‘বহিরাগত’ প্রশ্নে ইতিহাসের রায়ঃ সুদূর অতীতে চাকমা বা অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগুলো এখানে ছিলনা। জায়গাটি মনূষ্য বসতিবিহীন ছিল। চাকমারা তখন পার্শ্ববর্তি আরাকান বা অন্য কোন জায়গা থেকে এসে এসেছেন, যেমন একাত্তরের আগে বাঙালি শাসকদেরও অস্তিত্ব ছিলনা।

মানুষের ইতিহাসে এরকম সর্বত্র হয়েছে, কারণ পৃথিবীর সব জায়গা প্রথম থেকেই মানুষের বাসপোযোগী ছিলনা। বাইরে থেকে মানুষ গিয়ে এক একটা জায়গাকে বাসপোযোগী করে বসতি স্থাপন করে। এখানে আদিবাসী তারাই যারা প্রথমে একটা জায়গাকে বাসপোযোগী করে বসতি স্থাপন করেন। সেই হিসাবে চাকমা এবং অন্য ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তাগুলোই পাহাড়ে আদিবাসী। পার্বত্য জনগণের উপর যে জাতিগত নিপীড়ন ও শোষণ-লুণ্ঠন চলছে এবং এ ক্ষেত্রে বাঙালিরাই হচ্ছে নিপীড়ক জাতি এবং এ নিপীড়ন চলছে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের কারণে।

সেটি দিবালোকের মত স্পষ্ট হলেও তাকে বিভিন্ন তত্ত্ব-দর্শন-ফেৎনা-সংবিধানের সূত্র দিয়ে জায়েজ করার চেষ্টা হচ্ছে। রাষ্ট্রের অখন্ডতা, বর্হিশত্রু কর্তৃক দেশ দখলের শঙ্কা, বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ খন্ডিত হওয়ার ভীতি মিশিয়ে কার্যত পাহাড়িদের অধিকারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। এই কাজগুলি করা হচ্ছে তিন ভাবে। এক পক্ষের ত্বত্ত্ব হচ্ছে ‘৫৪ হাজার বর্গমাইল পুরোটাই আমার দেশ’, এখানে পাহাড়ি-বাঙালি সহাবস্থান করবে। পাহাড়েও সেটেলারদের থাকার পূর্ণ অধিকারের কথা বলছেন।

আর এক পক্ষ একটু নমনীয় হয়ে বলছেন-‘৯৭ সালের শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পাহাড়িদের কার্যত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেওয়াই হয়েছে। তাই সংবিধানের আলোকেই পাহাড়ে বাঙালি সেটেলার, পাহাড়ি, সেনাবাহিনী থাকবে’। এই দুই পক্ষের সোজাসাপ্টা বক্তব্য না বোঝার কিছু নেই। কিন্তু তৃতীয় আর পক্ষ আছেন যারা মুখে মার্কসবাদের সাম্য এঁটে শ্রমজীবী মানুষের হিতাকাঙ্খী সেজে সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের দখলিকরণের বিরুদ্ধাচারণের নামে ওয়েলফেয়ার স্টেটের ধুয়ো তুলে কার্যত ফ্যাসিস্ট জাতীয়তাবাদী সংখ্যাগুরুত্বের অহমিকায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠির আত্মনিয়ন্ত্রেণের অধিকারকে ‘বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার দাম্ভিকতা’ বলে দু-ধারী কৃপাণ হাতে ময়দানে নেমে গেছেন। এই বুদ্ধিবৃত্তিক ভন্ডামির মুখোশ উন্মোচন পাহাড় বিষয়ে জানা-বোঝার এবং সিদ্ধান্ত টানার ক্ষেত্রে আশু কর্তব্য।

এই তৃতীয় পক্ষের পুরোধা হিসেবে বন্ধুবর পি মুন্সী বলছেনঃ(এখানে পি মুন্সী একটি নিমিত্ত মাত্র) (ক)পুরানো সমস্যাটাকে তিনি(শেখ মুজিব) জাতীয়তাবাদের দম্ভে খাটো করে জবরদস্তি করতে গিয়েছিলেন, এবং সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ হলো একাজে তাকে উৎসাহিত করেছিলেন, সংবিধান "বিশারদ", "প্রণেতা" কামাল হোসেন এন্ড গং। কলোনি লর্ড আ্যববুরি ও তাঁর বাংলাদেশী "সুশীল দোসর" চাকরবাকর এবং তাদের সংগঠন সিএইচটি কমিশন" এই ‌'সংবিধান বিশারদদের' এই পক্ষটি ব্যঙ্গ করে বলেন-‘উকিল-মোক্তারের’ সংবিধান। অথচ দেখুন যে বিশারদদের কানপড়ানি শেখ মুজিব শুনেছেন বলে বলা হচ্ছে তিনিই(মুন্সী) আবার সেই সংবিধানকে বেদবাক্য বলছেন- ১. বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কনষ্টিটিউশনের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন দাবি করে সেই কনষ্টিটিউশনের অধীনেই আবার পাহাড়িরা বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকতে পারে না। ২. শান্তিচুক্তির প্রথম ভিত্তিমূলক একটা কথা লেখা আছে যে, বাংলাদেশের কনষ্টিটিউশন মেনেই পাহাড়িরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করছে। ৩. এমনিতেই কনষ্টিটিউশনের বাইরে গিয়ে কোন দুই পক্ষ আঁতাত করে কোন চুক্তি করলেও আমাদের কোর্টে সেই চুক্তিই বাতিল হয়ে যাবে।

৪. বৈধভাবে পাহাড়ি-সমতলীর সহবস্হান যদি পাহাড়িরা নাই চায় তবে পাহাড়িদের সমঝোতা চুক্তি করতে আসার কোন মানে হয়না, দরকারই বা কী? এখানে আর ফুটনোটের কোন দরকার আছে বলে মনে হয়না, কেননা তিনিই নিজের যুক্তিকে নিজেই খন্ডন করেছেন। (খ) পার্বত্য চট্টগ্রামের ভুমি সমস্যা আমরা কী করে সমাধান করব সেটা এখন আর মুল ইস্যু নয় - বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করছে যারা সেই হায়নার দলের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। নইলে বাংলাদেশকেও বাঁচানো যাবে না। অর্থাৎ তিনি মূল সমস্যা নিয়ে ঠেকিয়েছেন "বাংলাদেশ বাঁচানো যাবেনা" তে। এর পরপরই তিনি বলছেন-“ক্ষমতাসীন সরকারের সিরিয়াস রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের জন্য একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিতে পারেন, যিনি হবেন পার্বত্য ইস্যুতে রাষ্ট্রের প্রধান এজেন্ট বা কর্তা।

আসলে তিনি হবেন পার্বত্য ইস্যুতে অন্তর্বতীকালীন এই সময়ে রাষ্ট্রের মুল রাজনৈতিক এজেন্ট। ঐ অঞ্চলের সেনা, পুলিশ সহ সব বাহিনী, সিভিল প্রশাসন তার অপারেশনাল অধীনে কাজ করবে। ভুমি কমিশনের সিদ্ধান্তের তিনি তার কাজের সাথে সমন্বয় করবেন এবং বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবেন”। এই বৈপরীত্য নিয়েও আমাদের ফুটনোট দেওয়ার আবশ্যকতা দেখিনা,কারণ তিনি ধরেই নিয়েছেন যে ভূমি সমস্যা এখন আর মূল সমস্যা নয়! বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সমস্যাই মূল! (গ)কাজেই সারকথা হলো, পাহাড়ি এলাকায় সমতলী যে কেউ নিজের বৈধ মালিকানা জমিতে অথবা বৈধ মালিক কারও বাসা বা জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস, ব্যবসা করতে পারবে। দুনিয়ার কেউ নাই এটা বাধা দিতে পারে; তাতে কোথাও কোন শান্তিচুক্তি একটা হোক আর নাই হোক।

এই কথার পর আর কি বলার থাকতে পারে? এতক্ষণ ধরে তিনি ইনিয়ে-বিনিয়ে যে তত্ত্ব-পলিসি হাজির করলেন তাতে সমাধান নেই টের পেয়েই আসল চেহারায় আবির্ভূত হলেন! “দুনিয়ার কেউ নাই এটা বাধা দিতে পারে; তাতে কোথাও কোন শান্তিচুক্তি একটা হোক আর নাই হোক। ” কি ভয়ংকর হুমকি! এইমত হুমকি কেবল মাত্র দিতে পারেন কোন ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসক, যে কিনা উগ্র জাতীয়তাবাদী। যার আশু লক্ষ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর সামরিক শক্তি বলে একটি জনগোষ্ঠির অধিকারকে পদদলিত করা। নিপীড়িত জনগোষ্ঠির মুক্তির মন্ত্র মাকর্সবাদ কি এই শিক্ষা দেয়? নিশ্চই না। আসুন দেখি মাকর্সবাদ কি বলে?কারণ এই সব ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তার টিকে থাকা বা বেঁচে থাকার প্রশ্নটির ব্যাখ্যা মাকর্সবাদ ছাড়া আর কোথাও পূর্ণাঙ্গরূপে মেলে না।

আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রসঙ্গে স্তালিন বোঝেন-“জাতির ইচ্ছামত জীবন বিন্যাসের অধিকার। অর্থাৎ সে জাতির স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে জীবন বিন্যাসের অধিকার যেমন আছে, আবার তেমনি সম্পূর্ণ পৃথক হবার অধিকারও আছে। মাকর্সবাদী-লেনিনবাদীদের কাছে সব জাতিই সার্বভৌম এবং সব জাতিই সমান অধিকার সম্পন্ন। কমিউনিস্টরা সব দেশেই জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ঘোষণা করে। আর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কথাটির অর্থ হলো, কেবল জাতির নিজের হাতেই তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের অধিকার থাকবে, জাতির জীবনে জবরদস্তি করার অধিকার কারও নেই(জাতি সমস্যা ও স্তালিনের চিন্তা।

পৃষ্ঠা ৪)। এবার এই পক্ষ হয়ত বলবেন-‘ হ্যাঁ, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার থাকতেই পারে, তাতো অস্বীকার করা হচ্ছেনা, তাই বলে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার কেন থাকবে’? আমরা আবারও স্তালিনের স্মরণাপন্ন হইঃ “স্বায়ত্তশাসনের ধারায় জাতি মাত্ররই জীবন-বিন্যাসের অধিকার আছে, এমনকি পৃথক হবারও অধিকার আছে। এ ক্ষেত্রে মাকর্সবাদীরা সর্বদা বিচার করে দেখবে-সেই স্বায়ত্তশাসনের দাবী অথবা পৃথক হয়ে যাবার দাবী সেই বিশেষ জাতির বেশিরভাগ লোক তথা মেহনতি মানুষের পক্ষে সুবিধাজনক হবে কি-না”(প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৫) এবার কি তারা বলবেন-‘পাহাড়িদের এইসকল দাবী বেশিরভাগ লোকের নয়? মুষ্টিমেয় কয়েকজনের? তা যেহেতু বলার উপায় নেই, তাই তারা বলছেন-“নৃতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে পাহাড়িরা কোন জাতিই নয়, জাতি হয়ে উঠতে পারেনি”। মাকর্সবাদে এরও উত্তর আছেঃ “একটি জাতি হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবে গড়ে-ওঠা একটি স্থায়ী জনসমষ্টি যা একই ভাষা, অঞ্চল, অর্থনৈতিক জীবন এবং একই সংস্কৃতির মধ্যে অভিব্যক্ত মনস্তাত্ত্বিক গঠনের ভিত্তিতে গঠিত”(প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২)। সুতারাং চাকমারা বা অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগুলো ১০০০ বিসি তে ছিল কি ছিলনা সেই প্রশ্ন অবান্তর।

এই কথিত রাষ্ট্র-সমাজ বিশ্লেষকদের আরও একটি ভ্রান্ত ধারণা হচ্ছে পাহাড়িরা বর্হিশত্রুর সাথে (এখানে সিএইচটি, যাদের সাথে থাকা লোকজনকে মুন্সীজী ‘চাকার-বাকর’ বলছেন) আঁতাত করে দেশ ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করছে! এ প্রসঙ্গে আমরা যথাযথ উত্তরটি পাই লেনিনের কাছে। লেনিন বলছেন-“আমরা যদি হাজার ঢঙে ঘোষণা ও পুনরাবৃত্তি করতে থাকি যে, সমস্ত জাতীয় অত্যাচারের আমরা ‘বিরোধী’ আর অন্যদিকে যদি নিপীড়কের বিরুদ্ধে এক নিপীড়িত জাতির কোন কোন শ্রেণীর অতিগতিশীল ও আলোকপ্রাপ্ত অংশের বীরত্বপূর্ণ বিদ্রোহকে ‘যড়যন্ত্র’ আখ্যা দেই, তাহলে আমরা কাউটস্কিপন্থীদের মতো সেই একই নির্বোধ স্তরে নেমে যাব”(জাতীয় সমস্যায় সমালোচনামূলক মন্তব্য,জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার)। এবার লেনিন এই তথাকথিত মাকর্সবাদীদের (কার্যত: রাষ্ট্রবাদীদের) বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত টেনেছেন এভাবে- “জাতি ও ভাষাসমূহের সমানাধিকার যে স্বীকার করে না এবং তার স্বপক্ষে দাঁড়ায় না, সর্বপ্রকার জাতীয় নিপীড়ন ও অসাম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে না, সে মাকর্সবাদী নয়, এমন কি গণতন্ত্রীও নয়। ” এ প্রসঙ্গে আরো পরিষ্কার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তাহারে। মাকর্স-এঙ্গেলস বলছেন- “ব্যক্তির উপর ব্যক্তির শোষণ যে অনুপাতে শেষ করা হয়, এক জাতির উপর অন্য জাতির শোষণও সেই অনুপাতে শেষ করা হবে।

জাতির ভিতর বিভিন্ন শ্রেণীর দ্বন্দ্ব যে অনুপাতে লুপ্ত হবে, সেই অনুপাতে এক জাতির প্রতি অন্য জাতির শত্রুতাও শেষ হবে”(কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তাহার, পিকিং, ১৯৬৫, পৃষ্ঠা ৫৫) পাহাড়ে যে বাঙালি জাতিস্বত্তা কর্তৃক পাহাড়ি জাতিস্বত্তা নিপীড়িত-নির্যাতিত হচ্ছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন সমতলের সাধারণ মানুষকে যারা বুদ্ধি-চেতনা দিয়ে শাণিত করেন সেই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকারীরা পাহাড়িদের ন্যায্য দাবীকে পাশ কাটানো, খন্ডন করা এমন কি তীব্র বাক্যবাণে প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন ইস্যুকে জোড়াতালি দিয়ে একটি নির্ঘন্ট বানিয়ে অনুসিদ্ধান্তে উপনীত হতে চাইছেন। সেই সিদ্ধান্ত টানার সময় তারা এই রাষ্ট্রের অখন্ডতাও হুমকির মুখে এমনটিও প্রচার করছেন। প্রচারের প্রধান বিষয় (১)কলোনি লর্ড আ্যববুরি ও তাঁর বাংলাদেশী "সুশীল দোসর" চাকরবাকর এবং তাদের সংগঠন "সিএইচটি কমিশন"। (২) ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ কর্তৃক পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করে করদ রাজ্য বানানো।

(৩) সেনাবাহিনী প্রত্যাহার হলেই পাড়াড়িরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। (৪) পাহাড়িরাও বাঙালিদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে। (৫) বাংলাদেশের ভূখন্ডকে কিছুতেই আলাদা হতে দেওয়া হবেনা। এই প্রচারের স্বপক্ষে আছে আওয়ামী লীগের একাংশ, কুখ্যাত লংদু হত্যাকান্ড চালানো ফ্যাসিস্ট জিয়ার বিএনপি, স্বৈরাচারী এরশাদের দল, কুখ্যাত জামাত এবং অপরাপর ইসলাম পছন্দ দল। গিয়াস কামাল চৌধুরীর সম্পাদনায় বিএনপি’র ‘রাজদরবারের নবরত্ন’ এমাজ উদ্দীন আহমদ, ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন, এবনে গোলাম সামাদ, মুনশী আব্দুল মান্নান প্রমূখরা ‘আহা পর্বত আহা চট্টগ্রাম’ নামে ২৮৮ পৃষ্ঠার একখানা ‘ইশতেহার’ সম্পাদনা করে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন।

তারা সেনাবাহিনী দিয়ে বল প্রয়োগ করে পাহাড়িদের দমনের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে আসছেন। অপর দিকে নূহ আলম লেনিন এর সম্পাদনায় ডা.এস এ মালেক, আবু সাইয়িদ, ড.হারুন-অর-রশিদ প্রমূখরা ‘জুম পাহাড়ে শান্তির ঝরনাধারা ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি’ প্রণয়ন করে সেই শান্তিচুক্তিকেই পাহাড়ের একমাত্র সমাধান বলছেন(এ বিষয়টি পরের পর্বে আলোচিত হবে)। এই সমস্ত বিষয়গুলি মাথায় রেখেই পাহাড়ের হানাহানির অবসানের চিন্তা করতে হবে। উপরে উল্লেখিত কল্পিত জুজুসমূহের ভয়ে ভীত হতে চাইলে ভীত হওয়া কেউ ঠেকাতে পারবেনা। ‘জেএসএস’ বা ‘ইউপিডিএফ’ই যে সমগ্র পাহাড়ি জাতিস্বত্তার মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টার সেটাও ভ্রান্ত ধারণা।

তারা এইক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমানে প্রস্তুত নয় তাও সত্যি। ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের প্রশ্নে তাদের পরিষ্কার কোন বক্তব্যও নেই। তাতে করে কি চোদ্দটি ছোট-বড় জাতিস্বত্তার মুক্তি আকাঙ্খা ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে? মোটেই তা নয়। গাছের ফলটি পেঁকে উঠলে তা আপনাতেই খসে পড়বে। পাহাড়ে সেনা উপস্থতি যে পাহাড়িদের রক্ষা করার জন্য নয় সেটি বুঝতে পাহাড়িদের খুব বেশি জ্ঞানী হবার দরকার করেনা।

শেখ হাসিনা যেভাবেই বুঝুন শান্তিচুক্তি অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে তার সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সেই গাছটিতে পাকতে থাকা ফল যেন ধুয়ো দিয়ে পাকানো না হয়। সেনা উপস্থিতি মানেই ফলটিকে পাকতে উদ্বুদ্ধ করা। এখন যারা বলছেন-সেনা প্রত্যাহার মানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া! তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৯৬’র নির্বাচনের আগে মাতম তুলেছিলেন-আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে আজানের বদলে উলুধ্বনি শোনা যাবে, ফেনী পর্যন্ত ভারত দখল করে নেবে! এখনো সেই ভাঙ্গা রেকর্ড ঘসে ঘসে বাজানো হচ্ছে। এদের সাথে জায়ানবাদী ইজরাইলীদের কোন তফাৎ নেই। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পুলিশী রাষ্ট্র ইজরাইলী ইহুদীবাদীরা যেমন যুক্তি দেয়, তারাই ফিলিস্তিনের আদি নাগরিক, লক্ষ লক্ষ বছর আগে ইহুদীরাই এখানে ছিল।

বাংলাদেশী মুসলমান সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদীদের ‘শত শত বছর আগে বাঙালিরাই পাহাড়ে সেখানে ছিল’ কথাটি কি অদ্ভুতভাবে মিলে যায় ইজরায়েলী ইহুদীদের সাথে! ভিয়েতনামেও এই একই ঘৃণ্য কাজ করেছিল আমেরিকানরা। সেখানে সামরিক অভিযান চালানোর সময় যেমন ক্লাস্টার ভিলেজ বানানো হয়েছিল, তেমনি এখানে বানানো হয়েছে গুচ্ছগ্রাম। উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় যেখানে পুণর্বাসন দেয়া হয়েছে, সেখানে খুঁটি গেঁড়ে চিহ্নিত করেই এর আশেপাশে মিলিটারী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। তারপর পুণর্বাসন শিবির খোলা হয়েছে। এইভাবে দেশের এক দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর এক অধিকারবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে পরিস্থিতিকে দিনে দিনে জটিল থেকে জটিলতর করা হয়েছে ।

সমতল ভূমির ভূমিহীনেরা জানেনা শাসকদের উদ্দেশ্য কী ? জমি আর টাকার প্রলোভনই তাদের কাছে মূল বিষয়। তারা দুমুঠো খেতে পেয়ে বড় মাছ শিকারের ছোট মাছ হয়ে বড়শিতে গেঁথে ঝুলছে। চূড়ান্ত বিচারে বাংলাদেশের বড় বুর্জোয়া দলসমূহ (ঠিক এই মুহূর্তে বিএনপি,জামাত, জাতীয় পার্টি, বুর্জোয়া লেজুড় বাম), সামরিক-বেসামরিক আমলা সহ পুরো শাসক সামন্ত শ্রেণীই পাহাড়িদের শত্রু, পাহাড়ি জনগণ এটা ভালভাবেই বোঝেন। একই সাথে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ সমূহের সাধারণ শত্রু ভারত তো আছেই ওৎ পেতে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠা, পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায় কিভাবে হবে সেটা সেখানকার অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব, তার বিকাশ, দ্বন্দ্বের গতিমুখ নির্ধারণ আর ইতিহাসই নির্ণয় করে দেবে।

[এই পোস্টটি কাউকে আক্রমনের উদ্দেশ্যে নয়। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের গায়ে যেন পাকিস্তানী উপনিবেশবাদীদের কালিমা না লাগে, নিজের সেনাবাহিনীর হাত যেন নিজেরই জনগণের রক্তে রঞ্জিত না হয় সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জাতীয়তাবাদের ভেতরে থেকেও কিভাবে আন্তর্জাতিকতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা যেতে পারে তা-ই দেখানোর চেষ্টা। আর যেহেতু নিপীড়িত জাতিস্বত্তার মুক্তি, ক্ষুদ্র জাতিস্বত্তার টিকে থাকার বিষয়গুলি নিয়ে মাকর্সবাদ-লেনিনবাদের চেয়েও ভাল কোন তত্ত্ব এখন পর্যন্ত আমাদের সামনে নেই বলে মাকর্সবাদের ব্যাখ্যা ব্যবহৃত হয়েছে]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।